Ekhon TV :: এখন টিভি

৪০০ বছরের পুরনো ঢাকা। যে নদীকে কেন্দ্র করে রাজধানীর এই যে প্রসার, কেমন আছে সেই বুড়িগঙ্গা? সময়ের সাথে বদলে গেছে এই নদীর চেহারা। স্বচ্ছ পানি এখন কালো রং আর দুর্গন্ধে আচ্ছন্ন। দখল-দূষণে চিরযৌবনা গঙ্গাবুড়ি হারিয়েছে তার চেনা দৃশ্য। ময়লা-আবর্জনা আর বর্জ্য ফেলে দূষিত করা হচ্ছে নদীর পানি।

প্রায় ২৫ বছর ধরে বুড়িগঙ্গার বুকে খেয়া নৌকা চালান মোহন মিয়া। এক সময় টলটলে পানির যে বুড়িগঙ্গা দেখেছেন তা আজ শুধুই স্মৃতি। তিনি বলেন, আগে এই পানি দিয়ে আমরা অযু করছি। নামাজ পড়ছি। আর এখন পানি আমরা ব্যবহার করতে পারি না। পানিতে ময়লা-আর্বজনা। গন্ধও আসে। 

শুধু নদী নয়, আরও নানা দূষণের দুষ্টচক্রে রাজধানী। রাস্তার পাশে খোলা জায়গায় আবর্জনার স্তুপ, গাড়ির কালো ধোঁয়া আর ধুলোবালিতে অতিষ্ঠ নগরবাসী। অনেকেই ভুগছেন স্বাস্থ্যগত নানা সমস্যায়। দূষণের যাঁতাকলে শুধু মানুষ নয়, ভারসাম্য হারাতে বসেছে প্রাণ-প্রকৃতিও।

একজন পথচারীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এইদিকে পানি দেওয়া হয় না। প্রচুর ধুলাবালি। আর এইসবের ভুক্তভোগী হই আমরা। 

আরেকজন ব্যক্তি বলেন, মাস্ক ছাড়া তো এখানে চলাচলই করা যায় না। প্রচুর ধুলা আর ময়লার গন্ধ। 

গত কয়েক অর্থবছরে বাজেটের আকার বাড়লেও বরাদ্দ বাড়ছে না পরিবেশ, বন ও জলবায়ু খাতে। অথচ পরিবেশবাদীরা মনে করছেন, দূষণের চক্র থেকে রাজধানীকে বাঁচাতে ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাজেটে বিশেষ মনোযোগের দাবি রাখে এই খাত। আসন্ন বাজেটে এ বিষয়ে বাড়তি গুরুত্বের দাবি জানিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তরও। 

ইনভায়রনমেন্ট পারফরমেন্স ইনডেক্সের তথ্য বলছে, ২০২০ সালে চরম ঝুঁকিপূর্ণ ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল একেবারে তলানিতে। আর ২০২৩ এসে অবস্থান ১৭৭-এ। অথচ পরিবেশের এমন চরম অবস্থায়ও বিগত অর্থবছরগুলোতে এর সুরক্ষায় নেয়া হয়নি পর্যাপ্ত পদক্ষেপ।

বাজেট বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত কয়েক অর্থবছরে বাজেটের আকার বাড়লেও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ কম।

২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের বাজেট বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ১ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা। পরের অর্থবছরে তা ৭৩১ কোটি টাকা কমিয়ে করা হয় ১ হাজার ১১৯ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে কিছুটা বেড়ে হয় ১ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। তা মোট বরাদ্দের মাত্র ০.২ শতাংশ। তবে ২০২১-২২ অর্থবছরে যা আবারও কমে দাঁড়ায় ১ হাজার ২২২ কোটি টাকায়। সবশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৫০১ কোটি ২৬ লাখ টাকা।

পরিবেশবিদদের দাবি, গত এক দশকে অন্যান্য খাতে বরাদ্দ যতটা বেড়েছে পরিবেশের উন্নয়নে তা অনেকটাই হতাশাজনক।

স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, পরিবেশ দূষণকারী প্রতিষ্ঠান, শিল্প-কারখানা, বস্তুর উপর কর আরোপ করেও কিন্তু পরিবেশ সংরক্ষণ করা যায়। 

বায়ুদূষণে এরইমধ্যে একাধিকবার শীর্ষে উঠে এসেছে রাজধানী ঢাকা। মাত্রাতিরিক্ত যানবাহনের কারণে বাড়ছে শব্দদূষণও। তবে দূষণ বাড়লেও, বাড়ে না বাজেট।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা অর্জনে পরিবেশ বান্ধব ও জলবায়ু সহনশীল উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেয়ার পরামর্শ পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের।

চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেনের মতে যেখানে যত বেশি ঝুঁকি থাকবে, সেখানে তত বেশি বরাদ্দ দেয়া উচিত। এখন টিভিকে তিনি বলেন, আমাদের এখন যে বরাদ্দ প্রক্রিয়া আছে, সেখানে দূর্যোগ বা স্থানীয় যে ঝুঁকিগুলো আছে সেগুলো বিবেচনা করে বরাদ্দের যে প্রক্রিয়া সেখানে ইন্ডিকেটর ওয়াইজ কোনো তালিকা নাই। 

জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে অবস্থান বাংলাদেশের। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের শিকার হয়ে নানা প্রাকৃতিক দূর্যোগের মুখে পড়তে হচ্ছে বাংলাদেশকে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে নিজস্ব অর্থায়নে ইতোমধ্যে গঠন করা হয়েছে জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড। প্রতিবছর এই খাতে সরকারের বরাদ্দ ৩ বিলিয়ন ডলার।

ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বাংলাদেশের প্রয়োজন ২৩০ বিলিয়ন ডলার। অভ্যন্তরীণভাবে এই যোগান আসার পাশাপাশি উন্নয়ন সহযোগীরা দিবে এই সহায়তা। এরইমধ্যে ২০২১ সাল থেকে এডিবির জলবায়ু ফান্ড থেকে ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার সহায়তা পেতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। যা ২০২৫ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।

জলবায়ু পরিবর্তন এবং আন্তর্জাতিক কনভেনশনের পরিচালক মির্জা শওকত আলী বলেন, প্যারিস এগ্রিমেন্টের সিদ্ধান্ত ছিলো যে- প্রতিবছর একশ' বিলিয়ন ডলার করে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বরাদ্দ দেয়া হবে। ২০২৫ পরবর্তী সময়ে এই পরিমাণ বাড়তেও পারে। 

পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, কার্বন নিঃসরণ কমানো, নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিশ্চিত আর পরিবেশের সুরক্ষায় আসন্ন বাজেটে অর্থ বরাদ্দে প্রয়োজন বাড়তি গুরুত্ব। প্রতিষ্ঠানটির বায়ুমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়াউল হক বলেন, আমরা আশা করবো যে- আমাদের বাজেটে পরিমাণটা একটু বাড়বে। সে জন্য আমরা চেষ্টাও করছি। গ্রীন বাজেট নিয়ে আমাদের কিছু প্রস্তাবনা দেয়া আছে। সেটার আওতায় যদি কিছু ডমেস্টিক ফান্ডিং-এর ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি। 

বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তুলতে পরিবেশবিষয়ক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী ভূমিকা রাখার তাগিদ পরিবেশবাদীদের ।

আরএন

Advertisement
Advertisement
Advertisement

এই সপ্তাহের সর্বাধিক পঠিত গুরুত্বপূর্ণ দেশে এখন খবর