
কয়লা ঘাটতি ও লিকেজ সমস্যায় রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র
ইব্রাহিম পাঠান , এখন টিভি
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:৫১
রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হওয়ার শুরু থেকেই রয়েছে কয়লা আমদানির চ্যালেঞ্জ। অন্যদিকে বয়লারের টিউব লিক হওয়ার পর নতুন লিকেজের শঙ্কায় কেন্দ্রটির ১ নম্বর ইউনিট দীর্ঘ সময় পূর্ণ সক্ষমতায় চালানো যাচ্ছেনা। কেন্দ্রটির পরিচালক এটিকে স্বাভাবিক মনে করলেও বিশেষজ্ঞরা পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক মন্তব্য করে ওয়ারেন্টি থাকা অবস্থায় সমস্যা সমাধানের তাগিদ দিয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বয়লারে টিউব লিকেজ হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। তবে এটি মেরামত যোগ্য। টিউব দূর্বল হলে পুরো সক্ষমতায় দীর্ঘসময় ধরে বিদ্যুৎ উৎপাদন ধরে রাখাও কঠিন হয়ে পড়ে।
বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বিনিয়োগে গড়ে ওঠা রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির ১ নম্বর ইউনিট এখন পরীক্ষামূলক উৎপাদনে। শুরুতে কয়লা সংকট থাকলেও এখন এর সাথে যোগ হয়েছে বয়লারের টিউব লিকেজেরে সমস্যা। যদিও রামপালে বাংলাদেশে ভারত মৈত্রী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক সুভাস চন্দ্র পাণ্ডে নতুন কেন্দ্রটিতে এই যান্ত্রিক সমস্যাকে স্বাভাবিক ঘটনা বলেই মনে করেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা দুটি বয়লারেই পরিদর্শন করেছি। পরিবেশের কারণে অনেক সময় উপকরণ রাখতে সমস্যা হয়, ভারতে যেখানে একই ধরণের প্রকল্প এমন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। তবে আমরা এখন পর্যন্ত কোন সমস্যার মুখোমুখী হইনি। নির্ভরযোগ্যতা পরীক্ষার অংশ হিসেবে আমরা একটানা এটাকে ২০ দিন চালিয়েছি।’
ভারতে এক্সিম ব্যাংকের ঋণ সহযোগিতায় নির্মাণ করা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভারত হেভি ইলেক্ট্রিক কোম্পানি লিমিটেড। ৬৬০ মেগাওয়াট করে দুটি ইউনিটের ১৩২০ মেগাওয়াটের এই কেন্দ্রটিকে ধরা হয় বেইজ লোড বিদ্যুৎ কেন্দ্র, যেখান থেকে দীর্ঘ সময় ধরে পুরো সক্ষমতার বিদ্যুৎ মিলবে।
পিডিবির দৈনিক উৎপাদন তথ্য বলছে, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটের যাচাই করা সক্ষমতা ধরা হয়েছে ৬১৭ মেগাওয়াট। ১৬ই ফেব্রুয়ারি পুনরায় উৎপাদনে আসার পরপর ৫ দিন এটি পিক আওয়ারে সর্বোচ্চ উৎপাদন করেছে, ৪১৭ মেগাওয়াট, সর্বনিম্ন ৩৮৭। একইদিন একবারও পুর্ণ সক্ষমতায় চলেনি বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। আপতত কয়লা সংকট কাটিয়ে উৎপাদনে ফিরলেও উৎপাদন ঘাটতির কারণ হিসেবে এখনো কয়লা সংকটকেই দায়ী করছে পিডিবি।
তবে বিশেষজ্ঞদরে আশঙ্কা, তাই পুর্ণ সক্ষমতা ভালমত যাচাই না করেই চুড়ান্ত ছাড়পত্র দিয়ে দিলে ক্ষতির আশঙ্কা আছে। তখন ক্যাপাসিটি কম থাকা সত্বেও দিতে হতে পারে পুরো চার্জ।
এবিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম. তামিম বলেন, ‘একটা সমস্যা ইতোমধ্যে দেখা দিয়েছে। তার মানে এর মধ্যে আরও কোন সমস্যা অবশ্যই রয়েছে। এই সমস্যাকে অবশ্যই সমাধান করতে হবে।’
বিদ্যুৎ বিভাগের নীতি গবেষণা বিভাগের প্রধান বলছেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ত্রুটির বিষয়টি তারা আরও খতিয়ে দেখে তারপর বাণিজ্যিকে উৎপাদনের চূড়ান্ত অনুমতি দেবেন।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, ‘সিওডি এগুলো ভালো করে দেখবেন, তারপরে সেগুলো চেকলিষ্ট করা হবে।’
অভিযোগ উঠেছে, জার্মান পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ফিশনার বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির নির্মাণ তদারকি প্রতিষ্ঠান। যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়ার পর এই প্রতিষ্ঠানকেই অধিকতর তদন্তের জন্য নিয়োগ দেয়।
আকন