
চট্টগ্রাম ওয়াসা
ব্যবস্থার ত্রুটি ও বিতরণ জটিলতায় নষ্ট ২৯ শতাংশ পানি
কাজী মাহফুজ , এখন টিভি
১৩ মার্চ ২০২৩, ২১:১৯
বন্দর নগরী চট্টগ্রাম, যেখানে ৭০ লাখ মানুষের বসবাস। আর প্রতিদিনি পানির চাহিদা প্রায় ৫০ কোটি লিটার। এক যুগ আগে যেখানে দরকার হতো ৩৬ কোটি লিটার। বিপরীতে সরবরাহ ছিলো মাত্র ১২ কোটি লিটার।
কিন্তু গত এক যুগে পানি উৎপাদনে চমক সৃষ্টি করেছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ৪টি প্রকল্পে উৎপাদন সক্ষমতা বেড়েছে দিনে ৪১ কোটি লিটার। এরমধ্যে শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-১ ও ২ থেকে পানি মিলছে ২৮ কোটি লিটার। শেখ রাসেল পানি শোধনাগার থেকে মিলছে ৯ কোটি লিটার ও গভীর নলকূপ থেকে ৪ কোটি লিটার। সবমিলিয়ে চাহিদার শতভাগ পানি উৎপাদন করছে সংস্থাটি।
একই সঙ্গে, এই ক'বছরে নির্ভরশীলতা কমেছে ভূগর্ভস্থ পানির। ওয়াসা কর্তৃপক্ষ বলছে, ২০০৯ সালে মাটির নীচ থেকে চাহিদার ৩৬ শতাংশ পানি তুলতে হলেও এখনন তোলা হয় মাত্র ৮ শতাংশ।
চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, আমাদের ধারণক্ষমতা হলো ৫০ কোটি লিটার। ভূ-গর্ভস্থ হতে পাই ৪৬ কোটি লিটার টিউবওয়েল থেকে পাই ৪ কোটি লিটার। আমরা সর্বোমোট ৪৫-৪৮ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করি। বর্তমানে যে পানি সরবরাহ করা হয় তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের মধ্যে সর্বোতকৃষ্ট মানের।'
তবে উৎপাদন শতভাগ হলেও সিস্টেম লস আর বিতরণে জটিলতা কাটছে না সংস্থাটির। ব্যবহারের আগেই নষ্ট হচ্ছে ২৯ শতাংশ পানি, যার ফলে প্রতিদিন ঘাটতি থাকছে প্রায় ১৫ কোটি লিটার। এতে একদিকে, সরকার বছরে রাজস্ব হারায় ১৪৫ কোটি টাকা, অন্যদিকে, পানির অভাবে থাকছে নগরীর প্রায় ২০-২২ লাখ মানুষ,
এমনই একটি এলাকা নগরীর হামজারবাগ, জায়গাটির দূরত্ব ওয়াসা ভবন থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার। বেশ কিছুদিন ধরে ওয়াসার পানি সরবরাহ বন্ধ থাকায় কুয়ার পানিই এখন ভরসা তার। যদিও প্রতিমাসে তাদেরকে পরিশোধ করতে হচ্ছে ওয়াসার বিল।
এলাকাবাদের অভিযোগ, ওয়াসার লাইন আছে কিন্তু পানি নাই। সেজন্য কুয়ার পানি ব্যবহার করতে হচ্ছে। ৫হাজার মানুষ প্রতিনিয়ত পানি ব্যবহারের কারণে কুয়ার পানি শীঘ্রই শেষ হয়ে যাবে। এখানকার পানি দিয়েই এলাকাবাসীর রান্নাসহ দৈনন্দিনের সকল কাজ সম্পন্ন করতে হয়।
এছাড়া নগরীর হালিশহর, পতেঙ্গাসহ বেশকিছু এলাকায় নিয়মিত পানি না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। আবার কোথাও কোথাও লবণাক্ত ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি সরবরাহের কারণে ভোগান্তি বেড়েছে নগরবাসীর।
এই এলাকার বাসিন্দারা জানান, প্রাইয় দুই বছর ধরে পানি সরবরাহের পাইপ ফাটা থাকার কারণে ঠিকভাবে পানি পাচ্ছেন না। যতটুকু পাচ্ছেন সেখানে ব্লিচিং পাউডার সহ বিভিন্ন দুর্গন্ধ থাকে।
এছাড়া পানি চুরি, মিটার পরিদর্শকদের কারসাজিসহ নানা দুর্নীতির কারণে ওয়াসা লোকসান কাটাতে পারছেনা বলে মনে করেন প্রাক্তন এই বোর্ড সদস্য।
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রাক্তন বোর্ড সদস্য মহসিন কাজী বলেন, চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রকল্পগুলো ঋণনির্ভর। ২৯ শতাংসহ সিস্টেম লস থেকে কীভাবে কমবে এই ঋণের বোঝা? আমার থেকে মনে হয় লিকেজ থেকেও চুরি অনেক বেশি হয়। তাই চট্টগ্রাম ওয়াসার বিতরণ স্বয়ংক্রিয় করলে এই চুরি থাকবে না।
বর্তমানে চট্টগ্রাম ওয়াসার আবাসিক গ্রাহক সংযোগ আছে ৭৮ হাজার ৫৪২টি আর বাণিজ্যিক সংযোগ ৭ হাজার ৭৬৭টি। চুরি রোধ ও বিল আদায়ে স্বচ্ছতা আনতে সম্প্রতি ডিজিটাল মিটার ও মোবাইলে বিল আদায় শুরু করেছে সংস্থাটি। এতে সিস্টেম লস ১০ শতাংশে নেমে আসবে বলে মনে করছে ওয়াসা
ডব্লিউএইচ