
শান্তির শহরে অশান্তির কারণ শব্দ দূষণ আর পানির সঙ্কট
দূষণে বাড়ছে নানা রোগের ঝুঁকি
হারুন-উর-রশীদ , এখন টিভি
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৬:৩৯
গোছালো, নির্মল আর শান্তির শহর হিসেবে পরিচিত রাজশাহীতে অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে অসহনীয় শব্দ দূষণ আর সুপেয় পানির সঙ্কট। বাড়ছে নানান রোগের ঝুঁকি। যদিও এসব দূষণ নিয়ন্ত্রণে নেই কোন উদ্যোগ।
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এভাবে চলতে থাকলে বিরূপ প্রভাব পড়বে স্বাভাবিক জনজীবনে।
গেল ১৪ বছরে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন-ব্যয়ে বদলে যাওয়া রাজশাহীর সুনাম ছাড়িয়েছে দেশের গণ্ডি। ৯৭ বর্গকিলোমিটারের এ নগরীতে নাগরিকদের আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা দিতে শতবছরের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সিটি করপোরেশন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যে মতে, ২০১৬ সালে নির্মল বাতাসের শহর হিসেবে পরিচিত হয় রাজশাহী। এরপর ২০২১ সালেও ছিল সবচেয়ে কম দূষণে। অথচ সেই শহরে দিন দিন বাড়ছে শব্দ দূষণ।
বিধিমালা অনুয়ায়ী, আবাসিক এলাকায় রাত ৯টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত শব্দের মাত্রা ৪৫ ডেসিবেল এবং দিনের অন্য সময়ে ৫৫ ডেসিবেল থাকার কথা। অথচ নগরীর গুরুত্বপূর্ণ অনেক মোড়সহ শিল্প এলাকায় এই মাত্রা দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ। শব্দ দূষণরোধে গেল ১০ মাসে নগরীর বিভিন্ন স্থানে ১১টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। ধ্বংস করা হয়েছে ৪০টি হাইড্রোলিক হর্ণ।
বরেন্দ্র পরিবেশ উন্নয়ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সভাপতি প্রকৌশলী মো. জাকির হোসেন খান বলেন, ‘আমরা নগরীর ৫টা গুরুত্বপূর্ণ স্থানে শব্দের মাত্রা পরিমাপ করেছিলাম সেখানে ৮৮ থেকে ৯০ ডেসিবেল পাওয়া গেছে।’
চিকিৎসকরা বলছেন, শব্দ দূষণের শিকার অনেকেরই ধীরে ধীরে কমছে শ্রবণ ক্ষমতা। একইসাথে বাড়ছে নানা ধরণের স্বাস্থ্য ঝুঁকি।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. চিন্ময় কান্তি দাস বলেন, ‘শব্দ দূষণে আমাদের মস্তিস্কে নানা ধরণের সমস্যা হতে পারে।’
এদিকে সুপেয় পানির অভাবও নতুন সংকট তৈরি করেছে পদ্মা পাড়ের এই শহরে, যেখানে রাজশাহী ওয়াসার গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৪৮ হাজার। তাদের কাছ থেকে বছরে রাজস্ব আসছে ১০ কোটি টাকার। অথচ পানি নিয়ে বিস্তর অভিযোগ গ্রাহকদের।
তারা বলেন, ‘ট্যাবের পানি তেমন ভালো না, তাও আমাদের সেই পানি খেতে হয়। পুকুরের পানির মত লাইনের পানিও ঘোলা আসে।’
রাজশাহী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘এখানের পানিতে আয়রনের পরিমাণ অনেক বেশি। এছাড়া সাপ্লাইয়ের পানিতেও আয়রনের পরিমাণ অনেক বেশি।’
গেল বছর ওয়াসার পানিতে পেটের পীড়ার অন্যতম উপাদান কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতির তথ্য উঠে আসে জনস্বাস্থ্য বিভাগের পরীক্ষায়। বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিতের দায়িত্ব থাকা ওয়াসার সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও নেই তেমন কোন তদারকি।
রাজশাহী ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মো. পারভেজ মামুদ বলেন, ‘পানির স্যাম্পল কালেকশনে ত্রুটির কারণে অনেক সময় এই সমস্যাটা হতে পারে। তবে এই সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।’
বলা চলে কেবলমাত্র সঠিক তদারকির অভাবে শান্তির শহরে বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে শব্দ ও পানি দূষণ। নগর জীবনের এসব জটিলতা এড়াতে জনসচেতনতা তৈরি করা যেমন জরুরি, তেমনই সম্মিলিতভাবে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়ন করতে হবে। নগরবিদরা বলছেন, পানির মতো জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কোন ধরনের শিথিলতার সুযোগ নেই।
আকন