Ekhon TV :: এখন টিভি

বর্জ্য থেকে প্রতিদিন মিলবে ৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ

খরচ বেশি হলেও পরিচ্ছন্ন হবে রাজধানী

সিউল আহমেদ , এখন টিভি

২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৬:০৭

দেশে প্রথমবারের মতো তৈরি হচ্ছে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্ল্যান্ট। একেকটি প্ল্যান্ট তৈরিতে খরচ হচ্ছে ১৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের প্ল্যান্ট দুটি বাস্তবায়ন হলে বর্জ্য থেকে প্রতিদিন ৭ থেকে ৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। উত্তর সিটির অবকাঠামোর কাজ শুরু হলেও দক্ষিণ সিটির প্রকল্প এখনো টেবিলে।

রাজধানীতে প্রতিদিন কত হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য তৈরি হয়? এরকম প্রশ্নের উত্তরে মিলবে ভয়াবহ উত্তর। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিদিন জাদুর শহর ঢাকাতে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় হাজার টন বর্জ্য তৈরি হয়।

রাজধানীর আমিনবাজার ও মাতুয়াইল প্ল্যান্ট দুটি ঘুরে দেখা যায়, দুই সিটি করপোরেশনের এসব বর্জ্য বেশীর ভাগ সময় নিয়ে যাওয়া হয় প্রাথমিকভাবে তৈরি করা ডাম্পে। সেখান থেকে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্জ্য নিয়ে যাওয়া হয় যাত্রাবারীর মাতুয়াইল প্ল্যান্টে আর উত্তর সিটি করপোরেশনের বর্জ্য সাভারের আমিনবাজারের প্ল্যান্টে নিয়ে যাওয়া হয়।

বিশ্বের প্রায় সব উন্নত দেশেই এসব বর্জ্য দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। বাংলাদেশে এরকম কিছু করার পরিকল্পনা ছিলো অনেক দিন থেকেই। তবে তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছিলো না। এবার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান চায়না মেশিনারি ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন তুরাগ নদীর কাছাকাছি আমিন বাজার এলাকায় কাজ শুরু হয়েছে।

আমিনবাজারে প্ল্যান্টের জন্য ৩০ একর জায়গায় তৈরি হচ্ছে দেশের প্রথম বর্জ্য থেকে বিদ্যুত উৎপাদন প্ল্যান্ট। ৪২ দশমিক ৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে খরচ হবে ১৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। প্রতি ইউনিটে বিদ্যুতের দাম পড়বে ১৮ টাকার বেশি।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘এটি এখন আর স্বপ্ন নয় বাস্তবের পথে। আমরা আশা করছি ২০২৪ সালের শেষে অথবা ২০২৫ সালের শুরুতে ঢাকা উত্তর সিটির আবর্জনায় শুরু হবে বিদ্যুৎ উৎপাদন।’

উত্তর সিটি করপোরেশন কাজে কিছুটা এগিয়ে গেলেও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এখনো খুব কাজের প্রকল্পই শুরু করে নি। দক্ষিণের নগর ভবন বলছে, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ প্রকল্প এখনো আলোচনার টেবিলে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ফজলে নুর তাপস বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে ভাড়া ও জমির মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছি। এছাড়া আমাদের বর্জ্য তাদের কারখানা পর্যন্ত যে পৌঁছে দিচ্ছি তারও একটা মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছি। কিন্তু এই প্রক্রিয়াটি একটি দরপত্রের মাধ্যমে করতে হবে এবং এটা বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।’

এদিকে এসব কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কিনতে খরচ বেশি পড়লেও বর্জ্য ব্যবস্থাপনাটাকেই বড় করে দেখছে জ্বলানি বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, রাজধানীতে যে প্রতিদিন পাঁচ-ছয় হাজার টন বর্জ্য তৈরি হচ্ছে তা এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহারের ফলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন ঘটবে এবং একই সাথে রাজধানী পরিচ্ছন্নতা বাড়বে বলেও মনে করা হচ্ছে। তবে সব প্রকল্পেই মানতে হবে বিজ্ঞানসম্মত প্রক্রিয়া।

দুই সিটির দৈনিক প্রায় ৬ হাজার টন বর্জ্য থেকে দুটি প্ল্যান্টে প্রতিদিনি ৭ থেকে ৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা সম্ভব। প্রতিদিন ৬০০ টন বর্জ্য সরবরাহ করবে সিটি করপোরেশন। আর এসব কেন্দ্র থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ১৯ টাকা ৮৭ পয়সায় কিনে নেবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড-পিডিবি।

পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, ‘বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন অনেকটা ব্যয়বহুল। তবে বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন নাগরিক জীবনে একটা বড় স্বস্তি দেবে।'

আকন

Advertisement
Advertisement
Advertisement