Ekhon TV :: এখন টিভি

ধস নেমেছে সৈয়দপুরের শুঁটকি ব্যবসায়

বৃষ্টি কম হওয়ায় চলনবিলে পুঁটি মাছের শুঁটকি সংকট

ধস নেমেছে সৈয়দপুরের শুঁটকি ব্যবসায়

ডিসেম্বর পর্যন্ত মাত্র ১২ ট্রাক শুঁটকি রপ্তানি হয়েছে ভারতে

১১ জানুয়ারি ২০২৩, ১১:৪১

সৈয়দপুর শুঁটকি বন্দর থেকে প্রতি শীত মৌসুমে অন্তত ১২০ কোটি টাকার পুঁটি মাছের শুঁটকি রপ্তানি হয় ভারতে। কিন্তু এই মৌসুমে বৃষ্টি কম হওয়ায় চলনবিলে তেমন একটা দেখা মেলেনি পুঁটি মাছের। এ কারণে পুঁটি মাছের শুঁটকিও পাওয়া গেছে কম। ১৫০ ট্রাকের জায়গায় ডিসেম্বর পর্যন্ত মাত্র ১২ ট্রাক শুঁটকি রপ্তানি হয়েছে ভারতে। যার ফলে কোটি টাকা লোকসানের মুখে সৈয়দুপরের ব্যবসায়ীরা। এবছর শ্রমিকের খরচ ওঠানো নিয়েই শঙ্কায় আছেন তারা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে সৈয়দপুরের শুঁটকি আড়তে এসেছেন মেসার্স হাজী বাবুলের ম্যানেজার মো. রাসেল। উদ্দেশ্য পুঁটি মাছের শুঁটকি কিনে রপ্তানি করবেন ভারতে। কিন্তু পরিমানমতো শুঁটকি পাননি কারণ এবছর বৃষ্টি হয়েছে কম। যে কারণে আকাল দেখা দিয়েছে পুঁটি মাছের।

মো. রাসেল বলেন, ‘প্রতি বছর আমি ৮ থেকে ১০ গাড়ি মাছ কিনলেও এবছর যে অবস্থা তাতে ২ থেকে ৩ গাড়িও কিনতে পারবো না।’

সৈয়দপুর উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় শুটকি আড়ত। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে শুঁটকি আসে এখানে। ভারত এবং মায়ানমার থেকেও আসে শুঁটকি। দেশি পুঁটি মাছের শুঁটকি আসে মূলত চলনবিল এলাকা থেকে। বিলেই এবার মাছ কম, তাই শুঁটকিও এসেছে কম।

সৈয়দপুর মুন্সি মার্কেটের আড়ৎদার মিল্টন হোসেন বলেন, ‘বিলে ছোট জাল দিয়ে পুটি মাছ ধরার কারণে ছোট ও মা পুটি মাছ মারা পড়েছে, তাই বর্তমানে পুটি মাছের এত সংকট দেখা দিয়েছে।’

শীত মৌসুমে ভারতের ত্রিপুরা, মিজোরাম, মনিপুরসহ পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে রপ্তানি হয় পুঁটি মাছের শুঁটকি। ব্যবসায়ীরা জানান, পাহাড়ি অঞ্চলে এই সময় মশাবাহিত এক ধরণের রোগ দেখা দেয়, যা পুটি মাছের শুঁটকি খেলে সেরে যায়। তাই সৈয়দপুর, সুনামগঞ্জ, ফরিদুপর, কুমিল্লাসহ বেশ কয়েকটি আড়ত থেকে প্রচুর পুঁটির শুঁটকি রপ্তানি হয় ভারতে। তবে চলনবিল থেকে সৈয়দপুরে আসা পুঁটি মাছের শুঁটকির চাহিদা বেশি।

ব্যবসায়ীদের হিসেবে, সৈয়দপুর থেকে প্রতি বছর অন্তত ১৫০ ট্রাক শুটকি রপ্তানি হয়। একেকটি ট্রাকে গড়ে ১৬ টন শুঁটকি পাঠানো হয়। সেই হিসাবে অন্তত দুই হাজার ৪০০ টন শুঁটকি রপ্তানি হয় সৈয়দপুর থেকে। আকার ভেদে শুঁটকির দাম হয় একেক রকম। গড়ে ৫০০ টাকা কেজিতে এক টনের দাম ৫ লাখ টাকা। একেকটি ট্রাকে ৮০ লাখ এবং সব মিলিয়ে অন্তত ১২০ কোটি টাকার শুঁটকি রপ্তানি হয়। অথচ এই মৌসুমে ডিসেম্বর পর্যন্ত রপ্তানি হয়েছে মাত্র ১০-১২ ট্রাক। এ কারণে বড় অংকের লোকসানের মুখে এখানকার ব্যবসায়ীরা।

সৈয়দপুরের সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক শাহাবুদ্দিন মিয়া। হাট বা অন্য যে দিন, ব্যস্ততার শেষ নেই তার। কিন্তু এবছর রপ্তানি করতে না পারায় ব্যাংক ঋণ কিভাবে শোধ করবেন তা নিয়ে আছেন চিন্তায়।

সৈয়দপুর শুঁটকি রপ্তানিকারক শাহাবুদ্দিন মিয়া বলেন, ‘আমাদের ক্রেতারা পণ্য পাচ্ছে না। অন্যদিকে ব্যাংক ঋণ নিয়ে চিন্তায় আছি কিভাবে পরিশোধ করবো।’

বর্তমানে ১৩টি আড়ত ও ৬৪টি খুচরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে সৈয়দপুরের শুঁটকি বন্দরে। এখানে কাজ করেন হাজার খানেক শ্রমিক। ৫০-৬০ প্রকারের মাছের শুঁটকি পাওয়া যায় এখানে। ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, এবারে খরচ ওঠানোই কঠিন হবে।

সৈয়দপুর শুকনা মাছ আড়ত সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি হাজী মো. আবুল বাশার বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের পরিস্থিতি খুবই খারাপ। ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই আমাদের এখন কঠিন হয়ে পড়েছে।’

ব্যবসায়ীরা বলছেন, মে-জুন মাসে শুঁটকির চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। কারণ এই সময় তাজা মাছের সংকট তৈরী হয়। পাশাপাশি ধান কাটার শ্রমিকদের প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে শুঁটকি রান্না হয় গৃহস্থ বাড়িতে। ব্যবসায়ীদের হিসাবমতে, সৈয়দপুরের এই বন্দরে মাসে কমপক্ষে ১০ কোটি টাকার শুঁটকি কেনাবেচা হয়।

সামুদ্রিক এবং অন্যান্য দেশি মাছের শুটকির সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও এবছর প্রকৃতির বিরুপ খেয়ালের কারণে পুটি মাছের শুটকির সরবরাহ প্রায় নেই বললেই চলে। যার ফলে শতকোটি টাকার রপ্তানী বাণিজ্যে এক প্রকার ধ্বস নেমেছে বলা যায়। ব্যবসায়ীরা প্রকৃতির সেই খেয়াল মেনেও নিয়েছেন। তবে, জেলেদের দাবি, মাছ ধরার সময়টা যদি আরেকটু বৃদ্ধি করা যেত, তাহলে এই শুটকির ব্যবসা আরেকটু ভাল হতে পারত।

আকন

Advertisement
Advertisement
Advertisement