
বৈশ্বিক সংকটে খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বারোপ
বাজেটে কৃষিখাতকে গুরুত্ব দেয়ার তাগিদ
ইমতিয়াজ আহমেদ , এখন টিভি
২৯ মে ২০২৩, ২০:০৩
বিশ্বের নানা টানাপড়েনের মধ্যেই আরেকটি বড় বাজেট প্রণয়নের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ। স্বাভাবিক কারণেই সামনের দিনে বেশ গুরুত্ব পাবে খাদ্য নিরাপত্তা। কেমন হবে প্রান্তিক কৃষকের বাজেট? বরাদ্দ বা প্রণোদনা কতটুকুই বা পৌঁছায় তাদের হাতে?
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, খাদ্য নিরাপত্তার বাজেটে কৃষিকে গুরুত্ব দিতে হলে প্রয়োজন ভর্তুকিসহ উন্নত কৃষি বিমা প্রণয়ন।
হাওরবাসীর শঙ্কায় নতুন মাত্রা যোগ করে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট। দুর্মূল্যের বাজারে নতুন করে কাজ করে নতুন কোনো বিপাকে পড়ার ভয়। বাজেটে উৎপাদন প্রক্রিয়ার উপকরণ ব্যয় কতোটা কৃষিবান্ধব হয়- সেই প্রশ্নই ঘুরপাক খায় শস্যশিল্পীদের মনে। বাজেট ভাবনা রেখে বরাবরই বাজেট পরবর্তী ফলাফল হয় তাদের মাথাব্যথার কারণ। বিশেষ করে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটে সেই শঙ্কা আরও যৌক্তিক হয়ে দাঁড়ায়। শঙ্কা বা ভয়টা শুধু কৃষকের নয়- বরং বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর খাদ্যনিরাপত্তাও এর সঙ্গে ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত।
এক কৃষক বলেন, ‘আমাদের চাওয়া পাওয়া হচ্ছে যাতে চাল, তেল, ডাল যেন কম দামে পেতে পারি।’
আরেক স্থানীয় বলেন, ‘কৃষকদের দিকে খেয়াল দিতে হবে, সারের দাম কমাতে হবে। কৃষিতে তাদের আগ্রহ বাড়াতে হবে, তবেই আমরা শহরে বসে কম দামে পণ্য কিনে খেতে পারবো।’
দুধারে সবুজ বৃক্ষের সারি। মাঝ দিয়ে বয়ে চলা ছায়া সুনিবিড় পথ। প্রত্যন্ত অঞ্চলের এই পথ ধরে খানিকটা সামনে গেলেই হাওরবেষ্টিত নেত্রকোণার মদন উপজেলা। পথের দুধারে এখনও দৃশ্যত চোখে পড়ে আবহমান গ্রামবাংলার চিরায়ত চিত্র। খাজান্তি গ্রামের পাশেই ধলিউরি হাওর। গ্রীষ্মের খরতাপে পুড়ছে কেটে নেয়া বোরো ভূমির বিস্তীর্ণ মাঠ। ফসলশূন্য চারণ ভূমিতে হাজারও গবাদিপশুর বিচরণ।
এখানকার প্রায় পুরোটাই এক ফসলি জমি। ফলে বছরের বাকিটা সময় এভাবেই পড়ে থাকে অনাবাদি। হাজার হাজার বিঘা জমি পরিণত হয় গো-চারণ ভূমিতে। কৃষিনির্ভর জনগোষ্ঠীর বড় একটি অংশ হয়ে পড়েন বেকার। অবসরে জোটবদ্ধ বসে পড়েন মাছ শিকারে। পথচারী প্রতিবেশী বা পরিচিতজন হয় আড্ডার সঙ্গী। গল্পের প্রধান অনুসঙ্গ হয় আগামীর কৃষি নিয়েই। প্রশ্ন করে জানা যায়- অনাবাদি জমি আবাদে অসীম ইচ্ছে এবং সেচের উৎস সংরক্ষণে ব্যবস্থা নেয়ার কথা।
