
স্মৃতির পাতায় স্টুডিওর ছবি
স্মার্টফোনের ক্যামেরার দাপটে বন্ধের পথে ফটো স্টুডিও
সাজিদ আরাফাত , এখন টিভি
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১১:৪৪
ছবি যেন শুধু ছবি নয়। ফ্রেমে ফ্রেমে বাঁধানো স্মৃতির উপাখ্যান। পারিবারিক বা প্রাতিষ্ঠানিক নানা আয়োজনে ছবি তুলে ফ্রেমবন্দী করে রাখার স্মৃতি কেউই হাতছাড়া করতে চান না।
এক সময় ছবি তোলার জন্য স্টুডিও ছিলো মানুষের প্রথম পছন্দ। যে কোন উৎসব-পার্বণসহ বিভিন্ন আয়োজনে স্টুডিওতে ছবি তোলার হিড়িক পড়ে যেতো। তবে সময়ের সাথে বদলেছে স্টুডিও ফটোগ্রাফি। সাদা-কালো থেকে রঙিন যুগে প্রবেশ করেছে ফটোগ্রাফি। ফিল্মের ক্যামেরার জায়গা নিয়েছে ডিএসএলআর। এসেছে স্মার্টফোনও। ধীরে ধীরে রূপান্তর ঘটেছে স্টুডিও ব্যবসায়।
এক সময়ের 'স্টুডিওপাড়া' হিসেবে খ্যাত রাজধানীর হাটখোলা এলাকা। পুরনো ঢাকার এই এলাকায় স্টুডিও-২৯, স্টুডিও ২৭, এ-ওয়ানসহ নামকরা স্টুডিওর রমরমা ব্যবসা ছিলো। আশি-নব্বইয়ের দশকে এসব স্টুডিওতে ভিড় লেগেই থাকতো।
স্বামী-স্ত্রী কিংবা বাবা-মায়ের সাথে সন্তানের একই স্টাইলের যে ছবি তোলার দৃশ্য তা এখন আর চোখে পড়ে না। অলস সময় কাটে বেশিরভাগ কর্মচারীদের। তবে পারিবারিক নানা আয়োজনের ছবি তোলা কমে গেলেও, দাপ্তরিক কাজে পাসপোর্ট, ভিসা সংক্রান্ত আর স্কুল-কলেজের জন্য কিছু কিছু স্টুডিও এখনও আছে।
এক শিক্ষার্থী বলেন, কলেজে পাসপোর্ট সাইজের ছবি চেয়েছে। সেটা তো আর ফোন দিয়ে তোলা যায় না। তাই স্টুডিওতে এসেছি। তাছাড়া ফোনেই বেশি তোলা হয়।
এক দোকানদার বলেন, এখন যারা ছবি তোলে তারা স্কুল-কলেজ বা ভিসা ইমিগ্রেশনের জন্যই ছবি তোলে।
২০০০ সালের পর থেকে কমতে শুরু করে স্টুডিও ল্যাবের সংখ্যা। সাথে কমেছে অ্যালবামসহ ক্যামেরার আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র বিক্রিও। লোকসান সামাল দিতে অনেকেই স্টুডিওর সাথে ফটোকপি-প্রিন্টারের ব্যবসা করছেন।
স্মার্টফোন আসার পর থেকেই ব্যবসা-বাণিজ্যে ক্ষতির কথা জানিয়ে স্টুডিও-২৯ এর স্বত্তাধিকারী শেখ সাদী বলেন, আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য সব কমে গেছে। পারিবারিক ছবি তুলতে এখন আর কেউ স্টুডিওতে আসে না। কিছু লোক আসে শুধু ইমিগ্রেশনের ছবির জন্য।
স্টুডিও-২৭ এর ম্যানেজার মো. কোচন পুরনো দিনের স্মৃতিচারণায় বলেন, আগে ২৮-২৯টা স্টুডিও ছিলো। ল্যাব ছিলো ২-৩টা। এখন একটাও নাই। ব্যবসা নাই, এই কারণেই সব বন্ধ হয়ে গেছে।
ফটো মুভি স্টুডিও-এর পরিচালক জিল্লুর রহমান এখন টিভিকে বলেন, আগে আমার এক স্টুডিওতেই ১৬জন কর্মচারী কাজ করতো। আর এখন আমরা তিনজন কাজ করি। তাও বেশিরভাগ সময়ই বসে থাকতে হয়।
নব্বই দশক থেকে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে স্টুডিও পদ্মা। বিয়ে, মডেলিং, জন্মদিনে সাধারণ মানুষ থেকে তারকা, সবার পদচারণা ছিলো স্টুডিও পদ্মায়। তবে হাল আমলে স্মার্টফোনের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার কারণে আবেদন কমেছে স্টুডিওর। সাথে যোগ হয়েছে মূল্যস্ফীতির চাপ।
ক্যামেরা, ব্যাটারি, কাগজ, রাসায়নিকসহ এই খাতের আনুষঙ্গিক পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে স্টুডিও মালিকদের।
কয়েক বছর পর কয়েক কপি ছবির জন্য খরচ হতে পারে ৫০০ থেকে হাজার টাকার মতো, এমনটাই ধারণা করছেন স্টুডিও পদ্মার স্বত্তাধিকারী আক্কাস মাহমুদ।
তিনি বলেন, সৌখিন ছবি তোলাটা একেবারেই কমে গেছে। আগে বাসায় ছোট পারিবারিক অনুষ্ঠান হলেও দেখা যেতো ফটোগ্রাফার নিয়ে যেতো। কিন্তু এখন আর সেটা হয় না। তবে এই ব্যবসা বিলুপ্তি হবে না।
বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, স্টুডিও ব্যবসা রুগ্ন শিল্পের পথে। ছবি প্রিন্টের ক্ষেত্রে আগের চেয়ে ভ্যাটের পরিমাণ কিছুটা কমানো হয়েছে। তবে এই শিল্পকে বাঁচাতে ফটোগ্রাফির আমদানিকৃত আনুষঙ্গিক পণ্যের ওপর আরোপিত ভ্যাট কমানোর দাবি তাদের।
বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক সোসাইটির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ফটোগ্রাফি করার জন্য যে পণ্যগুলো প্রয়োজন হয় সেইগুলার ট্যাক্স-ভ্যাট অনেক বেশি। সেই পরিমাণটা কমাতে হবে।
পেশাদারদের হাত ধরে সমৃদ্ধ হয়েছে ফটোগ্রাফি। সাদা-কালো স্টুডিওর যুগ থেকে ডিএসএলআরের মাধ্যমে রুপান্তর ঘটেছে। আর এর মধ্য দিয়ে বেঁচে আছে স্মৃতি। বেঁচে আছে ছবি।
আরএন