Ekhon TV :: এখন টিভি

জীবন যেন ঢুকে পড়েছে প্লাস্টিক সভ্যতায়। প্রতিদিনের যাপনের ঘর থেকে কাজের জায়গা, সর্বত্রই প্লাস্টিকের নির্ভরতা। পানির বোতল, গ্লাস কিংবা কোমল পানীয় ছাড়া একটা দিনও কি ভাবা যায়? রোজকার ব্যবহৃত এর সবকিছুই প্লাস্টিকের। কৃত্রিমতায় ছেঁয়ে যাওয়া জীবনে প্লাস্টিকের রাজত্ব যেন দিন দিন বাড়ছে।

কিন্তু ব্যবহার শেষে এসব প্লাস্টিক কোথায় যায়? অবলীলায় ঠাঁই হয় রাস্তায়, ফুটপাতে কিংবা ড্রেনে। আর প্লাস্টিক দূষণের অভিশাপের শুরুটাও এখানেই।

যাপিত জীবনকে খনিকের জন্য হয়তো সহজ করে তোলে প্লাস্টিক কিংবা পলিথিন। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এর যে ক্ষতিকর প্রভাব তা জেনেও নিরুপায় ভোক্তারা। 

একজন ক্রেতা বলেন, এটা তো এখন একটা চল হয়ে গেছে যে, কিছু কিনলেই পলিথিন ব্যাগ লাগবে। ২০ টাকার পান কিনছি সাথে একটা পলিথিন ব্যাগ দিয়ে দিছে। কিন্তু আমাকে তো কাগজের ঠোঙা দিতে পারতো। 

আরেকজন ব্যক্তি বলেন, এক টাকার কাঁচামরিচ নিলেও মানুষ এখন পলিব্যাগ চায়। 

প্লাস্টিক বর্জ্যের বেশিরভাগই পরিবেশ দূষিত করছে। সৃষ্টি করছে জলাবদ্ধতা। বন্ধ করছে নদী-নালার স্বাভাবিক গতিপথ ও বিষাক্ত করে তুলছে পানি।

বুড়িগঙ্গার তীর ঘেঁষে ইসলামবাগ এলাকা। প্লাস্টিক বর্জ্যে ভরপুর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে থেকে হাজার হাজার টন বর্জ্য জমা হয় এখানে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সেগুলোকে করা হয় পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ। তবে এই কাজে মানা হয় না কোন নিয়ম। নারী-শিশুসহ অনেকই কাজ করেন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে।

প্লাস্টিক বর্জ্য বাছাইয়ে মনোযোগী দুই শিশু শ্রমিক হাসান ও সাইফুল। স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই প্রতিদিন প্রায় ১০-১২ ঘন্টা ঝুঁকিপূর্ণ এই কাজ করে তারা। প্লাস্টিক বর্জ্যের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়েও জানা নেই তাদের। জীবন চাকা সচল রাখতেই হয়তো প্লাস্টিকের সাথে তাদের এই সখ্যতা।

প্লাস্টিক বর্জ্যের শতকরা ১০ ভাগ পুড়িয়ে ধ্বংস করা হলেও বাকি ৯০ শতাংশ পৃথিবীর পরিবেশকে নানাভাবে বিপন্ন করছে। এসব ক্ষতিকর বর্জ্য পরিবেশে ৪০০ থেকে ১ হাজার বছর পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে এবং মাইক্রো ও ন্যানো প্লাস্টিকের কণা ক্ষতিকর পদার্থ নিঃসরণ করে একইসঙ্গে পরিবেশ আর মানবদেহে ভয়ংকর প্রভাব ফেলছে।

প্লাস্টিক দূষণ জীববৈচিত্র্য, অর্থনীতি এবং মানবস্বাস্থ্যকে ফেলছে হুমকির মুখে। বেসরকারি একটি গবেষণা বলছে, দেশে প্রতিদিন ৮ লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয়। যার মধ্যে ৩৬ শতাংশ পুনঃব্যবহারযোগ্য করা হয়। এছাড়া ৩৯ শতাংশ ভূমি ভরাট এবং ২৫ শতাংশ সরাসরি নদী, সমুদ্রকে সরাসারি দূষিত করছে।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ঢাকায় প্রতিদিন প্রায় ৭শ' টন প্লাস্টিক দূষণ হচ্ছে। যা মাথাপিছু ১৮ কেজি আর ঢাকার বাইরে দূষণের হার মাথাপিছু ৯ কেজি।

পরিবেশবাদীরা বলছেন, প্লাস্টিক পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ ব্যবস্থাপনা স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে হতে হবে। পাশাপাশি দূষণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকেও আনতে হবে আর্থিক জরিমানার আওতায়।

চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন খান বলেন, এখানে শুধু পরিবেশ মন্ত্রণালয় নয়, অর্থ মন্ত্রণালয়কেও উদ্যোগ নিতে হবে। এমন আর্থিক জরিমানা দিতে হবে যে- তাদের বার্ষিক টানওভারের ১০ শতাংশ জরিমানা করবে। তখন দেখবেন সবাই সর্তক হয়ে যাবে। কোম্পানিগুলোর দায়িত্ব হলো রিসাইকেল করে ম্যানেজ করা।

গবেষকদের দাবি, দৈনন্দিন জীবনে প্রায় ২০ ধরনের প্লাস্টিক ব্যবহার হয়ে থাকে। তবে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বা পলিথিনই দূষণের অন্যতম কারণ। তাই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পাটজাত পণ্য উৎপাদন এবং ব্যবহার বাড়ানোর পরামর্শ তাদের।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আছিব আহমেদ বলেন, প্রত্যেকটা পলি বা প্লাস্টিক যেটা আমরা প্রডিউস করি, সেখানে আরও কিছু বিষয় যুক্ত করা হয়। এসব এলিমেন্টসগুলো পরিবেশের দূষণ আরও বাড়িয়ে দেয়। 

সরকারিভাবে পলিথিন ব্যাগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের অংশ হিসেবে ২০১৯ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত ৩ হাজার ৬৯২টি মামলা করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা জরিমানা এবং প্রায় ২ হাজার টন পলিথিন জব্দ করা হয়েছে। 

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০২৬ সালের মধ্যে আমরা সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করার পরিকল্পনা নিয়েছি। কোস্টাল এরিয়াতে আমরা একেবারে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছি।

আরএন

Advertisement
Advertisement
Advertisement

এই সপ্তাহের সর্বাধিক পঠিত গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ প্রতিবেদন খবর