
ইন্দোনেশিয়ায় ভোর ৫টায় স্কুল চালু, বিক্ষুব্ধ অভিভাবকরা

গভর্নরের বিতর্কিত সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় আইনপ্রণেতারা
১৬ মার্চ ২০২৩, ১১:৫৪
এখনটিভি ডেস্ক, এখন টিভি
আঁধারে ছেয়ে আছে চারদিক, গভীর ঘুমে পুরো শহর। এমন সময়ে ব্যাগ কাঁধে স্কুলের দিকে ছুটছে একদল শিক্ষার্থী। ইন্দোনেশিয়ার ইস্ট নুসা তেঙ্গারা প্রদেশের রাজধানী কুপাংয়ে সূর্যের আগেই ঘুম ভাঙছে ১০টি উচ্চ বিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণিপড়ুয়াদের।
ভোর সাড়ে ৫টায় শুরু স্কুল। ইন্দোনেশিয়ার একটি শহরে শিক্ষার্থীদের ওপর পরীক্ষামূলক এমন পাইলট প্রকল্প শুরুর ঘটনায় ছড়িয়েছে ক্ষোভ। খোদ স্থানীয় আইনপ্রণেতারা, এমনকি কেন্দ্রীয় শিশু সুরক্ষা মন্ত্রণালয়ও গভর্নরের এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে। কিন্তু সব সমালোচনা উপেক্ষা করে স্কুলশিক্ষার্থীদের ওপর পরীক্ষাটি চালু রেখেছে স্থানীয় সরকার।
কুপাং গভর্নর ভিক্টর লাইসকোদাতের সিদ্ধান্তে সম্প্রতি শহরের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নিয়ে শুরু হয় একটি পাইলট প্রকল্প, যার আওতায় ভোর সাড়ে ৫টার মধ্যে ক্লাসে থাকতে হয় তাদের। অথচ দেশের বাকি অঞ্চলে ক্লাস শুরুর সময় সকাল ৭টা/৮টা, ছুটি হয় বিকাল সাড়ে ৩টার আগে-পরে।
শিশুদের নিয়মানুবর্তি করার লক্ষ্যে এ উদ্যোগ বলে প্রশাসন জানালেও ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা। তারা বলছেন, অসম্পূর্ণ ঘুমের পর ক্লাসের ধকল শেষে ক্লান্ত-বিধ্বস্ত হয়ে বাড়ি ফিরছে সন্তানরা।
তারা বলেন, ‘গাঢ় অন্ধকারে বাচ্চারা ঘর ছেড়ে বের হচ্ছে। সুনশান রাস্তায় স্কুলে যাওয়ার পথে তাদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তাও নেই। মা হয়ে কীভাবে মেনে নিই?’
সাড়ে ৫টায় স্কুলে উপস্থিত হতে রাত ৪টার মধ্যে বিছানা ছাড়তে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। গভর্নরের বিতর্কিত এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন খোদ স্থানীয় আইনপ্রণেতারা, বিষয়টি সুরাহায় চেয়েছেন কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ। নীতি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে ইন্দোনেশিয়ার নারী ক্ষমতায়ন ও শিশু সুরক্ষা মন্ত্রণালয়ও। কিন্তু সব সমালোচনা উপেক্ষা করে স্কুলশিক্ষার্থীদের ওপর পরীক্ষাটি চালু রেখেছে স্থানীয় সরকার।
এসএমএ নেগেরি সিক্স কুপাংয়ের অধ্যক্ষ হেন্দ্রিকুস হাতি বলেন, ‘শিক্ষাক্রম অনুযায়ী সাড়ে ৫টার মধ্যে পড়া শুরু হচ্ছে বাচ্চাদের। এর ফলে তাড়াতাড়ি স্কুল শেষ করে বাড়িও ফিরতে পারছে তারা। এতে তাদের ক্লান্ত হওয়ারও সুযোগ থাকছে না।’
আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব পেডিয়াট্রিকসে প্রকাশিত ২০১৪ সালের এক গবেষণা বলছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ক্লাস সাড়ে ৮টা বা তার পরে শুরু হওয়া উচিত। এতে তারা পর্যাপ্ত ঘুমের সময় পায়। কুপাং প্রশাসনের এ প্রকল্পে কোনো সুফল মিলবে না বলে সমালোচনা করছেন শিক্ষাবিদরাও।
ইন্দোনেশিয়ার শিক্ষাবিদ মার্সেল রোবোট বলেন, ‘ভোর ৫টা, সাড়ে ৫টায় ক্লাস শুরু করার সাথে শিক্ষার মানোন্নয়নের কোনো সম্পর্ক নেই। গভর্নর বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পাইলট প্রকল্প হিসেবে ছোট পরিসরে এ নিয়ম চালু করলেও গবেষণার ভিত্তিতে সেটি করা উচিত।’
অবশ্য কোনো বিতর্ক বা সমালোচনা গায়ে মাখছে না কুপাং প্রশাসন। উল্টো স্থানীয় সরকারের শিক্ষাবিষয়ক সংস্থায় কর্মীদের কাজের সময় ভোর সাড়ে ৫টায় এগিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে।
আকন