Ekhon TV :: এখন টিভি

বিক্রি দামের চেয়ে ১৩২ গুণ বেশি খরচ করে ১ ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড করেছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। শূন্য শতাংশ প্ল্যান্ট ফ্যক্টরে চালানো পুরনো ঘোড়াশাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৩ নম্বর ইউনিটে ঘটেছে এই কাণ্ড। পিডিবির সবশেষ নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন ঘেটে দেখা যাচ্ছে, গ্যাস ভিত্তিক একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে যেখানে ১ টাকা ৩৩ পয়সাতেও এক কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে, সেখানে ঘোড়াশালে লেগেছে ৬৮১ টাকা। যদিও বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, হিসাবের গড়মিল আর ক্যাপাসিটি চার্জের কারণেই এমনটি হয়েছে। 

সারা শরীরে বয়সের ভার স্পষ্ট। ঘোড়াশাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৩ নম্বর ইউনিটটি গেল অর্থবছরের বেশিরভাগ সময়ই এটি বসে থেকেছে। তবে, যখন গ্যাস পুড়িয়ে উৎপাদন হয়েছে, তখন প্রতি কিলোওয়াটে খরচ দেখানো হয়েছে ৬৮১.৮৯ টাকা। আর পাইকারিতে ওই বছর বিতরণ কোম্পানিগুলোর কাছে পিডিবি এই বিদ্যুৎ বিক্রি করেছে গড়ে ৫ টা ১৭ পয়সা দরে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ২০২১-২২ অর্থবছরের হিসেবে বলা হয়েছে, ঘোড়াশালের ৩ নম্বর ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ৪৪ লাখ ৯১ হাজার ৬০০ কিলোওয়াট ঘন্টা। এক ইউনিটে গ্যাস ব্যবহার হয়েছে ২ টাকা ৮৩ পয়সার। কিন্তু কেন্দ্র রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে প্রতি ইউনিটে ৬৭৮ টাকা ৯২ পয়সা । যা মোট হিসাবে ৩০৫ কোটি ৯৭ হাজার ৭৮২ টাকা। রক্ষণাবেক্ষণ ও স্থায়ী খরচের নামে বিশাল এই খরচ সংস্থাটির বার্ষিক প্রতিবেদনে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। 

এ বিষয়ে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন এখন টেলিভিশনকে বলেন, 'এটা আমার মনে হয় একাউন্টিং প্র্যাকটিসের দুর্বলতা। একটা বিদ্যুৎ কেন্দ্র যদি সারাবছর বন্ধ থাকে তাহলে ক্যাপাসিটি চার্জসহ পুরোটাই এক ইউনিট ধরে বলা যায় এর দাম শতকোটি টাকা। এটা ঠিক না।' 

ক্যাবের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, 'এধরনের উৎপাদন ব্যয়কে বার্ষিক প্রতিবেদনে প্রকাশ করাটা আমি যৌক্তিক মনে করি না। এসব জায়গাগুলোতে চুক্তির ক্ষেত্রে  পাওয়ার পার্সেস এগ্রিমেন্টগুলোতে যেভাবে এসব অবস্থা প্রতিরোধ করা যেতো সেসব জায়গাতে অনেক ধরনের দুর্বলতা ও অসম্পূর্ণতা রয়ে গেছে। 

অস্বাভাবিক এই উৎপাদন খরচ শুধু একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে নয়। আরো আছে। ২০ মোগাওয়াট ক্ষমতার সৈয়দপুর ও রংপুর গ্যাস টার্বাইন বিদ্যুৎ কেন্দ্র দুটি চলেছে এক শতাংশ প্ল্যান্ট ফ্যাক্টরে। গেল অর্থবছরে সৈয়দপুর গ্যাস টার্বাইনের উৎপাদন খরচ দাঁড়িয়েছে ইউনিট প্রতি ১৮৩ টাকা ৯৭ পয়সা। রংপুরের জন্য খরচ হয়েছ ১১৩ টাকা ৯২ পয়সা।

আবার ২০২০-২১ অর্থবছরে অস্বাভাবিক ব্যয় দেখানো কয়েকটা কোম্পানির খরচ এক বছর পরেই কমিয়ে দেখানো হয়েছে। প্রতি ইউনিটে ১০৫.৭২ টাকা খরচ দেখানো বানকো এনার্জি জেনারেশন ২০২১-২২ খরচ করেছে ১৫ টাকা। এগ্রিকো এনর্জি ৮৯ টাকা থেকে কমে এবার হয়েছে ৩৫ টাকা। প্যারামাউন্ট বিট্র্যাক এনার্জির এবার প্রতি ইউনিট খরচ ৫৫ টাকা ৩৯ পয়সা দেখানো হলেও আগের বছর ছিলো ১৮০ টাকা ৬৭ পয়সা। বিদ্যুৎ উৎপাদনের এমন অস্বাভাবিক খরচ করার একধরনের ভুল বলে মনে করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের নীতিগবেষণা বিভাগ পাওয়ার সেল। অধ্যাপক শাম সুল আলম বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হয়েছে অর্থাৎ ক্ষমতা কম ব্যবহার করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে উৎপাদন ব্যয় বেশি হয়েছে। এসব কোম্পানির সঙ্গে বেসরকারি খাতের যখন চুক্তি হয়েছে সেখানে খুব কম ক্ষেত্রে জনস্বার্থের কথাটা প্রাধান্য পেয়েছে। 

এ বিষয়ে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, 'বছরের ক্যাপাসিটি চার্জ এবং কত ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে, সেটাকে ভাগ দিয়ে আমরা পার ইউনিট ব্যয় ধরি। আমি মনে করি যে, যত ইউনিট উৎপাদন হবে সেটা ধরেই বলতে হবে কত খরচ পড়েছে।'

তবে, উচ্চ খরচের মধ্যেও অতি অল্প খরচে বিদ্যৎ উৎপাদনের রেকর্ড করেছে কয়েকটি কেন্দ্র। মাত্র ১ টাকা ৩৩ পয়সা ইউনিট প্রতি খরচ করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে ৪০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার বিবিয়ানা-৩ । বিবিয়ানা দক্ষিণ থেকে বিদ্যুৎ মিলিছে ১ টাকা ৮৫ পয়সায়। ২ টাকা ২৩ পয়সা দরে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে সিলেট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে। তুলনামুলক নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা বেশি। এগুলোর উৎপাদন খরচ কম। তবে, গ্যাস সংকটে অনেকগুলো কেন্দ্র বসিয়ে রাখতে হয়ে বিদ্যুৎ বিভাগকে।

এসএসএস

Advertisement
Advertisement
Advertisement

এই সপ্তাহের সর্বাধিক পঠিত গুরুত্বপূর্ণ দেশে এখন খবর