Ekhon TV :: এখন টিভি

বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারি নজরদারির অভাব

কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ে জিম্মি প্রান্তিক পোলট্রি খামারিরা

১৬ মার্চ ২০২৩, ১০:৩৪

প্রান্তিক খামারিরা জিম্মি বিভিন্ন বড় প্রতিষ্ঠানের কাছে। মুরগির বাচ্চা সরবরাহ, খাদ্যের দাম, ঔষধসহ বিপণন, সবই নিয়ন্ত্রণ হয় তাদের হাত ধরে। আর বাজারে মুরগি আর ডিমের দাম বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েন সাধারণ ভোক্তারা। 

খামারি আর ব্যবসায়ীরা বলছে, এসব সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কার্যকরি ব্যবস্থা আর নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা গেলে নিয়ন্ত্রণে আসবে মুরগি আর ডিমের বাজার।

ময়মনসিংহ সদর উপজেলার কাতলাসেন গ্রামের খামারি মোশাররফ হোসেন। ৭ বছর ধরে তার খামারে পালন করছেন ব্রয়লার মুরগি। শুরুর দিকে লোকসান হলেও এখন দেখছেন লাভের মুখ। আগে মোশাররফ ডিলারের কাছ থেকে মুরগির বাচ্চা, খাদ্য, ওষুধ নিলেও এখন খামার চালাচ্ছেন কন্টাক্ট ফার্মিংয়ের মাধ্যমে।

মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘কন্টাক্টের মাধ্যমে আমি এখন মুরগি পালন করি। এই পদ্ধতিতে মুরগির সকল ওষুধের খরচ তারা বহন করেন।’

বিভিন্ন ফিড কোম্পানি কন্টাক্ট ফার্মিং এর নামে প্রান্তিক খামারিদের মুরগির বাচ্চা সরবরাহ, খাদ্য থেকে শুরু করে ওষুধ দিয়ে থাকে। তাদের বেঁধে দেয়া দামেই মুরগি ও ডিমের কেনা-বেচা চলে। এমনকি বিপনণও নিয়ন্ত্রণ করে তারা।

অভিযোগ রয়েছে, ময়মনসিংহের এ সব প্রান্তিক খামারিরা এক রকম জিম্মি ফিড কোম্পানির কাছে।

খামারিরা বলেন, ‘কোম্পানি আমাদের কাছ থেকে মুরগিও নির্ধারিত দামে কিনে নেয়। এছাড়া ওষুদের দাম ও খাবারও দিয়ে থাকে।’

এদিকে প্রায় শূন্য দোকানে বিগত দিনের বকেয়ার হিসাব মেলাচ্ছেন ফিড ব্যবসায়ী হাবিব মিয়া। প্রায় ৩০ লাখ টাকা বাকি পড়েছে তার। এক সময় খামারিদের কাছে মুরগির বাচ্চা, খাবার সরবরাহ করলেও এখন ব্যবসা গোটানোর অবস্থা। কারণ বড় ফিড কোম্পানির সাথে পেরে উঠছেন না তিনি।

জেলা প্রাণি সম্পদ কার্যালয়ের তথ্য বলছে, ময়মনসিংহে পোলট্রি খামারির সংখ্যা ১১ হাজার ৬০৯ জন। এখানে প্রতিমাসে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার মুরগি এবং ডিম বিক্রি হয়।

চাহিদার চেয়ে বাজারে মুরগির সরবরাহ কম ও প্রান্তিক পর্যায়ে খামার বন্ধ হয়ে যাওয়াসহ উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় মানিকগঞ্জে মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ৫০ টাকা। দাম বাড়ায় ক্রেতা ও খুচরা বিক্রেতারা পড়েছেন বিপাকে।

আমিষের অন্যতম যোগানদাতা মুরগির দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। মানিকগঞ্জের দুই মাস আগেও ১৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭০ টাকায়।

খামারিরা বলছেন, পোলট্রি খাবার, মুরগির বাচ্চা, বিদ্যুৎ, গাড়ি ভাড়াসহ সবকিছুর খরচ বেশি। সব মিলিয়ে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় মুরগির দাম বাড়ছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি বাজারে সরবরাহে টান পড়েছে। বাজারে জোগান কম থাকায় দাম বেড়েছে। ফিড, হ্যাচারি কোম্পানির সিন্ডিকেট, পোলট্রি খাবার, মুরগির বাচ্চা, বিদ্যুৎ ও গাড়ি ভাড়াসহ সবকিছুর দাম কমলে আবারও কম দামে মুরগি বিক্রি সম্ভব হবে।

ডিম ও মুরগীর দাম বাড়ায় নরসিংদীর বাজারে কেনা-বেচা নেমেছে দুই তৃতীয়াংশ। দাম বাড়ার পেছনে মুরগী, ডিম এবং বাচ্চা উৎপাদন ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সিন্ডিকেটকেই দায়ী করছেন বিক্রেতারা। জানান, রাজধানীর কাপ্তান বাজার থেকে মুঠোফোনে প্রতিদিন নরসিংদীর সব বাজারে জানানো হয় বিক্রিমূল্য।

সরবরাহ সংকটের অযুহাতে গাজীপুরে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে মুরগির দাম। খামার থেকে শুরু করে পাইকার, এমনকি খুচরা পর্যায়ের প্রতিটি ধাপেই বেড়েছে মুরগির দাম।

গাজীপুরের বিভিন্ন বাজারে ব্রয়লার মুরগির বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকা দরে। সোনালী মুরগির দাম ছুঁয়েছে ৩৩০ টাকায়। অথচ দু'মাস আগেও ব্রয়লার ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় এবং সোনালী মুরগি মিলেছে ১৯০ টাকায়। এ অবস্থায় আসন্ন রমজানে ভ্রাম্যমাণ বাজার বসানোর পরিকল্পনা করছে জেলা প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর।

লাগামহীন মুরগি ও ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণ এবং সংকট নিরসণে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের কঠোর তদারকির চান পোলট্রি খাত সংশ্লিষ্টরা।

আকন

Advertisement
Advertisement
Advertisement