Ekhon TV :: এখন টিভি

খুচরা টাকা ফেরত দেয়না সুপারশপ, অতি মুনাফার প্রবণতা

ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস ভোক্তা অধিকারের

মুন্নাফ রশীদ , এখন টিভি

২৭ মে ২০২৩, ১৫:৫৫

দেশে ধীরে ধীরে সুপার শপের জনপ্রিয়তা বাড়লেও ভালো মানের নামে উল্টো বাড়তি টাকা গুণতে হয় ক্রেতাদের। যেখানে অতি মুনাফার আরেক নাম রাউন্ডিং চেঞ্জ বা অ্যাডজাস্টিং ফিগার। যার মাধ্যমে ক্রেতাদের কাছ থেকে রেখে দেয়া হচ্ছে প্রায় ৬ কোটি টাকা। এতে সরকার যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে তেমনি অনৈতিকভাবে ঠকছেন ভোক্তা। যা বেআইনি বলছেন বিশ্লেষকরা। আর এমন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের।

দেশে সুপারশপের সংস্কৃতি খুব বেশি দিনের নয়। ১৯৯৯ সালে 'স্টপ অ্যান্ড শপ' নামে সুপারশপটি চালু হলেও তা চলে মাত্র পাঁচ বছর। এরপর ২০০১ সালে দেশের বাজারে আসে রহিম আফরোজ গ্রুপের প্রতিষ্ঠান আগোরা। শুরুতেই উচ্চবিত্তদের মাঝে বেশ সাড়া পড়ে নতুন ধারার এই উদ্যোগ।

এরপর গেল প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে দেশে রোজকার গৃহস্থালি বাজারের অভ্যাসে ধীরে ধীরে পরিবর্তন এসেছে। একই ছাদের নিচে নিত্য প্রয়োজনীয় সব পণ্য আর যথাযথ মানের আশ্বাস নিয়ে যাত্রা শুরু করা সুপার শপগুলো ক্রমেই পছন্দের বিকল্প হয়ে উঠেছে। তবে আস্থা অর্জনে এগিয়েছে কতটুকু?

রাজধানীর মনিপুরি এলাকার কে এম সাকেরুজ্জামান। গেলে এক দশক ধরে সুপার শপ থেকে নিয়মিত বাজার-সদাই করেন তিনি। রাউন্ডিং চেঞ্জের নামে হাতিয়ে নেয়া অতিরিক্ত টাকার ফর্দে বরাবরই চোখ আটকালেও এড়িয়ে গেছেন।

ক্রেতারা বলেন, ‘দেখা গেছে ৩৫ পয়সা হয়েছে, কিন্তু কেটে রাখছে এক টাকা। এটাতো ঠিক না। আমরা সবাই কিন্তু এটা দিয়েই যাচ্ছি, বললে তারা বলবেন ভাঙতি নেই।’

রাউন্ডিং চেঞ্জ বা অ্যাডজাস্টিং ফিগার সম্পর্কে জানেন না এমন ক্রেতার সংখ্যাই বেশি। কেউ কেউ জানলেও ঝামেলা এড়াতে প্রশ্ন করেন না। মূল্য পরিশোধ রশিদে ২৫, ৫০ কিংবা ৭৫ পয়সা বাড়তি নেয়ার বিষয়টি কখনো উল্লেখ থাকলেও কিছু কিছু সুপারশপে তা উল্লেখ না করেই মূল হিসাবে যোগ করা হচ্ছে বাড়তি টাকা।

ক্রেতারা আরও বলেন, ‘যেহেতু ওরা আমাদের বলে নিচ্ছে না, সেহেতু এটা আমাদের ঠকানো হচ্ছে। যদি ২৫ পয়সা করেও তারা কেটে নেয় তাহলে প্রতিটি শপে হাজার হাজার ক্রেতা আসেন, তাহলে হিসেব করে দেখেন তারা কত টাকা সবাইকে না বলেই কেটে রাখছেন।’

সর্বশেষ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গেল বছরের শেষ দিকে সুপারশপগুলোতে ২৯ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফার নজির পায় প্রতিষ্ঠানটি। সারা দেশে ১ হাজারের বেশি সুপারশপের মধ্যে সুসংগঠিত ৩৫০টি সুপারশপে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ ক্রেতার ভিড় জমে। গড়ে ৫০ পয়সা হিসাবে প্রতিদিন অতিরিক্ত টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। বছর শেষে রাউন্ডিং চেঞ্জ বা অ্যাডজাস্টিং ফিগারের নামে সুপার শপগুলো নিয়ে নিচ্ছে প্রায় ৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকার বেশি। কর বহির্ভুত টাকা হিসেবে যা থেকে যাচ্ছে সুপারশপ মালিকদের পকেটে। বিষয়টি স্বীকার করলেও প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস সুপারশপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের।

বাংলাদেশ সুপারশপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, ‘বাড়তি নেয়ার কোন অধিকারই নেই তাদের। এ ক্ষেত্রে যদি শপের ৫০ পয়সা কমও নিতে হয় সেটা নিতে হবে।’

শুধু সুপারশপ নয়, অনলাইন কিংবা বড় বড় ব্র্যান্ডের শোরুমেও চলে এমন কৌশল। যেটিকে ক্রেতার স্বার্থ বিরোধী মনে করছে ভোক্তা অধিকার। এমন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস তাদের। অতিরিক্ত এসব করবিহির্ভুত টাকার হিসাব তদারকির পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘যদি ভোক্তার কাছ থেকে এমনভাবে নেয়া হয় তাহলে সেটা সম্পূর্ণ অনৈতিক ও বেআইনি।’

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘এবিষয়টি আমাদের দৃষ্টিতে এখনও পড়েনি। তবে আমরা বিষয়টি যাচাই করে দেখবো। এটি যদি হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই একটি সূক্ষ্ম প্রতারণা।’

সুপারশপ খাতে বার্ষিক লেনদেন প্রায় ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। যার গড় প্রবৃদ্ধি ১৫ শতাংশেরও বেশি।

আকন

Advertisement
Advertisement
Advertisement

এই সপ্তাহের সর্বাধিক পঠিত গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ প্রতিবেদন খবর