
কৃষি ছাপিয়ে রংপুর বিভাগজুড়ে শিল্পায়নমুখী অর্থনীতি
নাজমুল ইসলাম নিশাত, এখন টিভি
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৩:৪৪
কৃষক বকুল চন্দ্র ২০ শতক জমিতে ফুলকপি আবাদ করেছেন। একটা সময় এই জমিতে ধান ও গম আবাদ করলেও গেল পাঁচ বছর ধরে করছেন সবজি চাষ। জানালেন, আবহাওয়া ভালো থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। খরচের তুলনায় সবজি চাষে মুনাফাও ভালো। বকুল চন্দ্রের মতোই অনেক কৃষকের এমন ব্যস্ততা চোখে পড়ে। তারা জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় এখন সবজি বিক্রি করতে কোন দুর্ভোগ নেই।
সবজি ছাড়াও প্রতি বছর রংপুর বিভাগে যে ধান উৎপাদন হয় তা খাদ্য চাহিদার ২০ শতাংশ পূরণ করে। সবজি, ধান ছাড়াও ভূট্টার বড় জোগান এখন রংপুর বিভাগ।
এখন বৈচিত্রে ভরা রংপুর অঞ্চলের কৃষি। একটা সময় এই অঞ্চলের কৃষকদের ধানই প্রধান ফলষ ছিলো। তবে গেল এক যুগে সেই দৃশ্যপট পাল্টেছে। এখন কৃষকরা নানা ধরনের ফল ফসল উৎপান করে চাঙ্গা করছেন নিজস্ব অর্থনীতি। একইসঙ্গে যোগান দিচ্ছেন দেশীয় চাহিদার। কোন ফসল কোন সময় উৎপাদন করতে হবে এখন কৃষকরা সেই সিদ্ধান্ত নিজেরাই নিতে শিখেছেন। এর ফলে যেমন স্থানীয় অর্থনীতি মজবুত হচ্ছে, একই সাথে সমৃদ্ধ হচ্ছে জাতীয় অর্থনীতিও।
গেল একযুগে কৃষির পাশাপাশি গতি পেয়েছে এই বিভাগের শিল্প খাতও । নীলফামারী উত্তরা ইপিজেড স্থাপনের মধ্যদিয়ে এই অঞ্চলে শুরু হয় শিল্পের পদধ্বনি। ইপিজেডে গড়ে উঠেছে ২৪টি রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান। যেখানে কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে ৩০ হাজার মানুষের। বর্তমানে বিভাগে শুধু ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাই আছে ৪ লাখেরও বেশি।
হাজিগঞ্জ হ্যান্ডিক্রাফটস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ আহম্মেদ উল্লাহ বলেন, 'ইউরোপসহ আমেরিকা বা অন্যান্য যেসব দেশে আমরা পণ্য রপ্তানি করি সেখানে আমাদের দেশের এসব পণ্যের চাহিদা বাড়ছে এবং বেশ সুনাম অর্জন করছে।'
সাড়ে ষোলো হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এলেঙ্গা থেকে রংপুর পর্যন্ত ১৯০ কিলোমিটার ছয় লেন মহাসড়কের কাজ চলছে দ্রুতগতিতে। শেষ হবার কথা ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে। এরইমধ্যে মহাসড়কের ৬৫ শতাংশ কাজই শেষ হয়েছে। এছাড়া রংপুর থেকে বুড়িমারী পর্যন্ত হবে আরও একটি ছয় লেন সড়ক। এর ফলে উত্তরাঞ্চলের শিল্প বাণিজ্যে যেমন গতি ফিরবে, একইসঙ্গে বুড়িমারী ও বাংলাবান্দা স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিবেশি দেশ ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এই মহাসড়কটি।
এছাড়াও ১হাজার ১শ৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে চলছে বগুড়া-রংপুর-সৈয়দপুর গ্যাস সঞ্চালন পাইপ লাইন প্রকল্পের কাজ । পাইপ লাইন বসানোর কাজ শেষ হয়েছে ৯৮ শতাংশ আর প্রকল্পের সামগ্রিক অগ্রগতি ৮৫ শতাংশ । চলতি বছরের জুনে শেষ হবার কথা রয়েছে পাইপ লাইন কমিশনিং এর কাজ । কাজ শেষ হলে উত্তরের ১১ জেলা পাবে গ্যাসের সুবিধা।
বিভাগে রংপুর, নীলফামারী, পঞ্চগড় ও দিনাজপুরে চারটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রক্রিয়াধীন। এরইমধ্যে দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল অনুমতি পেয়েছে । চলছে ভূমি অধিগ্রহনের কাজ ।
রংপুর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি'র পরিচালক রিয়াজ শহীদ বলেন, 'যানজটমুক্ত রাস্তা হয়ে যাচ্ছে। গ্যাসও আসছে। নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎও পাবে এরা। গ্যাসের স্বল্পতা থাকলে ভারত থেকে গ্যাস নেওয়ারও সম্ভাবনা আছে এখানে।'
কৃষির পাশাপাশি শিল্পকেও গুরুত্ব দিয়ে এগুনো গেলে দেশি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অন্যতম পছন্দের তালিকায় জায়গা করে নিবে রংপুর বিভাগ।
এ ব্যাপারে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো: মোরশেদ হোসেন বলেন, শিল্পায়নের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়বে, কর্মসংস্থান বাড়বে। বৈদেশিক অনেক বিনিয়োগ রংপুরে চলে আসবে। আর বৈদেশিক বিনিয়োগ আসলে এ অঞ্চলের অনেক উন্নয়ন সাধিত হবে বলে আমি মনে করি।
সম্ভবনার আরেক দুয়ার চিলাহাটি-হলবাড়ি রেলপথ। ভূটান ,নেপালসহ ভারতের পূর্বাঞ্চল বানিজ্য, পর্যটনসহ নানা কারনে এই রেলপথ ব্যবহারে আগ্রহ দেখিয়েছে। বর্তমানে এই পথে ভারত-বাংলাদেশ পণ্যবাহী ও মালবাহী রেল চলছে।
এসএসএস