
বাংলাদেশ ক্রিকেট
খেলার সময় স্টেডিয়ামপাড়ায় ব্যবসার হালচাল
তাছওয়ার নাফি , এখন টিভি
০২ মার্চ ২০২৩, ১৫:০২
মিরপুরের স্টেডিয়াম পাড়া। খেলা চলার সময় বাড়ানো হয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বন্ধ করে দেয়া হয় গাড়ি চলাচল, সীমিত হয় মানুষের আনাগোনা। এসময়টায় কেমন চলে এখানকার ব্যবসায়ীদের বেচাকেনা?
মোহাম্মদ সাখাওয়াত, ফুল টাইম নরসুন্দর, পার্ট টাইম মানুষের আমনতরক্ষীতা। মিরপুর স্টেডিয়ামের উল্টোদিকে বেশ পুরনো এই সেলুন ব্যবসায়ী খেলা চলাকালীন সময়ে মানুষের আমানত সংগ্রহ করেন।
যেকোন আন্তর্জাতিক সিরিজে স্টেডিয়ামের সামনের রাস্তা গাড়ি চলাচলের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়। তাই লোকজনের আনাগোনাও থাকে হাতে গোনা। আর তাই এই সময়টাকে কাজে লাগিয়ে এমন ব্যবসার ধারণা আসে মোহাম্মদ সাখাওয়াতের। দূর দূরান্ত থেকে খেলা দেখতে আসা দর্শকদের ব্যাগ, পাওয়ার ব্যাংকসহ নানা প্রয়োজনীয় জিনিস সংরক্ষিত রেখে কামিয়ে নেন দিনে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা।
অভিনব এই ব্যবসা সম্পর্কে সাখাওয়াত বলেন, 'খেলা ছাড়া আমারা হাজার, ১২'শ কিংবা ১৫'শ টাকা আয় করতাম,খেলার সময় ৫'শ টাকারও কাজ হয় না। তবে এই সময়ে ব্যাগ রেখে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা আয় হয়, সর্বনিম্ন ১ হাজার থেকে ১৫'শ টাকা আয় হয়।'
তবে সবাই তো আর সাখাওয়াতের মতো রাতারাতি ব্যবসা বদলে ফেলতে পারেন না। যারা চালিয়ে যেতে চান নিজেদের ব্যবসা তাদের কপালে পড়ে চিন্তার ভাঁজ। খাবার, ওষুধসহ নানা পণ্যের ব্যবসায়ীদের হিসেবের খাতার বেড়ে যায় ক্ষতির পরিমাণ।
খাবার হোটেলের এক কর্মচারী বলেন, ' দেখতেই পাচ্ছেন কি অবস্থা আমাদের। আমাদের দোকানের দিকে লোকজনের আনাগোনা নেই তেমন। লাঞ্চ টাইমে কিছুটা বেচা বিক্রি হলেও সকাল থেকে যা রান্না করা আছে তেমনই রয়ে গেছে প্রায়।'
অন্যদিকে একটি ফার্মেসিতে কথা বললে তিনি বলেন, 'খেলা থাকলে বিভিন্ন রাস্তা বন্ধ থাকে, যার কারণে ডাক্তার দেখিয়ে প্রেসক্রিপশন নিয়ে আমাদের কাছে আসতেও পারে না। যার কারণে আমাদের ব্যবসায় কিছুটা মন্দা দেখা দেয়।'
মুদ্রার উল্টোপিঠে রয়েছে সাফল্যের গল্প। খেলাকে ঘিরে ক্রীড়া সামগ্রী দোকানীদের বেচাকেনা হয়ে উঠে চাঙা।
ক্রীড়া সামগ্রী দোকানী বলেন, 'পছন্দ মতো সবাই ক্রীড়া সামগ্রী কিনে থাকেন। বিশেষ করে জার্সির চাহিদা আকাশচুম্বী'।
বয়সের ভাড়ে নুয়ে পড়া বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আব্দুর রবেরও বেড়ে যায় বেচা বিক্রি করার ইচ্ছা৷ জানান এই পতাকার জন্যই একদিন লড়েছেন পাকিস্তানের সাথে আর আজ লড়ছেন বেচে থাকতে। অন্যান্য পতাকা ব্যবসায়ীরও একি অবস্থা।
আব্দুর রব বলেন, 'খেলা হলেই যাই। নতুবা যাই না। লোকজন এসে বাংলাদেশের পতাকা কিনে খেলা দেখতে যায়। দিনে ২হাজার, ৩ হাজার ৫ হাজার টাকার মতোঅ আয় হয় আবার ১ হাজার টাকাও আয় হয়।'
স্টেডিয়াম লাগোয়া ফার্নিচারের দোকানদাররা সবচেয়ে বিপাকে। খেলা চলাকালীন প্রায় অচলই হয়ে পড়ে ব্যবসা বাণিজ্য। বন্ধ থাকে মালামাল পরিবহনের কাজও।
ফার্ণিচার ব্যবসায়ী কিছুটা আক্ষেপের সুরে বলেন,'যদি দুই একটা বিক্রি হয় সেগুলোও হাতে করে টেনে নিয়ে যেতে হয়। আর এই সময় তো নতুন করে কোন পণ্য তৈরি করা সম্ভব হয় না।'
স্টেডিয়াম পাড়ায় খেলা আর ব্যবসা চলে হাত ধরাধরি করে। খেলার জন্য কোনো কোনো ব্যবসায়ী সাময়িক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তারা চায় জিতুক বাংলাদেশ। জিতে যাক এদেশের ক্রিকেট।
ডব্লিউএইচ