
এলপিজির চেয়ে কম দামে বায়োগ্যাস বিক্রি করছেন চট্টগ্রামের খামারিরা
গবাদিপশুর বর্জ্য থেকে চলছে ৯০০টি বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট
কাজী মাহফুজ , এখন টিভি
০২ মার্চ ২০২৩, ১৪:১১
চট্টগ্রামে গবাদিপশুর বর্জ্য থেকে চলছে ৯০০টি বায়োগ্যাস প্লান্ট। জ্বালানি আর সিলিন্ডার গ্যাসের উর্ধ্বমূখী দামে যখন দিশেহারা অবস্থা তখন ব্যতিক্রমী উদাহরণ তৈরি করেছে কর্ণফূলীর পশু খামারিরা। ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডার ১ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হলেও বায়োপ্লান্টের গ্যাস মিলছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায়। দুর্ঘটনার ঝুঁকি কম আর পরিবেশবান্ধব হওয়ায় বাড়ছে এ গ্যাসের চাহিদা। আর খামারিরাও মাসে আয় করছেন ৪০ লাখ টাকা।
চট্টগ্রামের কর্ণফূলী নদীর পাড়ে গড়ে উঠা উপজেলা কর্ণফুলীতে ১ হাজার ৪০০ খামারে গরুর সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার।
প্রতিদিন এসব গবাদি পশু থেকে সাড়ে তিন হাজার টন গোবর আর ২ লাখ টন গো মূত্র তৈরি হয়। বিপুল এ বর্জ্যের দুর্গন্ধে ব্যাপকভাবে দূষিত হচ্ছিল কর্ণফুলীর পরিবেশ। খামারিরা ভেবে পাচ্ছিলেন না কী করবেন। আর সে ভাবনা থেকেই কয়েক বছর আগে বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরি শুরু করেন কয়েকজন উদ্যাক্তা। ৫ বছরের ব্যবধানে উপজেলায় ছোট বড় মিলিয়ে বায়োপ্লান্ট গ্যাসের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯০০ টিতে। যেখান থেকে সংযোগ নিয়ে দৈনন্দিন রান্না সারছেন উপজেলার প্রায় ৪ হাজার পরিবার। আর খামারীরা গ্যাস বিক্রি করে আয় করছেন মাসে প্রায় ৪০ লাখ টাকা।
বায়োগ্যাস প্রকল্প মালিকরা বলেন, ‘আমরা এই বায়োপ্লান্ট গ্যাস প্লান্ট থেকে গ্যাস উৎপাদন করে বহু বাসাবাড়িতে সংযোগ দিয়েছি। এইসব বাসা বাড়ি থেকে প্রতিমাসে ৬০০ টাকা হারে পেয়ে থাকি। এই গ্যাস প্লান্টের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এটায় গ্যাস সিলিন্ডারের মত বিস্ফোরণের ঝুঁকি নেই।’
এ গ্যাস একদিকে পরিবেশ বান্ধব অন্যদিকে মূল্য সাশ্রয়ী। কিছুদিন ধরে সিলিন্ডার গ্যাসের বাজার অস্থির। তাই এ গ্যাসরে চাহিদা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। বাজারে ১২ কেজি ওজনের এলপিজি সিলিন্ডার ১ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হলেও বায়োগ্যাস প্ল্যান্টে গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে ১ হাজার থেকে ১৩০০ টাকার। প্রতিটি সংযোগে পুরো মাস পাওয়া যায় আনলিমিটেড গ্যাস। নেই দুর্ঘটনার ঝুঁকিও।
ব্যবহারকারীরা বলেন, ‘গ্যাস সিলিন্ডারের থেকে এই গ্যাস অনেক ভালো। সিলিন্ডারের থেকে অর্ধেক খরচে আমাদের পরিবারের পুরো মাসের রান্না হয়ে যায়।’
উদ্যাক্তার জানান, ছোট পরিসরে ৪টি গরুর বর্জ্যের প্লান্ট স্থাপনে খরচ হয় ৩০-৩৫ হাজার টাকা। বর্জ্য সরবরাহ সচল থাকলে এক একটি প্লান্ট স্থায়ী হয় দীর্ঘ সময়। পাশাপাশি প্লান্টের ব্যবহৃত বর্জ্যের উচ্ছিষ্টরও আছে আর্থিক মূল্য। যা বাজারে বিক্রি হয় জৈবসার হিসেবে। উপজেলায় খামারিদের প্লান্ট স্থাপনে উদ্ধুদ্ধ করছে স্থানীয় প্রশাসন।
কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মামুনুর রশীদ বলেন, ‘এই এলাকায় অনেকগুলো বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরি হয়েছে। এতে এর উচ্ছিষ্ট থেকে তৈরি হচ্ছে সার। এছাড়া এই প্লান্টের মাধ্যমে অনেকের কর্মসংস্থানও হয়েছে।’
উদ্যাক্তারা মনে করেন, খামার থেকে বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপন করে জৈব জ্বলানী তৈরির এ মডেল সারাদেশে ছড়িয়ে দিলে গ্যাসের চাহিদা কমিয়ে আনা সম্ভব।
আকন