Ekhon TV :: এখন টিভি

৭ মার্চের ভাষণ

সংগ্রামের রূপরেখার সাথে ছিলো অর্থনৈতিক দিকনির্দেশনাও

সংগ্রামের রূপরেখার সাথে ছিলো অর্থনৈতিক দিকনির্দেশনাও

বঙ্গবন্ধুর ভাষণ এখন সারাবিশ্বের ঐতিহাসিক প্রামাণ্য দলিল

০৭ মার্চ ২০২৩, ১০:১৮

আজ ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ। ১৯৭১ এর এই দিনে বঙ্গবন্ধু যে ভাষণ দিয়েছিলেন সেটি এখন সারাবিশ্বের ঐতিহাসিক প্রামাণ্য দলিল। ইতিহাস গবেষকরা বলছেন, সে ভাষণে রাজনৈতিক, সামাজিক শোষণের পাশাপাশি পুরোপুরি ফুটে উঠে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের অর্থনৈতিক চিত্র। সেদিন সংগ্রামের রূপরেখার সাথে ছিলো অর্থনৈতিক দিকনির্দেশনাও। যা পরবর্তীতে প্রতিফলিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানেও।

আজকের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সেদিন অতটা সবুজ ছিলো না। বাংলার গায়ে তখনও লাগেনি ফাগুনের হাওয়া। ছিলো পাতা ঝরার দিন। তবে ঝরেছিলো রক্ত। রাজপথে, মিছিলে, স্লোগানে।

বসন্তের দুপুর পেরিয়ে পড়ন্ত বিকেল। লাখ লাখ ব্যাকুল বিদ্রোহী শ্রোতা। অপেক্ষায় অখণ্ড আকাশ। গণ সূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি আসলেন। শোনালেন তার অমর কবিতা খানি।

'এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম;
এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম।'

সেই বজ্রকন্ঠই অপ্রতিরোধ্য করে তুলেছিলো মুক্তিকামী মানুষকে। দ্রোহের আগুন জ্বালিয়েছিলো ৫৬ হাজার বর্গমাইল জুড়ে।

৪৭-এ দেশ ভাগের পর পূর্ববাংলার মানুষের আশা ছিলো, নতুন রাষ্ট্রে মিলবে সকল ন্যায্য অধিকার। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তান শুরু থেকে বাংলাকে মূল্যায়ন করে তাদের উপনিবেশ হিসেবে। তাতে সময়ের সাথে বাড়ে বৈষম্য।

অর্থনীতিবিদ আতিউর রহমান বলেন, কিভাবে নির্যাতিত, নিষ্পেষিত হয়েছি; কেমন করে আমরা খাদ্য না কিনে অস্ত্র কিনেছি, সেই অস্ত্র আমাদের ওপর ব্যবহার হয়েছে- এই বিষয়গুলো পুরো ভাষণটির মধ্যে এক ধরণের অর্থনীতি অবশ্যই ছিলো। সেটি ছিলো সাধারণ মানুষের মুক্তির অর্থনীতি।

পূর্ব বাংলায় বাস পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ৫৬ শতাংশ মানুষের, কিন্তু প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় এ তটের জন্য বরাদ্দ ছিলো মাত্র ২০ শতাংশ। ১৯৫০ থেকে ৭০ সালের উন্নয়ন খাতের খরচে অর্থনৈতিক বৈষম্য আরো স্পষ্ট। ২০ বছরে সরকারি, বেসরকারি খাত মিলে পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য ৩ হাজার ২০২ কোটি টাকা বেশি ব্যয় হয়েছিলো।

ইতিহাস গবেষক মুনতাসীর মামুন বলেন, অসহযোগ আন্দোলন শুধু রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক অসহযোগ ছিলো না, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অসহযোগ। যে কারণে তিনি বলছেন, ব্যাংকগুলি সব তার নির্দেশে চলবে, কর দেয়া যাবে না। আবার সঙ্গে সঙ্গে তিনি বলেছেন, গরিব মানুষদের যেনো আমরা সহায়তা করি। কারণ, তারা অসহযোগিতা করতে পারবে না।

যেখানে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের দুই অংশে মাথাপিছু আয় ছিলো সমান, ১৯৭১ সালে পশ্চিমের মানুষের আয় পূর্বের প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। পূর্ব বাংলার মাথাপিছু আয় না দ্বিগুণ বেড়েছিলো দ্রব্যমূল্য। মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ নিয়াজ আসাদুল্লাহর এক গবেষণা বলছে, ২৫ বছরে পাচার হয় ২৬০ কোটি ডলার।

এসব বৈষম্যের প্রথম প্রতিবাদ শুরু ১৯৫৬ সালের নিখিল পাকিস্তান অর্থনীতি সম্মেলন দিয়ে। তারপর ৬২'র ফাইনান্স কমিশন গঠন, ৬৬'র ছয় দফা আন্দোলন, ৬৯ এর গণআন্দোলন, ৭০ এর নির্বাচন থেকে ৭১ এর ৭ই মার্চের ভাষণ- সবকিছুই যেন অর্থনৈতিক শোষণের প্রতিবাদের বহিঃপ্রকাশ।

আর এসব নির্দেশনাই পরবর্তীতে দেশ পরিচালনার সহায়ক হয়। সেটি প্রতিফলিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানেও।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের যে সংবিধানটি রচনা করা হলো সেই সংবিধানের মূল কথাই ছিলো মানবাধিকার। সাধারণ মানুষের মধ্যে সম্পদের সরবরাহ করা এবং সাম্যের অর্থনীতি পরিচালনা করা।

শোষণ, নিপীড়নের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অদম্য প্রতিবাদেরই সোনালী ফসল আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ। কবি নির্মলেন্দু গুণের কবিতার ভাষায় আবারও বলতে হয় সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের।

এমএস

Advertisement
Advertisement
Advertisement