
আবাসন খাতে জনপ্রিয় হচ্ছে গ্রিন বিল্ডিং কনসেপ্ট
চাহিদা বাড়ায় গ্রিন বিল্ডিংয়ে নজর আবাসন প্রতিষ্ঠানের
ফায়সাল করিম , এখন টিভি
১৯ মার্চ ২০২৩, ১৭:০৫
ইট কাঠের অট্টালিকা জানান দিচ্ছে প্রাণভরে শ্বাস নেয়ার আশ কমছে নগরে। ভয়ঙ্কর তথ্য হলো, এসব অট্টালিকা পরিবেশে ছড়িয়ে দিচ্ছে বিপুল পরিমাণ কার্বন। ইউনাইটেড নেশনস এনভায়রমেন্ট প্রোগ্রামের গবেষণা বলছে, পৃথিবীতে ক্ষতিকর গ্রীণহাউজ গ্যাসের প্রায় ৪০ শতাংশই তৈরি হচ্ছে এ সব ভবনে ব্যবহৃত পানি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি থেকে।
তবে এবার আবাসন খাতে জনপ্রিয় হচ্ছে গ্রিন বিল্ডিং কনসেপ্ট। ইট কাঠের নগরে যা নজর কাড়ছে সবার। চাহিদা বাড়ায় সে দিকেই ঝুঁকছে আবাসন প্রতিষ্ঠান। পরিবেশবান্ধব, তাই নিশ্চিত হয় প্রাকৃতিক আলো, বাতাস; কমে জ্বালানি খরচ।
জাতিসংঘের গবেষণা বলছে, বিশ্বে ৪০ শতাংশ কার্বন নির্গত হয় আবাসন খাতে। তাই সবুজ ভবন নির্মাণে সরকারের অগ্রাধিকার নীতির পরার্মশ নগর পরিকল্পনাবিদদের।
জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হচ্ছে সবুজায়ন ধারণা। গত কয়েক বছরে যার প্রভাব পড়েছে দেশের আবাসন খাতেও। ভবন নির্মানসহ সাজ-সজ্জায় প্রাধান্য পাচ্ছে গ্রীন এনভায়রমেন্ট কনসেপ্ট। অপরিকল্পিত গড়ে উঠা সুউচ্চ ভবনের পাশে নজর কাড়ছে নান্দনিক সবুজে ঘেরা ভবন।
র্যাংকস এফসি প্রপার্টিজের সিইও তানভীর শাহরিয়ার রিমন বলেন, ‘অ্যামেরিকার মাথাপিছু কার্বণ নি:সরণ ২২ টন। আর বাংলাদেশে মাথাপিছু কার্বণ নি:সরণ ০.২৩ টন। কিন্তু এর ভুক্তভুগি আমরা।’
বিকেলে মিষ্টি রোদে চমৎকার অবসর, রোদের ছটায় ঘুম থেকে উঠে নির্মল আলো বাতাসে শ্বাস নেয়া, কিংবা সবুজ নিকেতনে গাছেদের ছায়া। এই ঘিঞ্জি জঞ্জালে ঘেরা নগরে এসব অনেকটা স্বপ্নের মতো হলেও নিজের কেনা ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্টটে এমন সব প্রাকৃতিক অনুষঙ্গ স্বল্প পরিসরে হলেও খুঁজে ফেরেন বাসিন্দারা। তাদের এইসব সাধ মেটাতে বসে নেই আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলোও। সাধ্যের মধ্যেই এপাটর্মেন্টের আঙ্গিনা, ছাদ, বারান্দা, এমনকি লবিতেও তারা এখন গুরুত্ব দিচ্ছেন সবুজকে। সাজিয়ে তুলছেন প্রাকৃতিক ছোয়ায়। দিন দিন সবুজ হারানো এই নগরে এখন সবুজায়ন বা গ্রীণ বিল্ডিং কনসেপ্টই হয়ে উঠেছে বেশ জনপ্রিয়।
অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধার গ্রীন বিল্ডিংগুলোর দিকে তাকাতেই মন জুড়ায়। ভবনে প্রবেশ করতেই দূর হয় শহুরে কোলাহল, ক্লান্তি। প্রতিটি ফ্ল্যাটের ট্যারেস ও কার্নিশ বেয়ে নেমে আসা লতা বা গাছেরা দৃষ্টিজুড়ে দেয় প্রশান্তি। ছাদবাগানেও দেখা যায় সবুজের মেলা, বাহারি গাছের সমারোহ। কোন কোন ভবনের জমিতে পুরনো গাছ না কেটেই সাজানো হয়েছে নকশা। আছে স্বচ্ছ পানির জলাধারও। চারপাশে রয়েছে সবুজ ঘাসে হাঁটার ব্যবস্থা।
এসব ভবনের বাসিন্দারা বলেন, ‘সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই সবুজ দেখছি, গায়ে বাতাস লগছে। এখানে মনে হয় যেন গ্রামের একটা পরিবেশ। এই পরিবেশটা ছোট হলেও মানুষকে আনন্দ দেয় অনেক বড়।’
ভবনের নকশায় প্রাধ্যান্য পাচ্ছে পর্যাপ্ত আলো–বাতাস, বিদ্যুতের কম ব্যবহারসহ পানির অপচয় রোধ। গুরুত্ব পাচ্ছে সোলার প্যানেলের মতো নবায়নযোগ্য শক্তি ও প্রযুক্তির ব্যবহার।
একজন বাসিন্দা বলেন, ‘বারান্দায় বাগানের কারণে রুমটা অনেক ঠান্ডা হয়ে থাকে। এতে বাচ্চারাও অনেক ভালো থাকে।’
চট্টগ্রামে এবার আবাসন মেলাতেও দেখা যায় সবুজায়নভিত্তিক নানা প্রকল্প। ভবনের কোথায় কেমন সবুজ থাকবে তা তুলে ধরে মেলায় রাখা হয় বাহারি নানা রেপ্লিকা। তাদের ব্র্যান্ডিংয়েও গুরুত্ব পাচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের বিষয়টি।
সিপিডিএল’র সিনিয়র প্রপার্টি কনসালটেন্ট মো. রিয়াসুল ইসলাম বলেন, ‘এমন একটা ফ্লাট যেখানে সবুজ থাকবে, গাছ, বাতাস থাকবে। এসব পরিবেশে বাচ্চারা খেলবে এটাইতো চাওয়া মানুষের।’
নগর পরিকল্পনাবিদরা মনে করেন, গ্রীণ বিল্ডিং ধারণাকে জনপ্রিয় করতে কেবল আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা যথেষ্ট নয়।
নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বলেন, ‘রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টরা এটার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। তারা যদি এ বিষটিকে বিধিমালায় রাখেন তাহলে এটার প্রসার আরও বাড়বে। নইলে ব্যক্তিগত উদ্যোগে খুব কম সংখ্যক গ্রিন বিল্ডিং কনসেপ্টের আওতায় আসবে।’
মহামারী-পরবর্তী বিশ্ব আমাদের নতুন এক উপলব্ধির সামনে দাঁড় করিয়েছে। তা হলো আমাদের নাগরিক বা কর্পোরেট কার্যকলাপ কিংবা নীতিমালা যাই বলি না কেন! সবকিছুই এই গ্রহকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। সেই উপলব্ধি থেকেই টেকসই ও সবুজায়ন ভিত্তিক আবাসন এখন অগ্রাধিকার পাচ্ছে বিশ্বব্যাপী। জিরো কার্বনের যুদ্ধে যখন বলা হচ্ছে যে রিয়েল এস্টেট খাতও এক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা রাখতে পারে, তখন বাংলাদেশে এ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি নীতি নির্ধারণী পর্যায় থেকেও প্রয়োজন আরও জোরালো পদক্ষেপ।
আকন