Ekhon TV :: এখন টিভি

পশ্চিমবঙ্গে নতুন জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, তিস্তা নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে বাংলাদেশের

পশ্চিমবঙ্গে নতুন জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, তিস্তা নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে বাংলাদেশের

দুটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তিস্তা নদীতে পানিপ্রবাহ কমিয়ে দেবে বলে শঙ্কা করা হচ্ছে

১৪ মার্চ ২০২৩, ১৬:২১

এখনটিভি ডেস্ক, এখন টিভি

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকার দার্জিলিংয়ে তিনটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরমধ্যে দুটি প্রকল্প তিস্তা নদীতে পানিপ্রবাহ কমিয়ে দেবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে; বিশেষ করে, ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত যখন বাংলাদেশে সেচের জন্য পানির চাহিদা বেশি থাকে। এই প্রকল্প দুটি তিস্তা নিয়ে বাংলাদেশের সংকট আরও বাড়িয়ে দিতে পারে বলে আভাস দিয়েছে ভারতের ইংরেজি দৈনিক দ্যা টেলিগ্রাফ।

সূত্রের বরাতে সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বড়া রংগিত’ নদীতে তিস্তা লো ড্যাম প্রকল্প ১ (টিএলডিপি) ও ২–এর বিশদ প্রতিবেদন তৈরির প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এ দুই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে যৌথভাবে ৭১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। বালাসন এবং রংভাং নদীতে বালাসন জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বিশদ প্রতিবেদন তৈরির প্রস্তাব একইভাবে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আরও ১০টি ছোট জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বিশদ প্রতিবেদন প্রস্তুতের নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তবে এসব প্রকল্পের সব কটিরই সম্ভাব্যতা যাচাই করতে হবে।

এর মধ্যে টিএলডিপি ১ ও টিএলডিপি ২ প্রকল্প দুটি এমন জায়গায় বাস্তবায়নের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে যেখানে বড়া রংগিত তিস্তা নদীর যে অংশ বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে সেই অংশে যুক্ত হয়েছে।

ভারতের সঙ্গে তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তির জন্য দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষায় আছে বাংলাদেশ। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার কথা থাকলেও, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতায় তা হয়নি।

তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তিতে বিলম্ব নিয়ে কয়েক বছর ধরে দিল্লির কাছে অস্বস্তি প্রকাশ করে আসছে ঢাকা। তবে ভারতের কেন্দ্র ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের টানাপড়েনের কারণে এ নিয়ে কোন অগ্রগতি হয়নি।

ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত শুষ্ক মৌসুমে তিস্তায় পানি সরবরাহ কম থাকলে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জমিগুলোতে সেচ কাজ প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। এতে জমি চাষের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রস্তাবিত জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে শুষ্ক মৌসুমে তিস্তার পানিপ্রবাহ আরও কমে যাবে; যা বাংলাদেশের বিপদ বাড়াবে।

বাংলাদেশের সূত্রের বরাতে টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের সেচ বিভাগ তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পের আওতায় আরও দুটি খাল খননের পরিকল্পনার খবর প্রকাশের পর ঢাকা আরও আশাহত হয়েছে। বাংলাদেশের সূত্রের বরাতে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, এ বছরের শেষের দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে দুই দেশের মধ্যে এ বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।

প্রস্তাবিত জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো নদীভিত্তিক প্রকল্পের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। অর্থাৎ বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য নদী থেকে যে পানি টেনে নেয়া হবে তা আবার নদীতেই ফিরে যাবে। তবে নদী বিশেষজ্ঞ টেলিগ্রাফকে জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত পানি সেচকাজের জন্য পাওয়া যাবে না।

প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এ ধরনের জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে সাধারণত দিনের বেলা নদী থেকে পানি টেনে নেওয়া হয়। সন্ধ্যায় বিদ্যুতের চাহিদা যখন অনেক বেশি থাকে তখন বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সেই পানি ব্যবহার করা হয়। রাতে সেই পানি ফেরত পাঠানো হয় নদীতে। কিন্তু রাতের ওই সময়টাতে সেচের পানির কোনো চাহিদা থাকে না বললেই চলে।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে ঢাকার একটি সূত্র টেলিগ্রাফকে বলেছে, আমরা অনির্দিষ্টকালের জন্য তিস্তা ইস্যুকে ঝুলিয়ে রাখতে পারি না। আমরা এই পানির বৈধ দাবিদার। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- এটি নদীটির বাঁচা মরার প্রশ্নও।

ভারতের নদী বিশেষজ্ঞদের মতে, সেচ ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে তিস্তার পানি এতো বেশি ব্যবহারের দিকে ঝুঁকলে নদীটি শুকিয়ে যেতে পারে। দুটি খাল খননের পেছনে যুক্ত হিসেবে যে সেচের চাহিদার কথা বলা হচ্ছে তাকে বাড়াবাড়ি বলে মনে করেন এক বিশেষজ্ঞ।

তার কথায়, জমে থাকা পলি সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নদীর তলদেশে যথেষ্ট পানিপ্রবাহ থাকতে হবে। জীব-বৈচিত্র্যের জন্যও পানির প্রবাহ গুরুত্বপূর্ণ। সেচকাজ ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য তাড়াহুড়া করতে গিয়ে এই বিষয়গুলো প্রায়ই উপেক্ষা করা হয়।

আক্ষেপ করে ওই নদী বিশেষজ্ঞ বলেন, নদীটিকে বাঁচানোর উপায় নিয়ে খুব কমই আলোচনা হয়।

এমএস

Advertisement
Advertisement
Advertisement