কৃষি বিভাগের তথ্য বলছে, ময়মনসিংহ বিভাগের ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর ও জামালপুরে অনাবাদি কৃষি জমির পরিমাণ ১২ হাজার ৬২ হেক্টর। কৃষিতে আধুনিক উপকরণ ও পদ্ধতিগত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে সম্ভব সমৃদ্ধ কৃষি উৎপাদন। সোনা ফসলে ভরে তোলা সম্ভব হাওরের অসংখ্য পতিত জমি। ধানের পাশাপাশি বিভিন্ন শাক-সবজি চাষেও ঘটতে পারে বিপ্লব। সম্প্রতি হারভেস্ট মেশিনে ধানকাটার সুবিধা পেয়ে এই বিশ্বাস আরও দৃঢ় হাওরবাসীর। শ্রমিক সংকটে বোরো ধান ঘরে তুলতে এবার পড়তে হয়নি অনিশ্চয়তায়। ফলে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট কৃষিবান্ধব হবে বলে প্রত্যাশা প্রান্তিক কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তাদের।
ময়মনসিংহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মতিউজ্জামান বলেন, ‘এবার কৃষকরার স্বস্তিতে ধান ঘরে তুলতে পেরেছে। এবং তারা বাজর দরও ভালো পেয়েছে।’
দেশের জিডিপিতে ২০২১-২২ র্অথবছরে প্রাণিসম্পদের অবদান ছিলো প্রায় ১ দশমকি ৯০ শতাংশ। আর কৃষিতে ১৬ শতাংশ। গ্রামীণ জনসংখ্যার ৭০ ভাগই পশুপালনে জড়িত। বেশিরভাগই প্রান্তিক খামারি। দুগ্ধ ও মাংস উৎপাদন এবং পোল্ট্রি শিল্পের মাধ্যমে দেশের অন্তত ৩৬ লাখ পরিবার বাড়তি আয়ের সুযোগ পায়। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে অস্বাভাবিক বেড়েছে গোখাদ্যসহ পোল্ট্রি ও মাছের খাবারের দাম। ফলে উৎপাদন শেষে মূলধন বুঝে পেতেই টানাটানি অবস্থা। বাজেটে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে টিকে থাকার নিশ্চয়তা চান তারাও।
কৃষি অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাজেটে কৃষি এবং খাদ্যশস্যের উপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। সেই সাথে কৃষিতে ভর্তুকির পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে কৃষিবিমা চালুর পরামর্শ কৃষি অর্থনীতিবিদের।
যদিও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, শিগগিরই খামারিদের বিমার আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইদুর রহমান বলেন, ‘প্রাণিসম্পদ ও মৎস্য খাতকে গুরুত্ব দিয়ে যদি বাজেট হয়, এখানে যদি ভর্তুকি বা সহায়তা ও প্রণদনা যেন বেশি থাকে এটা আমার প্রত্যাশা।’
ময়মনসিংহ বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. মনোরঞ্জন ধর বলেন, ‘খামারিদের গরুগুলোর দাম অনেক বেশি। তাই এই গরুর জন্য যাতে বিমার ব্যবস্থা করা যায় সে লক্ষে কাজ চলছে।’
বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্য বলছে, ময়মনসিংহ বিভাগে গাভি, ষাড়, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, মুরগি, হাস, কবুতর এবং কোয়েল পাখির খামারি ২০ হাজার ৭শ ১৭ জন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে কৃষিকে প্রাধান্য দেয়া হলে বৃহত্তর হাওরাঞ্চলের খাদ্যশস্য উৎপাদনে যেমন গতিপাবে তেমনি নিশ্চিত হবে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর আমিষের চাহিদা। এ জন্য কৃষিজাত পণ্যের বাজার ব্যবস্থায় মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্য নিরসনে নীতিমালাও দরকার বলে মনে করেন কৃষি সংশ্লিষ্ট সবাই।
আকন