
দুলু থেকে মিয়াভাই

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রাঙ্গনের সবচেয়ে সফল নায়কদের একজন ছিলেন ফারুক
১৫ মে ২০২৩, ১২:০০
শাহীনূর সরকার, এখন টিভি
নিজ পরিচয়ে আকবর হোসেন পাঠান দুলু হলেও চলচ্চিত্রপাড়ায় রূপালীপর্দার নায়ক ফারুকের পরিচয় মিয়াভাই হিসেবে। দেশের চলচ্চিত্রের সুদিনে শুধুমাত্র নায়ক হিসেবেই টানা দুই দশক দাপিয়ে বেড়িয়েছেন এই অভিনেতা।
তার সিনেমার বহু গান এখনো সব বয়সীদের মনে দোলা দেয়। যেমন- 'সব সখিরে পার করিতে নেবো আনা আনা' গানটি।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে যে কয়জন অভিনেতা সবচেয়ে বেশি সফল হয়েছেন তাদের অন্যতম নায়ক ফারুক। বাংলা চলচ্চিত্রের এই সাহেবের জন্ম ১৯৪৮ সালের ১৮ আগস্ট মানিকগঞ্জে। পাঁচ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট ফারুক।
১৯৭১ সালে এইচ আকবরের ‘জলছবি’ সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক ফারুকের। এই ছবিতে তার বিপরীতে নায়িকা ছিলেন সারাহ বেগম কবরী।
১৯৭৩ ও ৭৪ সালে অভিনয় করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক চলচ্চিত্র ‘আবার তোরা মানুষ হ’ ও ‘আলোর মিছিল’ সিনেমায়।
পরের বছরই প্রথমবারের মতো তার অভিনয় জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্য আসে। পরিচালক প্রমোদ করের সুজন সখী ও নারায়ণ ঘোষের লাঠিয়াল চলচ্চিত্র ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা পায়।
লাঠিয়াল চলচ্চিত্র ফারুককে এনে দেয় শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের সম্মাননা। তখনও বয়স ৩০ পেরোয়নি ফারুকের। সুজন সখী আর লাঠিয়ালের ব্যাপক সাফল্যের পর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। নায়ক হিসেবে পরিচালক ও প্রযোজকের চাহিদার প্রথম সারিতে চলে আসেন ফারুক।
সূর্যগ্রহণ, মাটির মায়া, নয়নমণির মতো সিনেমা দিয়ে দর্শকমনে জায়গা বেশ পোক্ত করে ফেলেছিলেন তিনি। ১৯৭৮ সালে দেশের চলচ্চিত্রকে উপহার দেন আরো দুটি হিট ছবি। সারেং বৌ ও গোলাপী এখন ট্রেনে।
১৯৭৯ সালে শুধুমাত্র একবছরেই ব্যবসাসফল হয় তার অভিনীত ছবি নাগরদোলা, কথা দিলাম, মাটির পুতুল, সাহেব, ছোট মা, এতিম, ঘরজামাই, দিন যায় কথা থাকে সহ বেশ কয়েকটি সিনেমা।
১৯৮৭ সালে মিয়াভাই সিনেমার মাধ্যমে দর্শকদের কাছে নতুন পরিচিতি পান ফারুক। চলচ্চিত্রাঙ্গন ও দর্শকদের কাছে তিনি হয়ে ওঠেন মিয়াভাই। চার দশকের ক্যারিয়ারে শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন ফারুক। চলচ্চিত্রে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে আজীবন সম্মাননা প্রদান করেন।
ফারুকের শৈশব ও কৈশোর কেটেছে পুরান ঢাকায়। ছাত্রজীবন থেকেই রাজনৈতিক অঙ্গনে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। যোগ দিয়েছেন ছয় দফা আন্দোলনে। অংশ নিয়েছেন স্বাধীনতা যুদ্ধে। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৭ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ফারুক।
ব্যক্তিগত জীবনে ভালোবাসার সংসারে রয়েছেন স্ত্রী ফারজানা ও দুই সন্তান মেয়ে ফারিহা তাবাসসুম ও ছেলে রওশন হোসেন।
অভিনয় ও রাজনীতির বাইরে নিজের শিল্প প্রতিষ্ঠান ফারুক নিটিং ডাইং অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন চলচ্চিত্রের এই মিয়াভাই।
এমএস