
বিলাসবহুল প্রাইভেট জেটের বাজার

দামি প্রাইভেট জেট
১৫ মার্চ ২০২৩, ১২:৪৪
মো. ইমরান , এখন টিভি
আজকের গুরুত্বপূর্ণ লাইফস্টাইল খবর
বিল গেটস ও ইলন মাস্কের প্রাইভেট জেট:
মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস অথবা টেসলা মোটর ও স্পেইস এক্সের প্রধান ইলন মাস্ক, ভ্রমণ, বাণিজ্য কিংবা নিছক বিনোদনের জন্য ব্যবহার করেন ব্যক্তিগত জেট যার আরেক নাম চার্টার্ড প্লেন বা প্রাইভেট জেট। বিল গেটস এরকম ৪টি প্রাইভেট জেটের মালিক এর মধ্যে বোমন্বার্ডিয়ার চ্যালেঞ্জার ৩৫০ জেটের মূল্য ২০ থেকে ২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এছাড়া বিল গেটসের আছে গাল্ফ স্ট্রিম ৬৫০ ই আর। ইলন মাস্কও এটি ব্যবহার করেন যা কিনতে গুনতে হবে ৭০ মিলিয়ন ডলার।
সুবিধাসমূহ:
তারকা থেকে শুরু করে বড় বড় শিল্পপতি, কেন ব্যবহার করেন এসব বিলাশবহুল প্রাইভেট জেট? মূলত তিন ধরনের সুবিধা পাওয়া যায় প্রাইভেট জেটে।
প্রথমত, কোথাও যাওয়ার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা এয়ারপোর্টে অপেক্ষা করতে হয় না। দ্বিতীয়ত, প্রাইভেট জেটগুলোতে বাণিজ্যিক চুক্তি, যেকোনো ধরনের মিটিং সহজেই আয়োজন করা যায়। এছাড়া নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা রক্ষাও একটা বড় কারন।
যাত্রী সংখ্যা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার ভিত্তিতে তিন ধরনের প্রাইভেট জেট রয়েছে। চার ও সাতজন যাত্রীবিশিষ্ট লাইট প্রাইভেট জেটগুলোর দাম পাঁচ থেকে ১২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। অপরদিকে মাঝারি আকারের প্রাইভেট জেটগুলোর মূল্য ১২ থেকে ২০ মিলিয়ন ডলার এবং বড় আকারের প্রাইভেট জেটগুলোর মূল্য ২০ মিলিয়ন ডলারের বেশি। এ দুই ধরনের প্রাইভেট জেটে বসতে পারে যথাক্রমে ১২ ও ১৯ জন যাত্রী। সিট ছাড়াও সোফা, টিভি, ওয়াইফাই, রান্না ঘর ও টয়লেটের ব্যবস্থা রয়েছে বিলাশবহুল এসব জেটে।
শুধু সিট সংখ্যায় সীমাবদ্ধ নয় এসব প্রাইভেট জেট। নিজের আয় ও শক্তি সামর্থ্যের ওপর ধনকুবেররা বোয়িং প্লেনগুলোকেও প্রাইভেট জেট হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। এরমধ্যে আমেরিকার এয়ার ফোর্স ওয়ানের মূল্য ৬৬০ মিলিয়ন ডলার। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির জন্য যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা এই প্রাইভেট জেটে আছে। নিজস্ব কক্ষ, মেডিকেল সেন্টারসহ কনফারেন্স রুমও আছে এই বিমানে।
এছাড়া সৌদি আরবের প্রিন্স আল-ওয়ালিদ বিন তালার ব্যবহার করেন ৬০০ মিলিয়ন ডলারের এয়ার বাস এ থ্রিএইটটি। প্রাইভেট জেটের তালিকায় আরো আছে ব্রুনেইয়ের সুলতানের বোয়িং সেভেন ফর সেভেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বোয়িং সেভেন ফাইভ সেভেন।
অভিজ্ঞতা ও কাজের ধরন অনুযায়ী সম্মানী পেয়ে থাকেন প্রাইভেট জেটের ক্রু। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এয়ার হোস্টেসের মাসিক বেতন চার থেকে পাঁচ হাজার ডলার। তবে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এই বেতন খুবই নগন্য, মাত্র হাজার ডলার কিংবা এর থেকেও কম। তবে যারা চাকরীর বদলে চুক্তিভিত্তিক কাজ করেন তাদের বেতন দিনে ৫০০ ডলারের বেশি। প্রাইভেট জেটে সাজসজ্জা থেকে শুরু করে অতিথিদের খাবার, তাদের পছন্দ-অপছন্দ সব কিছুর খেয়াল রাখাই এই বিমানবালাদের কাজ।
প্রাইভেট জেটের যাত্রা:
১৯৩০ সাল থেকেই প্রাইভেট জেট নিয়ে গবেষণা শুরু হয় তবে বাজারে প্রথম ব্যক্তিগত প্লেন আসে ১৯৫০ সালে, ‘লকহিড জেটস্টার’ কোম্পানির হাত ধরে। এটি ছিল দশজন যাত্রীর একটি জেট। এরপর ১৯৬৩ সালে ‘লিয়ার জেট’ কোম্পানি চার থেকে ছয় জনের একটি জেট বাজারে আনে। এরপর থেকেই বিজনেস টাইকুনসহ প্রভাবশালীরা তাদের বিভিন্ন কাজের জন্য প্রাইভেট জেট ব্যবহার করে আসছে।
আর অ্যান্ড আর এভিয়েশন, বসুন্ধরা এয়ারলাইনস, বিআরবি লিমিটেড ও স্কোয়ার লিমিটেডসহ মোট ১০টি কোম্পানি বাংলাদেশে চার্টার প্লেনের সেবা প্রদান করে থাকে। বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের প্রতিবেদন মতে, বিগত এক দশকে বেসরকারী বিমানের গড় প্রবৃদ্ধি ১৫ শতাংশ। করোনার জন্য ২০১৯ থেকে ২০২১ পর্যন্ত এই খাতের আয় নিম্নমূখী হলেও ২১/২২ অর্থ বছরে এটি বেড়ে দাড়িয়েছে ১ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকায়।
বিশ্বব্যাপী প্রাইভেট জেটের চাহিদা দেখা গেলেও বাংলাদেশে এখনো এই খাত শক্তভাবে গড়ে ওঠেনি। তবে বাণিজ্য ও আয়ের ক্ষেত্রে সম্ভাবনার সুযোগ রয়েছে বিলাশবহুল এই শিল্পে।
আইকে