
ইউক্রেনে কার ক্ষতি কতটা?

ইউক্রেন যুদ্ধে গেলো এক বছরে বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষতি হয়েছে এক লাখ ৬০ হাজার কোটি ডলারের বেশি
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:৪৭
সৈয়দ ইফতেখার , এখন টিভি
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:৪৭
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ গেলো এক বছরে নাড়িয়ে দিয়েছে বিশ্ব অর্থনীতির ভীত। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় দুই লাখ কোটি ডলার। ইউক্রেনকে সবল করতে লাখ লাখ কোটি ডলার খরচ করছে পশ্চিমারা। অন্যদিকে রাশিয়ার ক্ষতির চেয়ে লাভের পাল্লাই ভারী। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের এক বছরের খরচের চিত্রটা দেখে নেয়া যাক।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে ২০২৩। এই এক বছরে বিশ্ব-ব্যবস্থা রীতিমতো বদলে দিয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। কী সমাজ ব্যবস্থা, কী রাজনীতি কী অর্থনীতি, সবখানেই এখন যুদ্ধের ছাপ। দগদগে ক্ষত। কারো কারো আবার পোয়া বারো।
এই যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতির খরচ অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি ভোগাচ্ছে পুরো বিশ্বকে। দেশে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে। ইউক্রেন থেকে খাদ্যপণ্য রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হওয়ায়, খাদ্যের সংকট। চাকরির বাজারে মন্দা কাটছে না। ইউরোপে অভিবাসী ঢল স্মরণকালের সর্বোচ্চ। রয়েছে আরও কত শত সমস্যা।
যুদ্ধের এক বছরে রাশিয়ার হামলা মোকাবিলায় অনেক ধরনের সামরিক-বেসামরিক সহায়তা দিয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো। তবে ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় সহযোগী যুক্তরাষ্ট্র। সম্প্রতি ঝটিকা কিয়েভ সফরে ইউক্রেনের জন্য আরো প্রায় ৫০ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তার ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এরমধ্যেই ইউক্রেন যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র যে শত শত কোটি ডলার ব্যয় করেছে, তার সঙ্গে এটা নতুন সংযুক্তি। শুধু ২০২২ সালেই মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ ইউক্রেনের জন্য ১১২ বিলিয়ন বা ১১ হাজার ২০০ কোটি ডলারের সহায়তা দেয়। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, আরও ৮ হাজার কোটি ডলারের অর্থ ব্যয় করবে ওয়াশিংটন। যুদ্ধে এতো খরচের বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে যুক্তরাষ্ট্রে। অনেক মার্কিন বিদেশি রাষ্ট্রের পেছনে সরকারের এতো ব্যয়ে চিন্তিত। তারা জানতে চাইছেন, এই অর্থ কোথায় কোথায় ব্যয় হচ্ছে এবং সহায়তা দেয়া কোথায় গিয়ে ঠেকবে।
সামরিক ক্ষেত্রে ৪ হাজার ৬শ' ৬০ কোটি ডলার যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে দিয়েছে। আরও ৫ হাজার কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা দেয়া হবে।
এর পরে রয়েছে, ব্রিটেন (৫১০ কোটি ডলার), ইউরোপীয় ইউনিয়নের কিছু দেশ (৩৩০ কোটি ডলার), পোল্যান্ড (২৫০ কোটি ডলার), জার্মানি (২৫০ কোটি ডলার) এবং কানাডা (১৪০ কোটি ডলার)। আরও সহায়তা দিয়েছে নেদারল্যান্ডস, ইতালি, ফ্রান্স, নরওয়ে, জাপানসহ বেশ কিছু মিত্র দেশ।
