
দেশে অনিয়ন্ত্রিত প্রস্রাবের সমস্যায় ভুগছেন ৬ লাখ মা
৮০ হাজার টাকায় অস্ত্রোপচার করলেই সারানো যায় এই রোগ
মুজাহিদ শুভ , এখন টিভি
০৮ জানুয়ারি ২০২৩, ১৭:৪৩
৩৫ বছর বয়সী রোজিনা। ১০ বছর আগে স্বাভাবিক প্রসবের মাধ্যমে একটি সন্তানসহ মোট দুটি সন্তান জন্ম দিয়েছেন। তবে সন্তান জন্মের সময় জরায়ু মুখের সমস্যা হলেও তেমন একটা পাত্তা দেননি। বিগত দুই বছর ধরে সাধারণ হাচিঁ কাশি বা ভারি কোন কাজ করতে গেলেই প্রস্রাব ঝরতে থাকে। শেষ ৩ দিন থেকে প্রস্রাব বন্ধ হয়ে কিডনি বিকলের উপক্রম হয় রোজিনার।
শুধু না জানার কারণে নারীরা মূত্রঝরা রোগে ভুগে থাকেন বছরের পর পর। স্বাভাবিক প্রসব নারীর জন্য কল্যাণকর হলেও প্রসবকালীন ও প্রসব পরবর্তী জটিলতায় সৃষ্টি হয় স্ট্রেস ইউরিনারি ইনকনটিনেন্স বা মুত্র ঝরা রোগ। ৮০ হাজার টাকা খরচে অস্ত্রোপচার করলেই সারানো যায় এই রোগ। তবে এক্ষেত্রে সবচে বড় সমস্যা দক্ষ সার্জন। জটিল অপারেশনের জন্য নারী ইউরো গাইনোকোলজিস্টদের সংখ্যা বাড়ানোর পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
অন্যদিকে পা পিছলে পড়ে কোমরে আঘাত পান সুলতানা। কমে যায় কোমরের বোধ শক্তি। নিউরো সার্জারির মাধ্যমে কোমরের সমস্যার সমাধান হলেও মুত্র ঝরা রোগে আক্রান্ত হন নতুন করে। পরবর্তীতে ইউরোলজিস্টের শরণাপন্ন হয়ে দুই বছররের দু:সহ যন্ত্রণার সমাপ্তি ঘটে সুলতানার।
তিনি বলেন, ‘ভারি কোন কাজ করতে পারতামনা, এমনকি রান্না ঘরেও যেতে পারতাম না। নিজেকে একটা রুমের ভেতরে আলাদা করে রেখেছিলাম। তখন মানষিকভাবে আমি প্রচুর অসুস্থ্য হয়ে পরি। ভেবেছিলাম আমি মনে হয় আর কখনো ঠিক হবো না।’
অতিরিক্ত ওজন, অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন, বাধাপ্রাপ্ত স্বাভাবিক প্রসব, প্রসব পরবর্তী নিয়মিত বিশেষ ব্যায়াম না করাসহ নানা কারণে মুত্রঝরা রোগে আক্রান্ত হন নারীরা। গবেষণায় এসেছে, স্বাভাবিক প্রসব হওয়া প্রতি এক হাজার মায়ের অন্তত ১১ জনের জরায়ু সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে নিচে নেমে আসে। জরায়ু নেমে আসা ভূক্তভোগীরা প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকের শরণাপন্ন না হওয়ায় ৮/১০ বছর পর মুত্রঝরা রোগে আক্রান্ত হন।
ওজিএসবি’র সাবেক প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক রওশন আরা বেগম বলেন, ‘বাচ্চা প্রসবের পরে একটা মায়ের বিশ্রামে থাকার কথা থাকলেও তিনি তা মানেন না। বাসায় ভারি কাজ করেন। এতে তার শরিরের যে গঠন হওয়ার কথা সেটি না হয়ে তার জরায়ু নিচে নেমে যায়। এর ফলে প্রস্রাব আটকে রাখার যে ক্ষমতা তা আর তাদের থাকে না।’
বাংলাদেশে অন্তত ৫/৬ লাখ মা প্রস্রাব ঝরা বা অনিয়ন্ত্রিত প্রস্রাবের সমস্যায় ভুগছেন। এদের ৮৫ শতাংশই জীবন যাপনের পরিবর্তন ও ওষুধ সেবনের মাধ্যমে সুস্থ হতে পারেন। বাকি ১০ থেকে ১৫ শতাংশের ছোট বড় সার্জারির প্রয়োজন হয়। তবে সিংহভাগ এই সমস্যার সমাধান জানেন না বিধায় তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে সময় কাটান বছরের পর বছর, এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. তাজকেরা সুলতানা চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের দেশের নারীরা অনেক সময়ই প্রস্রাব আটকে রাখে। দেখা যায় বাহিরে গেলে টয়লেট পছন্দ না হলে প্রস্রাব না করে আটকে রাখে। এতে প্রস্রাব যে নিয়ন্ত্রণ করে সেটির ওপর চাপ পরে। এটা পুরুষের ক্ষেত্রের হয়ে থাকে।’
এই সার্জারির খরচ ৭০/৮০ হাজার টাকা হলেও উপযুক্ত সার্জনের অভাবে রোগীরা ভুগতে থাকেন। গাইনি চিকিৎসকদের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকজন এবং ইউরোলজিস্টরা এই সার্জারি করে থাকেন। তবে নারীরা পুরুষ ইউরোলজিস্টের শরণাপন্ন না হওয়ায় জটিলতা মুখ বুঝে সহ্য করেন। সমস্যা সমাধানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ইউরো গাইনোকোলজি বিষয়ে কোর্স চালু করতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ওজিএসবির সাবেক প্রেসিডেন্ট।
ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি চিকিৎসদের ইউরো গাইনোকোলজির বিষয়ে হাতে কলমে বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। তবে বাসা বাড়ির পরিবর্তে স্বাস্থ্য কেন্দ্র বা হাসপাতালে প্রসবের পরিমাণ বাড়ানোর মাধ্যমেও এই রোগ অনেকাংশেই প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
আকন