
খ্যাতি বিশ্বময়
বিশ্ববিখ্যাত হাজারি গুড়ের কোটি টাকার বাজার
আসাদ জামান , এখন টিভি
০৯ জানুয়ারি ২০২৩, ১৪:৩৪
পড়ন্ত বিকেলে শুরু হয় খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের কর্মযজ্ঞ। গাছির ধারালো দায়ের আঁচড়ে যার শুরু, তার জন্য অপেক্ষা করতে হয় ভোর পর্যন্ত।
শীতের শুরু থেকে মানিকগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় মৌসুম জুড়ে চলে রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরির কাজ। কুয়াশা মোড়ানো প্রতিটি সকাল গাছিদের কাছে হাজির হয় নতুন স্বপ্ন নিয়ে। গাছ থেকে নামিয়ে আনা হয় হাড়ি হাড়ি রস।
তারপর উনুনে উঠিয়ে দীর্ঘ সময় চলে জ্বাল। ধীরে ধীরে ঘন হয়ে আসে রস। বিশেষ কিছু প্রক্রিয়া সেরে একপর্যায়ে তরল গুড় ঢালা হয় নির্দিষ্ট পাত্রে। পরে জমাট বেঁধে তৈরি হয় ঐতিহ্যবাহী হাজারি গুড়।
এক গাছি বলেন, বিকেলেই আমাদের কাজ শুরু হয়। এরপর ভোর চারটার দিকে আমরা রস আহরন করি। সেটা ছেঁকে আমরা পাত্রে ঢালি। এরপর হাজারি গুড় তৈরি করি।
এক কেজি হাজারি গুড় তৈরিতে দরকার হয় প্রায় ১৪ কেজি রস। এ কারণে দামও খানিকটা বেশি। বর্তমানে প্রতি কেজি গুড় বিক্রি হচ্ছে ১৮শ' থেকে ২ হাজার টাকায়।
গুড় তৈরির একজন কারিগর এখন টিভিকে বলেন, 'এটা শুধু মানিকগঞ্জের ঐতিহ্য না, এটা সারা বাংলাদেশের ঐতিহ্য।'
কালের আবর্তনে দিন দিন কমছে খেজুর গাছের সংখ্যা। সেই সাথে দেখা দিয়েছে জ্বালানি সংকট। এ অবস্থায় হাজারি গুড়ের ঐতিহ্য ধরে রাখতে খেজুর গাছ রোপণ জরুরি বলে জানালেন গাছিরা।
একজন গাছি বলেন, 'আগের তুলনায় গাছে এখন অনেক কম। নতুন গাছ কেউ লাগাচ্ছে না।'
সরকার যদি আরও গাছের ব্যবস্থা করতো, তাহলে আমরা সেইগুলো থেকে রস আরোহন করে চাহিদা মেটাতে পারতাম।
ঐতিহ্যবাহী হাজারি গুড়ের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে নানা ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে গুড়ের মান ধরে রাখতে ভেজাল গুড় উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে বলেও জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ। তিনি বলেন, 'যেহেতু খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে তাই আমরা একটা পর্যটন এরিয়া করতে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে কাজও শুরু হয়েছে। আমাদের কাজ এখানে পর্যাপ্ত পরিমাণ গাছ রোপন করা।'
প্রায় দুইশ' বছর আগে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকা এলাকার মোহাম্মদ হাজারি নামে এক ব্যক্তির হাতে এই গুড় তৈরির শুরু। তার নাম অনুসারেই এই গুড়ের পরিচিতি পায় হাজারি গুড় হিসেবে।
উপজেলার ঝিটকা ও গোপীনাথপুর গ্রামের ২০ থেকে ২৫টি পরিবার এই গুড় তৈরির সাথে জড়িত। চলতি মৌসুমে হাজারি গুড়ের বাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা তাদের।
আরএন