যদিও মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির হিসেব করলে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেন যুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যয়কারী দেশ নয়। এক্ষেত্রে তালিকার শীর্ষে এস্তোনিয়া। পূর্ব ইউরোপের দেশটি তাদের জিডিপির ১.১ শতাংশের সমান প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলে জানিয়েছে কিয়েল ইন্সটিটিউট। অন্যদিকে, বিশ্বের এক নম্বর অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র তার জিডিপির মাত্র শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে। অবশ্য প্রতি ডলারের হিসেব করলে, ইউক্রেনকে সাহায্য দেয়ার ক্ষেত্রে বৈশ্বিক পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রই শীর্ষে। কিন্তু জিডিপি অনুপাতে দেশটি পঞ্চম স্থানে।
এদিকে অভিযান চালানোর প্রতিশোধ হিসেবে রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে জার্মানি। দেশটির অর্থনীতির ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে মোট জিডিপির আড়াই শতাংশ। শুধু জ্বালানি বাবদই দশ হাজার কোটি ইউরো সমপরিমাণ ক্ষতি হয়েছে জার্মানির। যুদ্ধের জেরে গত এক বছরে প্রত্যেক জার্মান নাগরিকের ঘাড়ে ২ হাজার ইউরো ক্ষতির বোঝা চেপেছে বলে জানান অর্থনীতিবিদরা। জার্মানির মতো ক্ষতির মুখে ব্রিটেনসহ ইউরোপের অনেক দেশই।
রাশিয়া ক্ষতির সঙ্গে সঙ্গে মুনাফাও বেড়েছে
যুদ্ধে কেবল ইউক্রেন বা পশ্চিমারাই ক্ষতিগ্রস্ত নয়, রাশিয়াও অর্থনৈতিকভাবে ব্যয় বাড়িয়েছে। যুদ্ধের নয় মাসে সামরিক খাতে ৮ হাজার ২০০ কোটি ডলার ব্যয় করেছে রাশিয়া। সাম্প্রতিক তিন মাস হিসেবে করলে এই ব্যয় ১০ হাজার কোটি ডলারের অনেক বেশি হবে। যুদ্ধে প্রতিদিন মস্কো ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার শেল ব্যবহার করে। যার প্রতিটির গড় মূল্য এক হাজার ডলার। ইতোমধ্যে রাশিয়ার ধ্বংস হয়েছে, দুই হাজারের বেশি যুদ্ধযান, দুই হাজারের মতো ট্যাঙ্ক এবং ৭৭টি হেলিকপ্টার। এছাড়া ১২টি জাহাজ হারিয়েছে রাশিয়া। আর অন্যান্য বড় সরঞ্জাম ধ্বংস হয়েছে প্রায় ১৫শ'।
রুশ ক্ষতির হিসেব এখানে খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয় অর্থনীতিবিদদের কাছে। কারণ যুদ্ধের কারণে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা পেয়ে তা উপেক্ষা করে কিছু কিছু ক্ষেত্র চুটিয়ে ব্যবসা করছে রাশিয়া। বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়ার কারণে ২০২৪ সালের আগেই রাশিয়া-চীন বাণিজ্য ২০ হাজার কোটি ডলারের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে পারে। গ্রিস, ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান, উত্তর কোরিয়াসহ আরও বেশ কিছু দেশের সঙ্গে ভালো ব্যবসা করছে রাশিয়া। এতে তাদের লাভের পাল্লা অনেক ভারী। ইউক্রেন যেখানে খাদ্য পণ্য রপ্তানি করতে বাধার মুখে, সেখানে রাশিয়া শস্য রপ্তানিতেও এগিয়ে যাচ্ছে।
গবেষকরা আশা প্রকাশ করেছেন, ২০২৩ সালে ক্ষতির পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় কিছুটা কম হবে। কারণ যুদ্ধের কারণে গত বছর বিভিন্ন কাঁচামাল ও জ্বালানি ক্ষেত্রে যে ঘাটতি তৈরি হয়, এ বছর কিছু কিছু ক্ষেত্রে তার বিকল্প বাজারের সন্ধান পাওয়া গেছে।
এমএস