
কেন আটকে আছে ৮ হাজার নন-ক্যাডার নিয়োগ?
নিয়োগের চাহিদাপত্র দিচ্ছে বিভিন্ন কমিশন, মন্ত্রণালয়
জাহিদ হাসান , এখন টিভি
০৮ জানুয়ারি ২০২৩, ১৮:০৪
নিয়মিত চাহিদাপত্র পেলেও ২০১০ সালের নন-ক্যাডার নিয়োগ বিধি সংশোধন না করায় কোন নিয়োগ দিচ্ছে না পাবলিক সার্ভিস কমিশন। আর ১০ মাস ধরে ৪০তম বিসিএসের আট হাজার নন-ক্যাডার নিয়োগ আটকে আছে।
পিএসসি বলছে, শিগগিরই নিয়োগে সুপারিশ করা হবে, তবে এ জন্য তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। এদিকে সমস্যার দ্রুত সমাধান চায় নন ক্যাডারে উত্তীর্ণ প্রার্থীরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স মাস্টার্স শেষ করে একটি পছন্দের চাকরির জন্য লড়াই করছেন বহু শিক্ষার্থীরা। একটি বিসিএস শেষ করে আরেকটি বিসিএসের জন্য অপেক্ষা, দিচ্ছেন একের পর এক চাকরির পরীক্ষা। তবুও সোনার হরিণ নামক পছন্দের চাকরির তিলক লাগে না। তাই তাদের মধ্যে কিছুটা হতাশা।
তারা বলেন, ‘এই যে দীর্ঘ প্রক্রিয়া তাতে কিন্তু বেকারত্ব বাড়াতে ভূমিকা রাখছে। এতে যারা নিয়োগের জন্য চেষ্টা করছে তাদের আরও হতাশা বাড়ছে।’
নন- ক্যাডারে উত্তীর্ণে হয়েছেন এমন প্রার্থীদের ক্ষোভ পিএসসির দীর্ঘসূত্রিতা নিয়ে। একজন দিয়েছেন চারটি বিসিএস। তিনি বললেন, ‘এই যে চারটা বিসিএসে আমি কোয়ালিফাইড হওয়ার পরেও এখনও আমার চাকরির কোন নিশ্চয়তা পাচ্ছি না। তাই সত্যি বলতে আমি এখন ভীষণ ক্লান্ত।’
গেলো বছরের ৩০ মার্চ ৪০তম বিসিএস-এ ১ হাজার ৯৬৩ জনকে বিভিন্ন ক্যাডারে সুপারিশ করে ফলাফল প্রকাশ করা হয়। একই সঙ্গে নন-ক্যাডার পদে আট হাজার প্রার্থীকে রাখা হয়েছে।
কয়েক মাস অপেক্ষার পর নন ক্যাডার নিয়োগ না দেয়ায় আন্দোলনে নামে উত্তীর্ণ প্রার্থীরা। তারা পিএসসির সামনেও অবস্থান নেয়। তাতেও হয়নি সমস্যার সমাধান।
নন ক্যাডার প্রার্থীরা আন্দোলন থেকে সরে আসে। তবে তারা বিভিন্নভাবে পিএসসির দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করছে।
প্রার্থীরা যখন আন্দোলন করছে তখন অক্টোবরের ১৩ তারিখ নির্বাচন কমিশন ৯৪ জন উপজেলা নির্বাচন কর্মকতা নিয়োগ দিতে পিএসসির কাছে অধিযাচন পত্র পাঠিয়েছে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে জরুরি ভিত্তিতে এসব কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়ার আবেদন জানায় ইসি। তিন মাসেও পিএসসি কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
জন প্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ২০২১ সালের প্রকাশিত বেসামরিক কর্মকর্তা ও কর্মচারি পরিসংখ্যান তথ্য বলছে, বর্তমানে দেশে তিন লাখ ৫৮ হাজার শূন্য পদ রয়েছে। এর মধ্যে দ্বিতীয় শ্রেণিতে শূন্যপদ আছে ৪০ হাজার ৫৪১টি। প্রথম শ্রেণিতে কর্মরত আছে ১ লাখ ৯৫ হাজার ৬৭৯ জন। বিপরীতে পদ খালি আছে ৪৩ হাজার ৩৩৬টি। সবচে বেশি পদ খালি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে। শূন্য পদ আছে ৭৪ হাজার ৫৭৪টি। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে শূন্য পদ আছে ৪৪ হাজার ৮২০টি।
এতো পদ শূন্য আর আট হাজার নন ক্যাডাররা নিয়োগ পাচ্ছে না তখন নিয়োগ বন্ধ রেখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় পিএসসি। ৪১, ৪৩, ৪৪, ৪৫ বিসিএস পরীক্ষার প্রক্রিয়াও শেষ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে নন-ক্যাডার নিয়োগ বিধি সংশোধন হলে সব বিসিএস দ্রুত নন-ক্যাডার নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে পিএসসির।
ভুমি মন্ত্রণালয় নভেম্বর মাসে ইউনিয়ন ভূমি উপ সহকারি কর্মকর্তা পদে ১৫৯২টি পদে নিয়োগের চাহিদা দিয়েছে। তাতেও সাড়া নেই পিএসসির। মাঠ পর্যায়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের কাজে স্থবিরতা নেমে এসেছে বলে চাহিদা পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ৮৮৭টি পদ নন-ক্যাডার থেকে দিতে অধিযাচন করেছে। ৩০ আগস্ট মন্ত্রণালয় পিএসসিকে চাহিদাপত্র পাঠিয়েছে। এছাড়া, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের জন্য ১০৬টি পদে শূন্য পদে নিয়োগ দিতে পিএসসিতে আবেদন করা হয়েছে।
জুলাই মাসে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর জুনিয়র রসায়নবিদ পদে ৪০জন, নমুনা বিশ্লেষক ৫২জন নিয়োগ দিতে চাহিদাপত্র দিয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়র অধীনে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক পদে ১৮জনকে নিয়োগ দিতে অধিযাচন পত্র দিয়েছে।
সাবেক শিক্ষা সচিব এন আই খান অবশ্য বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি যুক্তি দিচ্ছেন, নতুন বিধিমালা করে নন ক্যাডার নিয়োগ দিলে চাকরি প্রার্থীরা বেশি লাভবান হবেন।
তিনি বলেন, ‘নন ক্যাডারে যারা বিসিএসে কোয়ালিফাই করে তাদের সবাইকে বিভিন্ন দপ্তরে দিয়ে দেয়া উচিৎ। কারণ তাদের যোগ্যতা ও দক্ষতা অনেক বেশি।’
পিএসসির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলছেন, আগামি বছর অনেকগুলো বিসিএস শেষ করাসহ নন ক্যাডারে বড় ধরণের নিয়োগের কাজ করা হচ্ছে।
এবিষয়ে পিএসসির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আনন্দ কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের ৪০ থেকে ৪৫ তম বিসিএস পর্যন্ত একটা রিকোজিশন দিয়েছে। তার ভিত্তিতেই আমরা কাজ করছি। আমরা খুব শিগগিরই বসে বিধিমালা পাস হলে কাজটা শেষ করবো।’
আকন