
দেশের ‘সবচেয়ে সুন্দর’ শহরে বাড়ছে বহুতল ভবন (বছরে ২,৫০০ কোটি টাকার আবাসন ব্যবসা)
রাকিবুল হাসান , এখন টিভি
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৩:৩৫
৯৬.৭২ বর্গ কিলোমিটারের রাজশাহী শহর। যেখানে ক্রমশই বাড়ছে দালানকোঠার সংখ্যা। পর্যাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আর আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকায় এই শহরে আবাসস্থল তৈরিতে আগ্রহ বাড়ছে প্রবাসী ও আশপাশের জেলার বাসিন্দাদের। বছর বছর বাড়ছে বহুতল ভবনের সংখ্যা। বছরে এ খাত থেকে আয় হচ্ছে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা।
পরিচ্ছন্ন-পরিপাটি শহরের ১৩৭টি মহল্লা থেকে কিংবা ঘর ছেড়ে বের হলেই দেখা মিলবে প্রশস্ত সড়ক। নেই কল-কারখানার ধোঁয়া, নদী বা লেক দূষিত হয়নি বর্জ্যে। নগরজুড়ে সবুজ আর বাহারি ফুলে সুবাসিত বায়ু দিয়েছে পরিবেশবান্ধব শহরের স্বীকৃতি। রেল, সড়ক বা আকাশপথেও বাড়ছে যোগাযোগ। শতবছরের পরিকল্পনায় নির্মাণ হচ্ছে আধুনিক সব নাগরিক সুযোগ সুবিধা।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী মো. নূর ইসলাম বলেন, ‘ঢাকার থেকে রাজশাহীতে থাকা অনেক সহজলভ্য। এখানের পরিবেশ অনেক সুন্দর।’
নগর পরিবহনসহ জীবন-জীবিকায় সহনীয় ব্যয়ের কারণে বাড়ছে নাগরিকের সংখ্যাও। পাশের জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের স্বাস্থ্যকর্মকর্তা নাফিসা জামান এসেছেন পছন্দের ফ্ল্যাট দেখতে। নওগাঁর বেসরকারি হাসপাতালের সার্জন ডা. হাফিজুর রহমানও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বিনিয়োগ করেছেন নবনির্মিত একটি ভবনে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোসাম্মৎ নাফিসা জামান বলেন, ‘আমার অনেকদিন থেকেই ইচ্ছে রাজশাহী শহরে একটা ফ্লাট থাকবে। আর এই শহরটা নিরাপত্তার জন্যও অনেক ভালো।
ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জন মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘শিক্ষানগরী হিসেবে রাজশাহীকেই আমরা বাছাই করেছি বসবাসের জন্য।’
আবার কেউ কেউ প্রবাস থেকে রাজশাহীতে বসবাসের জন্য সমবায় ভিত্তিতে বহুতল ভবন নির্মাণে করেছেন বিনিয়োগ।
অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘একা একটা জমি কিনে বাড়ি করা অনেকেরই সামর্থ থাকে না। তাই আমরা কয়েকজন মিলে জমি কিনে বাড়ি করার উদ্যোগ নিয়েছি।’
বহুতল ভবন নির্মাণ করছে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষেরে তালিকাভুক্ত ২৬টি ভবন নির্মাণ প্রতিষ্ঠান। যার অধিকাংশ ভবন নির্মাণ হচ্ছে চন্দ্রিমা, মহানন্দা, তেরখাদিয়া, মধ্যশহরসহ নগরের বিভিন্ন স্থানে। আমদানি সংকটে গৃহনির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়লেও নিজেদের কাজ অব্যাহত রয়েছে।
প্রতিটি ফ্ল্যাটের মূল্য ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা বর্গফুট হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। সামনের বছরগুলোয় এ ব্যবসার পরিধি আরও বাড়বে বলছেন ব্যবসায়ীরা।
রিথিন এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. তৌরিদ আল মাসুদ বলেন, ‘আমাদের প্লানগুলো যদি একটু কম সময়ের মধ্যে পাশ হয় তাহলে আমাদের জন্য অনেক ভালো হয়। এতে প্রজেক্ট কম সময়ে শেষ করে হস্তান্তর করা যায়।’
ভবননির্মাণ প্রতিষ্ঠানের সংগঠন-রেডা বলছে, নির্মাণ তদারকি, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও সিটি করপোরেশনের সাথে সমন্বয় থাকায় সহজেই গ্রাহকের ফ্ল্যাট হস্তান্তর করছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
রেডা’র সভাপতি তৌফিকুর রহমান লাভলু বলেন, ‘এই রেডা প্রতিষ্ঠার পরে মানুষের একটা আস্থা তৈরি হয়েছে। কারণ আমরা সততার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি।’
রাজশাহীতে বছরে অন্তত আড়াই হাজার কোটি টাকার আবাসন ব্যবসা করছে ভবন নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলো।
গেল ১৫ বছরে ফিরে তাকালে রাজশাহী নগরীর সিএন্ডবি মোড়ের দশতলা ভবনটিই ছিলো নগরের একমাত্র বহুতল ভবন। তবে গেল ১৪ বছরে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজের পরে এই নগরে এখন দশ তলা থেকে একুশ তলা পর্যন্ত বহুতল ভবনের সংখ্যা শতাধিক।
আকন