Ekhon TV :: এখন টিভি

আমদানি জটিলতায় ক্রীড়া সামগ্রীর দামে আগুন

৩০০ টাকার ফুটবল ৫০০ টাকা, ৭০০ টাকার ক্রিকেট ব্যাট ১৫০০

আমদানি জটিলতায় ক্রীড়া সামগ্রীর দামে আগুন

খেলাধুলার আয়োজন অনিয়মিত হবার শঙ্কা

১৮ মার্চ ২০২৩, ১২:৩৬

এলসি জটিলতা আর ডলার সংকটে গুলিস্থান স্পোর্টস মার্কেটের দোকান ভেদে কেনাবেচা কমেছে প্রায় ৩০ থেকে ৭০ শতাংশ। সেই সাথে প্রায় প্রতিটি আমদানি করা ক্রীড়া সামগ্রীর দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত। যার প্রভাব পড়ছে দেশের সার্বিক খেলাধুলার উপর। এভাবে চলতে থাকলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খেলাধুলার আয়োজন অনিয়মিত হবার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

মজিদ মিয়া। এসেছেন গোপালগঞ্জ থেকে গুলিস্থান পাইকারি স্পোর্টস মার্কেট থেকে নিজের দোকানের জন্য কেনাকাটা করতে। মাসে ৪ থেকে ৫ বার ক্রীড়া সামগ্রী কিনতে এই মার্কেটে আসলেও গত কয়েক মাস ধরে কমতে শুরু করেছে তার পণ্য কেনা।

মজিদ মিয়া বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ চলছে। আগে যে পণ্য আমি বিক্রি করতাম ৩০০ টাকা এখন সেই পণ্য পাইকারি কিনতেই হচ্ছে ৩৭০ টাকা।’

প্রান্তিক পর্যায়ে খেলাধুলার নিয়মিত উপকরণ থেকেই মুলত খুচরা ব্যবসায়ীদের লাভের চাকা সচল থাকে। কিন্তু যেখানে সাধারণ মানুষের জীবন-যাত্রার ব্যয় মেটাতেই হিমশিম অবস্থান সেখানে খেলধুলার পেছনে ব্যয় করাটা হয়ে দাড়িয়েছে বিলাসিতা। যার প্রভাব এসে পড়েছে খুচরা থেকে পাইকারি সবখানে।

পাইকারি বিক্রেতারা বলেন, ‘আমরা আগেরমত পণ্য আনতেও পারছি না আর বিক্রিও করতে পারছি না। প্রতিনিয়তই ক্রেতাদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয় দাম নিয়ে। আগে আমরা যে ফুটবল বিক্রি করতাম ৩৫০ টাকা সেই ফুটবল এখন কিনতেই হয় ৫৫০ টাকায়।’

বৈশ্বিক অর্থনীতির টালমাটাল ঢেউ এসে লেগেছে দেশের ক্রীড়া সমগ্রীর বাজারও। অধিকাংশই আমদানি নির্ভর হওয়ার কারণে বড় প্রভাব পড়েছে এই বাজারে। সবথেকে জনপ্রিয় ফুটবল, ক্রিকেট খেলার সমগ্রী থেকে শুরু করে অনান্য খেলার উপকণের দাম বেড়েছে ৩০ থেকে ৭০ শতাংশ। ৬ মাস আগে সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে থাকা ব্র্যান্ড ভেদে যে ফুটবল বিক্রি হতো ৩০০ থেকে ১০০০ টাকায় এখন সেই ফুটবল বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকায়। ক্রিকেটের সাথে জড়িত সব উপকরণের দামও বেড়েছে আগের দামের থেকে ৩০০ থেকে ৭০০ টাকা। বিশেষ করে ক্রিকেট ব্যাটের দাম বেড়েছে ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত।

তবে শঙ্কার ব্যপার হলো দাম দিয়েও অনেক ক্রেতা পাচ্ছেননা তার চাহিদার উপকরণ। কারণ আমদানি জটিলতায় বন্ধ প্রায় নতুন চালানের। আগে যেই দোকানে প্রতিদিন বিক্রি হতো ১ লাখ টাকা এখন নেমে এসেছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। তবে দেশে তৈরি জার্সির বাজার আছে কিছুটা স্থিতিশীল।

প্রতিবছর দেশের স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে খেলাধুলার জন্য আলাদা বাজেট থাকে। যা দিয়ে মৌসুমী খেলাধুলাসহ সারা বছরের অন্যন্য ইভেন্টগুলো হয়। তবে দিন দিন এভাবে দাম বৃদ্ধি অব্যহত থাকলে বন্ধ করে দিতে হতে পারে অনেক ইভেন্ট। এতে সমাজে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কা করছেন অনকে।

পটুয়াখালি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্যাল এডুকেশনের ইনচার্জ মো. আবু হানিফ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস শান্ত রাখতে খেলাধুলার বিকল্প নেই। শিক্ষার্থীরা খেলাধুলার মধ্যে থাকলে অন্যসব খারাপ থেকে তারা দূরে থাকবে। পণ্যের দাম যেভাবে বেড়েছে তাতে ভবিষ্যতে খেলাধুলা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হতে পারে বলে আমি মনে করি।’

এখন কথা হলো এতো সমস্যার মূল জায়গাটা কোথায়। ওই যে আগে বলে এসেছি এই বাজার আমাদানি নির্ভর। তাহলে যে ব্যবসায়ীরা নিয়মিত খেলাধুলার সামগ্রী আমদানি করে এই বাজার সচল রাখেন তারা বলছেন, ‘ব্যাংকে গিয়ে দীর্ঘ অপেক্ষায় থাকতে হয়। তারপরেও এলসি সংকটে পণ্য আমদানি করতে পারছি না। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে হবে।’

গুলিস্থানের এই স্পোটর্স মার্কেট থেকে প্রতিবছর পণ্য কেনাবেচা হয় প্রায় হাজার কোটি টাকার। তবে এই হাজার কোটি টাকার পেছনে লুকিয়ে আছে কোটি ক্রীড়া বিদদের সুস্থ্য-স্বাভাবিক জীবনধারা।

আকন

Advertisement
Advertisement
Advertisement