
নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবে কমছে চা উৎপাদন
উৎপাদন বাড়লেও কমছে চায়ের রপ্তানি
জাবেদ আবদুল্লাহ , এখন টিভি
১৯ মার্চ ২০২৩, ১৫:৩৭
ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে দিন শুরু হয় এমন মানুষের সংখ্যা নেহায়াতই কম নয়। ফুটপাতের টং দোকান থেকে শুরু করে পাঁচ তারকা হোটেল। কুড়ে ঘড় থেকে অট্টালিকা সবখানেই চায়ের সমান কদর। শুধুই কি সকাল, ক্লান্ত দুপুর, অলস বিকাল বা সন্ধ্যার আড্ডা জমিয়ে তোলে এক কাপ চা। বাগান থেকে কাপ পর্যন্ত পৌছাতে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয় চা পাতাকে। বলতে গেলে সাত-আট ধাপ পেরিয়ে বাগান থেকে কাপে পৌঁছায় চা।
গেলো ১০ বছরে চায়ের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বেড়েছে উৎপাদনের দ্বিগুণ। অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ায় রপ্তানি কম হচ্ছে। পাশাপাশি নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবে কারখানায় কমছে চা উৎপাদন। এ অবস্থায় উৎপাদন বাড়িয়ে চাহিদা মেটানো ও রপ্তানি বাড়াতে ১৫ বছরের কৌশলগত পরিকল্পনা নিয়েছে চা বোর্ড। এ পরিকল্পনায় আগামী ২০২৫ সালে ১৪০ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
গত ১০ বছরে দেশে চায়ের উৎপাদন বেড়েছে ২ কোটি কেজি। আর অভ্যন্তরীণ চাহিদা বেড়েছে ৩ কোটি ৮০ লাখ কেজি চা পাতার। ফলে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে কমেছে রপ্তানির পরিমাণ।
বাংলাদেশের ১৯০ টি বাগানের ৭৫ হাজার হেক্টর জমিতে ২০১৬ সালে রেকর্ড সংখ্যক ৯ কোটি কেজি চা পাতা উৎপাদিত হয়। চা চাষের ইতিহাসে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উৎপাদন। অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে এখন প্রতি বছর ভারত, পোল্যান্ড, যুক্তরাজ্য,কুয়েতসহ বিশ্বের নানা দেশগুলোতে আনুমানিক প্রায় ৪ কোটি কেজি চা রপ্তানি হচ্ছে।
চা পানের চাহিদা বাড়ার কারণে নগরীর চা দোকানগুলোতে প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে বেচা-বিক্রি। দোকানীদের যেন দম ফেলার ফুরসত নেই। প্রতি দোকানে ১০-১২ ঘন্টা ধরে চলে অবিরাম চা বানানো। নানা ধরণ আর বাহারি নামের চা বানান ব্যবসায়ীরা। দিন শেষে এক একটি দোকানে ৭০০ থেকে ৮০০ কাপ চা বিক্রি হয়।
ব্যবসায়ীরা জানান, এর মধ্যে খরচ বাদ দিয়ে চা ব্যবসায় মাসে আয় থাকে ৩০-৪০ হাজার টাকা। রেস্টুরেন্ট, পথের ধারে দোকানগুলোতে এখন প্রতি কাপ চা বিক্রি করা হয় ১০-২০ টাকা দামে।
দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও শহরমুখী হওয়ার কারণে চায়ের অভ্যন্তরীণ চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। বাংলাদেশে চায়ের যে বাজার তার ৮০ শতাংশ চা টং দোকান, হোটেল-রেস্তোরা ও বাস স্টেশনে বিক্রি হয়। দেশে চায়ের প্রধান ভোক্তা এই স্থানে থাকা মানুষগুলো। এছাড়া সামাজিক উন্নয়নের ফলেও চায়ের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বেড়েছে বলে মনে করেন অনেক চা প্রেমী।
তারা বলেন, ‘চা আমাদের ইমোশনের সঙ্গে মিশে আছে। নাস্তার পরে এক কাপ চা না খেলে মনে হয় যেন নাস্তাই খাওয়া হয়নি। চা খেলে মনে হয় রিফ্রেস চলে আসে।’
এ অবস্থায় উৎপাদন বাড়িয়ে চাহিদা মেটানো ও রপ্তানি বাড়াতে ১৫ বছরের কৌশলগত পরিকল্পনা নিয়েছে চা বোর্ড। এ পরিকল্পনায় আগামী ২০২৫ সালে ১৪০ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘চা রপ্তানির একটা সম্ভাবনা আমাদের রয়েছে। তবে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে আমাদের দেমের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানি করবো।’
চা-বাগানমালিকরা বলছেন, সুদের হার এত বেশি যে বিনিয়োগের জন্য ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করা ব্যবসায়ীদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। চা কারখানাগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহের অনিশ্চয়তা এই শিল্পের উন্নয়নে আরেক বাধা। তারা জানান, সরকার সহায়তার হাত বাড়ালে চা উৎপাদন বাড়বে।
শ্রীমঙ্গল টি ব্রোকার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. ইসলাম মনির বলেন, ‘বিশ্ব মার্কেটে টিকে থাকতে হলে রপ্তানিতে আমাদের মনযোগ দিতে হবে। এমনিতে আমাদের চায়ের গুণগত মান অনেক ভালো। এই মান যদি ধরে রাখতে পারি তাহলে আমাদের রপ্তানি আগের মত আরও বাড়বে।’
দেশে উৎপাদনের চেয়ে চায়ের চাহিদা বাড়ছে দ্রুতগতিতে। এরিমধ্যে পাহাড়ি ও সমতল মিলিয়ে হেক্টর প্রতি গড় উৎপাদন ৮০০ থেকে বেড়ে ১২০০ কেজিতে উন্নীত হয়েছে। জিডিপিতেও চা শিল্পের অবদান বাড়ছে ২ শতাংশ হারে।
আকন