
দেড় হাজার শিক্ষকের পদ শূন্য
শিগগিরই আসছে মাধ্যমিক শিক্ষক নিয়োগ
ফরহাদ বিন নূর , এখন টিভি
০২ মার্চ ২০২৩, ১৩:১০
সারাদেশে সাড়ে ৬০০ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৬ লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর জন্য ১৩ হাজার শিক্ষকের পদ থাকলেও শূন্য রয়েছে দেড় হাজার পদ। নতুন পাঠক্রম চালু হওয়ায় শিক্ষক সংকটে হিমশিম খাচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো। আরও পদ সৃষ্টি করাসহ শূন্যপদে দ্রুত নিয়োগ দেয়ার তাগিদ শিক্ষাবিদদের।
তবে মাউশি বলছে, শিগগির মাধ্যমিকে শিক্ষক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি আসবে। আর নতুন পাঠ্যক্রম সব শ্রেণিতে চালু হওয়ার আগেই আরও সহকারী শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করা হবে।
রাজধানীর ‘ধানমন্ডি গভ. বয়েজ হাই স্কুল’। এখানে মোট শিক্ষকের সংখ্যা ৫১ জন হলেও ৭ জন শিক্ষকের পদ এখন শূন্য। তাই শিক্ষক সংকটে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ব্যাহত। আর ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীরা। প্রতিষ্ঠান সূত্র বলছে, আগামী দুয়েক মাসে অবসরে যাবেন আরও বেশ কয়েকজন শিক্ষক।
শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘শিক্ষক সংকটের কারণে আমাদের ক্লাসগুলো ভালো করে হচ্ছে না।’
এই বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী ২ হাজার ৭০০। এতো সংখ্যক কিক্ষার্থীকে কীভাবে সামাল দিচ্ছে এই প্রতিষ্ঠান? দিবা শাখার সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. ওয়াহিদুজ্জামান জানান, শিক্ষক সংকটে পাঠদান করাতে হিমশিম অবস্থা তাদের। এক বিষয়ের শিক্ষক দিয়ে অন্য বিষয়ের ক্লাসও নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
সারাদেশে সাড়ে ৬০০ এর উপরে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। প্রায় সবখানেই রয়েছে এমন শিক্ষক সংকটের চিত্র। সহকারী শিক্ষকের পদ সংখ্যা ১৩ হাজার হলেও বর্তমানে কর্মরত মাত্র সাড়ে ১১ হাজার। শূন্য পদের সংখ্যা এখন দেড় হাজার।
সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে ৬ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী। এতো শিক্ষার্থীর বিপরীত যে অল্প সংখ্যক শিক্ষক আছে তা যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন প্রতিষ্ঠান প্রধানরা। অবসর ও মৃত্যসহ বিভিন্ন কারণে শূন্য পদের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। তাই পাঠদান ব্যাহত হবার শঙ্কা আরও দীর্ঘ হচ্ছে।
আজিমপুর গার্লসের অধ্যক্ষ অধ্যাপক গীতাঞ্জলি বড়ুয়া বলেন, ‘এমনিতেই মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষকদের ৪ থেকে ৫টি করে ক্লাস নিতে হয়। বিশেষ করে বাংলার শিক্ষকের খুবই সংকট।’
শিক্ষাবিদরা বলছেন, নতুন কারিকুলাম চালু হওয়ায় এই সংকট আরও প্রকোট। মাধ্যমিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নতুন করে আরও পদ সৃষ্টি করতে এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিয়োগ দেয়ার তাগিদ তাদের।
গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে. চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় উদ্যোগী হবেন সব শূন্য পদ পূরণে এবং নতুন পদ সৃষ্টিতে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. এস এম হাফিজুর রহমান বলেন, ‘যেখানে যতজন শিক্ষক প্রয়োজন সেখানে ততজন শিক্ষক দিতে হবে। নাহলে শিক্ষকদের কাছ থেকে শিক্ষার্থীরা যে জ্ঞান পাওয়ার কথা সেটা থেকে তারা বঞ্চিত হবে।’
সবশেষ ২০২১ এর জানুয়ারিতে ২ হাজার ১৫৫ জনকে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদের জন্য সুপারিশ করা হলেও এরপর আর কোনো বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে পারেনি বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন।
সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জন্য ইতোমধ্যে ১ হাজার ৯৯টি শূন্য পদে নিয়োগের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চাহিদা পাঠিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর।
অধিদপ্তর বলছে, যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে রয়েছে। খুব শিগগির সরকারি মাধ্যমিকের শিক্ষক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি আসবে। তবে এবার আগে মফস্বলের বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক সংকট দূর করা হবে, এরপর শহরের কথা ভাববে সরকার।
মাউশি’র মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, ‘শিক্ষক সংকট দূর করতে কার্যক্রম চলছে। আশা করি খুব শিগগিরই এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’
মাউশি বলছে, নতুন পাঠ্যক্রম সব শ্রেণিতে চালু হওয়ার আগেই নতুন করে আরো সহকারী শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করা হবে। যাতে করে পাঠদানে হিমশিম খেতে না হয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে।
আকন