
সেন্সর বোর্ডের অদৃশ্য জালে চাকমা ভাষার প্রথম সিনেমা

ম থেঙ্গারি
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৬:৪৬
এখনটিভি ডেস্ক, এখন টিভি
'ম থেঙ্গারি' ইংরেজিতে যার মানে দাড়ায় 'মাই বাইসাইকেল'। বিলুপ্ত হতে যাওয়া চাকমা ভাষায় প্রথম সিনেমা বানানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন অং রাখাইন। দশ বছর আগে থেকেই সেই স্বপ্নপূরণের চেষ্টায় ব্যতিব্যস্ত তিনি। অক্লান্ত পরিশ্রমে তৈরি করেন একটি সিনেমা। বেশকিছু বিদেশী ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল থেকে সিনেমাটি জিতেছিল পুরস্কারও।
সিনেমার কাহিনী এক চাকমা তরুণকে ঘিরে। কমল নামের এই চাকমা তরুণ শহরে কাজ করত। কিন্তু চাকরি হারিয়ে প্রায় নিঃস্ব হয়ে কেবল একটি সাইকেল নিয়ে তার পাহাড়ের জন্মস্থানে ফিরে আসে। তার শেষ সম্বল ছিল কেবল এই বাইসাইকেল। কমল শহরে না গিয়ে, এই বাইসাইকেল দিয়েই জীবন নির্বাহ শুরু করে। কিন্তু এলাকার প্রভাবশালীরা একসময় ভেঙ্গে দেয় তার প্রিয় সাইকেলটি।
পরিচালক অং রাখাইন ১০ বছর ধরে এই চলচ্চিত্র নিয়ে ভেবেছিলেন। অবশেষ তিনি ২০১২ সালে এর শুটিং শুরু করেন। নিজে রাখাইন সম্প্রদায়ের হলেও তিনি চাকমা সম্প্রদায়ের উপর এই চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছেন।
২০১৪ সালের ডিসেম্বরে ঢাকার একটি চলচ্চিত্র উৎসবে প্রথম চলচ্চিত্রটি প্রদর্শন করা হয়। এছাড়া ঘরোয়াভাবে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে প্রদর্শন করা হয় সিনেমাটি। বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক উৎসবে সিনেমাটি স্বীকৃতি পায়। রাশিয়ার একটি চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা চিত্রনাট্যের জন্য পুরস্কারও জিতেছে 'ম থেঙ্গারি'।
কেবল দেশের সেন্সর বোর্ডের অদৃশ্য বেড়াজালে আটকে আছে সিনেমাটি। ২০১৫ সালে সিনেমাটি সেন্সর বোর্ডে প্রথম জমা দেন অং রাখাইন। প্রথমে সিনেমার একটি দৃশ্য কর্তন করতে বলে সেন্সর বোর্ড। ছাড়পত্র পাওয়ার আশায় ২০ সেকেন্ডের দৃশ্যও কর্তনও করেছিলেন পরিচালক। পরবর্তীতে ৬৪ মিনিটের এই সিনেমা থেকে আরও প্রায় ২৫ মিনিটের দৃশ্যে ছুরি চালাতে বলা হয় অং রাখাইনকে।
২০১৬ সালে শেষবারের মতো সেন্সর বোর্ডের সঙ্গে কথা বলেছেন অং। ২৫ মিনিট দৃশ্য কর্তনের যৌক্তিকতা জানতে দফায় দফায় সেন্সর বোর্ডের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন অং রাখাইন। এভাবে কেটে গেছে ৮ বছর। কয়েকবার পরিবর্তন হয়েছে সেন্সর বোর্ডের চেয়ারম্যান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি চাকমা ভাষার একমাত্র সিনেমা 'ম থেঙ্গারি'।
কেএফ