
শাওমি নাকি অ্যাপল কে এগিয়ে এআর যুদ্ধে?
এআর সানগ্লাস প্রযুক্তিতে টেক কোম্পানির যুদ্ধ

শাওমি নিয়ে এলো এআর সানগ্লাস
১১ মার্চ ২০২৩, ১২:২৭
মো. ইমরান , এখন টিভি
আজকের গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি বাজার খবর
কেমন হবে যদি আপনার কম্পিউটার বা টিভির স্ক্রিন চোখের সামনে ভাসতে থাকে এবং এর যাবতীয় কাজ হাতের ইশারায় করতে পারেন তাও আবার একটি সানগ্লাসের মাধ্যমে? টেক জায়ান্ট শাওমি নিয়ে এসেছে এমনই এক প্রযুক্তি অগমেন্টেড রিয়ালিটি বা উদ্দীপিত বাস্তবতার টেকনোলজি যা দিতে পারবে বাস্তব জীবনে কৃত্রিম জগতের অভিজ্ঞতা। এই প্রযুক্তির নাম শাওমি ওয়্যারলেস এ আর সানগ্লাস ডিসকোভারি এডিশন।
এআর টেকনোলজি কী:
প্রশ্ন হলো এ আর টেকনোলজি আসলে কি? ভি আর টেকনোলজির সাথে এর পার্থক্য কোথায়? সহজে বলতে গেলে অগমেন্টেড রিয়েলিটি বা উদ্দীপিত বাস্তবতা মূলত একটি সিস্টেম যা প্রায় সকল আধুনিক স্মার্টফোন, ট্যাবলেট এবং কম্পিউটারে ব্যবহার করা যায়। এই প্রযুক্তি ভার্চুয়াল পরিবেশের কোনো বস্তুকে বাস্তবে দেখানোর সাথে সাথে বিভিন্ন ধরনের সুবিধা দিয়ে থাকে।
যেমন: ধরুন, আপনার টেলিভিশন স্ক্রিনে ইউটিউবের একটি ভিডিও চলছে। ভিডিওটি আপনি চোখের সামনে নিয়ে আসতে পারবেন অর্থাৎ স্ক্রিনের ভিডিও শূন্যে ভাসমান দেখতে পাবেন। ভার্চুয়াল রিয়েলটি বা কৃত্রিম বাস্তবতার সাথে এর মূল পার্থক্য হলো কৃত্রিম বাস্তবতার ক্ষেত্রে ব্যবহারকারী নিজেই কৃত্রিম জগতের অংশ হতে পারে। এই যেমন: কোনো গেইমে নিজেই অংশ নিতে পারা।
শুরুর গল্প:
আজকের এই প্রযুক্তি একদিনেই তৈরি হয়নি। এর ইতিহাস জানতে ফিরে যেতে হবে ১৯০০ সালে। এসময় সর্বপ্রথম মিলিটারি প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহার করা হয় এই টেকনলোজি। কৃত্রিম পরিবেশ সৃষ্টি করে পাইলটদের প্রশিক্ষণ দিতে এটি ব্যবহার করা হয়। এরপর ১৯৬৮ সালে কম্পিউটার বিজ্ঞানী আইভান সাদারল্যান্ড সর্বপ্রথম কম্পিউটারে অগমেন্টেড রিয়ালিটির নকশা তৈরি করেন।
এআর সানগ্লাস প্রযুক্তি ও বাস্তব জীবনের মধ্যে দূরত্ব মেটাতে আরো সহায়তা করবে বলে দাবি করেছে টেক কোম্পানি শাওমি। অগমেন্টেড রিয়ালিটির এই সানগ্লাসে একটি ০.১৩ ইঞ্চির ডিসপ্লে রয়েছে যার মাধ্যমে ব্যবহারকারী একই সময়ে বাইরের পরিবেশের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে পারবে। এই সানগ্লাসে টাচপ্যাড ইনপুট, সাউন্ড ও ভিডিও রেকর্ডিংয়ের সুবিধাও রয়েছে। শুধু তাই নয় ব্যবহারকারীরা চশমার উপর আরো কাস্টমাইজড সুবিধা যেমন: ঘরের বাতি নেভাবো-জ্বালানো ও ফ্যান ছাড়া-বন্ধ করার অভিজ্ঞতা নিতে পারবে।
এখন পর্যন্ত বিশ্বের কয়েকটি কোম্পানি অগমেন্টেড রিয়ালিটি প্রযুক্তি ব্যবহার করে সানগ্লাস তৈরি করেছে। এরমধ্যে মাইক্রোসফটের ‘হলো লেন্স’, গুগলের ‘গুগল গ্লাস’ ও ইপসনের ‘ইপসন মুভিরিও’ উল্লেখযোগ্য। ভার্চুয়াল ট্রেইনিং, চিকিৎসা, নির্মাণক্ষেত্র বিজ্ঞাপন ও গেইমিংসহ নানা কাজে সুবিধার জন্য কোম্পানিগুলো এআর সানগ্লাস তৈরির প্রতিযোগিতায় নেমেছে। মাইক্রোসফটের ‘হলো লেন্সের’ মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা ত্রিমাত্রিক বস্তুর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে। অপরদিকে গুগলের ‘গ্লাস এন্টারপ্রাইজ এডিশন টু’র সানগ্লাস বাণিজ্যিকভাবে কারখানা, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবায় ভূমিকা রাখতে সক্ষম।
এআর সানগ্লাস নির্মাণের দৌড়ে একই সাথে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান কাজ করছে যার জন্যে এদের মধ্যকার প্রাযুক্তিকসহ বিনিয়োগেরও প্রতিযোগিতা দৃশ্যমান। গোটা এআর প্রযুক্তিতে গুগলের বিনিয়োগ ৩৯ বিলিয়ন ডলারের যেখানে ২৬ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে গুগলকে টেক্কা দিচ্ছে অ্যাপল। অপরদিকে মেটার এই খাতে বিনিয়োগ ১০ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ফেইসবুক ও তার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বি স্ন্যাপচ্যাটের বিনিয়োগ যথাক্রমে ৩ হাজার ও ৫ হাজার বিলিয়ন ডলার।
সময়ের সাথে এই এআর সানগ্লাসের মান ভালো করলেও কিছু প্রতিবন্ধকতা থেকেই যাচ্ছে। যেমন: শাওমির এআর গ্লাস ৩০ মিনিট ব্যবহার করেই চার্জ দিতে হয়। এছাড়া গোটা প্রযুক্তিটির স্বাস্থ্য ঝুঁকি তো আছেই। এধরনের সানগ্লাস ব্যবহারের ফলে দৃষ্টি সমস্যা ও মাথা ব্যাথাও হতে পারে। এছাড়া গাড়ি চালানো ও রাস্তায় হাঁটার সময়েও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে এই প্রযুক্তি।
শাওমির এআর গ্লাস এখনো বাণিজ্যিভাবে ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়নি। এটি একটি প্রটোটাইপ বা পরীক্ষামূলক নমুনা শুধু। তবে শুধু শাওমি নয় বিশ্বব্যাপী অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো এর ওপর কাজ করছে। তাই কোনোদিন যদি গুগল, অ্যাপল বা অন্য কোনো কোম্পানির এ আর গ্লাস পরে কেউ ঘোরা ফেরা করে তাহলে অবাক হবার কিছুই নেই।
আইকে