
ছয় দশকেও বাড়েনি কারিগরি শিক্ষার মান
শম্পা বিশ্বাস , এখন টিভি
১৫ মার্চ ২০২৩, ১১:০০
দেশে দক্ষ জনবল তৈরিতে কারিগরি কাজের কোনো বিকল্প নেই। তাই স্বীকৃতিপ্রাপ্ত দক্ষ জনবল তৈরির প্রতিষ্ঠান রয়েছে দেশজুড়ে। ৪র্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ২০৪১ সালে সরকারের লক্ষ্য শতকরা ৫০ ভাগ শিক্ষার্থীকে কারিগরি শিক্ষা দেয়া।
বর্তমানে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এ শিক্ষার্থীদের দক্ষ করতে পারলে দেশের পাশাপাশি তাদেরকে দক্ষ জনশক্তিরূপে রপ্তানি করা সম্ভব বলে মনে করেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকেরা।
ইনস্টিটিউটের শিক্ষক তৌহিদ উদ্দিন বলেন, দেশে তো আমাদের ডিমান্ড আছেই। এছাড়াও অনেকে বিদেশে যাচ্ছে ভালো আয়ের জন্য।
একজন শিক্ষার্থী বলেন, আমি মনে করি এই লাইনে শিখলে আমাদের বেকারত্ব কমবে।
প্রতিষ্ঠানের আরেকজন শিক্ষার্থী বলেন, অন্যান্য দেশের সাথে কাজের দিক থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য কারিগরি শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই।
সরকারি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চিত্রের সাথে ভিন্নতা রয়েছে বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের। হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে রয়েছে কিছুটা সুযোগ সুবিধা। বাকিগুলোতে ল্যাব, দক্ষ শিক্ষকসহ রয়েছে নানা সংকট।
খাজা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের একজন শিক্ষার্থী বলেন, ভালো যন্ত্রপাতি দেওয়া হলে আমাদের অনেক সুবিধা হতো। আমরা আরও ভালো শিখতে পারতাম।
আরেকজন শিক্ষার্থী বলেন, ল্যাবের মধ্যে যত বেশি যন্ত্র থাকবে আমাদের শেখার আগ্রহ তত বাড়বে। হাতে-কলমে শেখাটাও বেশি হবে।
প্রতিষ্ঠানটির প্রিন্সিপাল এস এম বেলায়েত হোসেন এখন টিভিকে বলেন, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত কোনো বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এমপিওভুক্ত হয়নি। এ কারণে ভালো কোনো শিক্ষক বা মেধাবীরা এই লাইনে আসে না। কারণ ভবিষ্যত নেই এখানে। যার কারণে এখানে তারা আসতে চান না।
বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ এম এ সাত্তার বলেন, দেশের বাইরে গেলে তারা যে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে তা খুবই ঈর্ষণীয় বিষয়। যেটা কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ না করে যারা বিদেশে যাচ্ছে তারা এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত।
বর্তমানে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে প্রায় ৮ হাজার প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৭ হাজার। জাতীয় লক্ষ্য অর্জনের বিষয়ে বোর্ডের কর্মতৎপরতা সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রথমে সম্মতি মেলে কর্তৃপক্ষের। কিন্তু কার্যালয়ের সামনে গেলে নানা অজুহাতে এড়িয়ে যান তিনি।
বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. কেপায়েত উল্লাহের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, স্যার নেই। সচিব স্যারও নেই। আমাদের সিকিউরিটি আজকে কাউকে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না।
কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে সরকার ২০২০ সালের মধ্যে কারিগরি শিক্ষার্থী ২০ শতাংশ এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। এছাড়া ২০২১ থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কারিগরি বিষয় অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে করোনার কারণে তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এখন টিভিকে বলেন, সনাতন পদ্ধতির উচ্চশিক্ষার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকি তাহলে দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরি করা শুধু চ্যালেঞ্জের হবে না, অসম্ভব হবে। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধিক্ষেত্রটা অনেক বেশি বিস্তৃত।
কারিগরি শিক্ষার সম্প্রসারণ ও মানোন্নয়নের মাধ্যমে দক্ষ মানব সম্পদ সৃষ্টির লক্ষ্যে দেশে কারিগরি শিক্ষার সূচনা হয়। গত অর্ধ শতকে কারিগরি শিক্ষা ও প্রশাসনের বহু শাখা-প্রশাখার বিস্তার ঘটেছে। কিন্তু পরিসংখ্যানে এগিয়ে গেলেও বাস্তবে আগায়নি কারিগরি শিক্ষার মান।
আরএন