
লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা
শুধু টিকিট বিক্রি করেই মাসে আয় ৭০ লাখ টাকা
শোয়েব রহমান , এখন টিভি
১৮ মার্চ ২০২৩, ১২:৫৬
মাত্র ৬ বছরের ব্যবধানে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় বেড়েছে ১৬ টি বাঘ, যার বাজার মূল্য প্রায় ৬ কোটি টাকা। এছাড়া বাহারি প্রজাতির মোট ৬২০ প্রজাতির প্রাণী প্রদর্শন করে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা। খরচ বাদে মাসে প্রতিষ্ঠানটির আয় করছে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা। সরকারি এ প্রতিষ্ঠানের ফান্ডে জমা আছে প্রায় ৬ কোটি টাকা।
দেশের সমৃদ্ধ চিড়িয়াখানার কথা বললে প্রথম সারিতেই উঠে আসবে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার নাম। প্রতিদিন এখানে প্রায় ২ হাজার এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে ৭/৮ হাজার মানুষ এখানে ভ্রমণ করেন। দেখেন ৫০ এরও অধিক প্রজাতির পশু পাখি। এখানে শুধু বাঘের সংখ্যাই রয়েছে ১৬। যা সারাদেশের মধ্যে সর্ববৃহৎ সংগ্রহ। এবং এই ১৬ টি বাঘের আনুমানিক মূল্য ৬ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার বাঘের খাঁচার কাছে গিয়ে দেখা যায়, চলনে বলনে রাজকীয় ভাব। পুরো খাঁচা জুড়ে পায়চারির এ ধরনই জানান দেয় আধিপত্যের। ১৬ টি বাঘের সারাক্ষণ এমন ছুটোছুটি আর হুংকার নজরকাড়ে দর্শনার্থীদের।
২০১৬ সালে ৩৩ লাখ টাকায় আফ্রিকা থেকে আনা হয় দুটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার। নাম রাখা হয় রাজ ও পরী। ২০১৮ সালে প্রথম বাচ্চা হয় এ দম্পতির। ৬ বছরের ব্যবধানে সে সংখ্যা এখন ১৬। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৬ কোটি টাকা। এই চিড়িয়াখানায় আছে বিরল প্রজাতির সাদা বাঘও। এর মধ্যে দুটি বাঘ ঢাকা চিড়িয়াখানায় দিয়ে বিনিময়ে আনা হবে দুটি জলহস্তি। গহিন অরণ্যে কয়েকটি বাঘ ছেড়ে দেয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা থেকে দুটি বাঘ ঢাকা চিড়িয়াখানায় দিয়ে বিনিময়ে আনা হবে দুটি জলহস্তি। ইতোমধ্যে এমন একটা চিঠি আমরা পেয়েছি।’
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. শাহাদাৎ হোসেন শুভ বলেন, ‘সুন্দরবনের বাঘের সঙ্গে জেনেটিক কোন সমস্যা যদি না থাহলে তাহলে এই বাঘও সেখানে ছেড়ে দেয়া যাবে।’
দাম বিবেচনায় বাঘের পরই অবস্থান সিংহের, যার মূল্য ১২ লাখ টাকা। আর তৃতীয় অবস্থানে আছে ক্যাঙ্গারু। হল্যান্ড থেকে আমদানি করা প্রতিটি ক্যাঙ্গারুর বাজার মূল্য প্রায় সাড়ে ৯ লাখ টাকা।
চিড়িয়াখানায় ৬৭ প্রজাতির ৬২০টি প্রাণি আছে, যেগুলো দেখতে প্রতিদিন ভিড় করেন গড়ে ২/৩ হাজার দর্শনার্থী। আর ছুটির দিনে সে সংখ্যা ছাড়িয়ে যায় ৭/৮ হাজারে। শুধু টিকিট বিক্রি করেই মাসে চিড়িয়াখানার আয় ৭০ লাখ টাকা, বিপরীতে ব্যয় ২২ থেকে ২৫ লাখ টাকা।
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. শাহাদাৎ হোসেন শুভ আরও বলেন, বাংলাদেশের মধ্যে একমাত্র চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানাই নিজের আয়ে চলে থাকেন।
বর্তমানে ১০.২ একর জায়গাজুড়ে চিড়িয়াখানার অবস্থান। তবে পশু পাখির জায়গা সংকুলান না হওয়ায় সীতাকুন্ডের জঙ্গল সলিমপুরে চিড়িয়াখানা স্থানান্তরের পরিকল্পনার কথা জানান কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান আরও বলেন, সীতাকুন্ডের জঙ্গল সলিমপুরে চিড়িয়াখানা স্থানান্তরের পরিকল্পনা চলছে। এখানে বাঘের প্রজনন বৃদ্ধি করতে সক্ষম হওয়ায় সেটি সীতাকুন্ডের জঙ্গলে আরও বেশি বৃদ্ধি করা যাবে।
বর্তমানে চিড়িয়াখানার নিজস্ব তহবিলে জমা আছে ৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকা, এছাড়া ফিক্সড ডিপোজিট আছে আরও আড়াই কোটি টাকা। জমাকৃত অর্থ দিয়ে অন্তত দুই বছর ব্যয় বহন সম্ভব চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার।
আকন