
ডিজিটাল বর্গা মডেলে খামারিদের আয় কোটি টাকা
বিনিয়োগে ঝুঁকি, মহাজনী সুদ বা এনজিওর কিস্তি নেই
হেদায়েতুল ইসলাম বাবু , এখন টিভি
১৩ মার্চ ২০২৩, ১২:৫৭
আদিকাল থেকে চলে আসা সেই বর্গা পদ্ধতির আধুনিক রুপ এখন ডিজিটাল বর্গা মডেল। যেখানে অর্থ বিনিয়োগে ঝুঁকি নেই। নেই মহাজনী সুদ বা এনজিওর কিস্তির ঝুট ঝামেলা। এমন মডেল থেকে কোটি কোটি টাকা আয় করছেন খামারিরা।
বগুড়া সদরের নামুজা, মীর আলম, জুয়েল, সাজুর মতো খামারিরা বেশ যত্ন করে পালন করছেন গবাদিপশু। মহাজনী সুদ বা কোন এনজিও থেকে নিতে হয়নি ঋণ। তাদের মতো গ্রামের ২৩ জন খামারি ডিজিটাল বর্গা মডেলে জামানত ছাড়াই পেয়েছেন প্রায় অর্ধকোটি টাকার গরু। গবাদিপশুর চিকিৎসাও মিলছে বিনাখরচে।
খামারীরা বলেন, ‘তাদের গরু আমরা পালন করছি, এই গরুর চিকিৎসার জন্য আমরা তাদের সহযোগীতা পেয়ে থাকি। পরে যখন গরু বিক্রি করা হয় তখন তাদের অংশ তারা নেবেন আর আমাদেরটা আমরা নিয়ে থাকি।’
সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নাটোর, বগুড়াসহ ১০ জেলায় বাস্তবায়ন হচ্ছে উইগ্রো টেকনোলোজিসের ডিজিটাল বর্গা মডেল। এই মডেলে মাত্র ছয়মাস গরু লালন পালন করে আড়াইশ খামারি লাভ করেছে প্রায় দেড় কোটি টাকা। আসছে কোরবানির ঈদে বিক্রয় উপযোগী আরও অন্তত ৭ কোটি টাকার গরু আছে চারশো খামারির কাছে। কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা রোগ বালাইয়ের ঝুঁকি মোকাবেলায় বীমার আওতায় নেয়া হয়েছে খামারিদের।
উইগ্রো টেকনোলোজিস লিমিটেডর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠাতা মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘আমরা কিন্তু কৃষকদের সুদে কিছু দিচ্ছি না, তাদের বিনিয়োগে দিচ্ছি। এর মাধ্যমে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে। অন্যদিকে তারা ডিজিটাল প্লাটফর্মে চলে আসছে। তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হচ্ছে।’
উইগ্রো টেকনোলোজিস লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কার্যনির্বাহী আলভী রহমান বলেন, ‘কৃষকদের খামারে যদি কোন গরু মারা যায় তাহলে সেই গরু ময়না তদন্ত করা হয়। এরপরে কৃষকদের নামে যে বীমা রয়েছে সেই বীমা কোম্পানি মৃতগরুর ক্ষতিপূরণ দিয়ে থাকে। এবং তা ১৪ দিনের মধ্যে সেই ক্ষতিপূরণ পেয়ে যাই।’
উইগ্রোর ডিজিটাল বর্গা মডেলের পুরোটাই প্রযুক্তি নির্ভর। পুরোপুরি ওয়েবসাইট বা অ্যাপসের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে মডেলটি।
শুরুতে ৩০০ মানুষ যৌথ বিনিয়োগ করেন ১৭ কোটি টাকা। কৃষকের ভাগ্যোন্নয়নে এমন উদ্যোগের সারথী এখন ইউনাইটেড কমার্স ব্যাংক। উইগ্রোর মাধ্যমে ডিজিটাল বর্গা মডেলে কৃষি ঋণ হিসেবে বিনিয়োগ করছে ব্যাংকটি।
ইউসিবি ব্যাংকের কোম্পানী সচিব ও উপ মহাব্যবস্থাপক এটিএম তাহমিদুজ্জামান বলেন, ‘কৃষিকে যদি আধুনিক করা যায় তাহলে আমাদের কৃষকরা অনেক লাভবান হবেন। উইগ্রো কৃষকদের জন্য যে নতুন ধারা তৈরি করেছে, আমরা মনে করেছি যে তাদের সঙ্গে আমাদেরও থাকা প্রয়োজন।’
উইগ্রো'র তথ্যমতে বছরে দেশের কৃষকের প্রয়োজন হয় ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। তার মধ্যে ৮০ হাজার কোটি টাকা কৃষককে ধারদেনার মাধ্যমে সংস্থান করতে হয়। ঋণের জ্বাল থেকে কৃষকের মুক্তি ও বিনিয়োগ ছাড়াই অর্থ উপার্জনে কাজ করছে ডিজিটাল বর্গা মডেল।
আকন