Ekhon TV :: এখন টিভি

প্রায় ৫ বছর গবেষণার পর 'জারুয়া' নামের বিপন্ন একটি মাছের কৃত্রিম প্রজননে সক্ষম হয়েছেন মৎস গবেষণা ইন্সটিটিউট সৈয়দপুর উপকেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা। ২০১৮ সাল থেকে এই মাছের কৃত্রিম প্রজননের জন্য গবেষণা শুরু করে ২০২৩ সালে সফলভাবে পোনা উৎপাদনে সক্ষম হয়েছেন তারা। জারুয়া ছাড়াও এই উপকেন্দ্রসহ সারাদেশে বিপন্ন আরও ৩৯টি জাতের মাছের কৃত্রিম প্রজননে সফল হয়েছে। পাশাপাশি তিস্তা নদীর জলজ জীববৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করছে গবেষণা কেন্দ্রটি। মহসিন আলীর ক্যামেরায় জানাচ্ছেন আমিরুল বাপ্পি।

মিঠা পানির মাছ জারুয়া একসময় জাল ফেললেই মিলতো উত্তরের তিস্তা ও আত্রাই নদীতে । তবে দিনের পর দিন কমছে সেই পরিমাণ। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন ফর নেচারের ২০১৫ সালের বিপন্নের তালিকায় বাংলাদেশের সুস্বাদু মাছ জারুয়া।

বিপন্ন প্রজাতির তালিকায় ওঠার তিনবছর পর ২০১৮ সাল থেকে জারুয়া নিয়ে গবেষণা শুরু করে বাংলাদেশ মৎস গবেষণা ইনস্টিটিউটের সৈয়দপুর উপকেন্দ্র। দীর্ঘ পাঁচ বছর গবেষণার পর ২০২২ সালের ডিসেম্বরে কৃত্রিম প্রজননে সফল হন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা। দিনাজপুরের খানসামা অঞ্চল থেকে মাছ সংগ্রহ করে উপকেন্দ্রের পুকুরে অভ্যস্ত করে সিনথেটিক হরমোন প্রয়োগ করে কৃত্রিম প্রজনন করানো হয়। বাংলাদেশ মৎস গবেষণা ইনস্টিটিউট সৈয়দপুর উপকেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাশরিফ মাহমুদ মিনহাজ জানান নির্দিষ্ট মাত্রায় হরমন প্রয়োগ করে ১২ থেকে ২৪ ঘন্টা পর্যবেক্ষনে রেখে ফার্টিলাইজেসন করা হয়

জারুয়া মাছসহ সৈয়দপুর উপকেন্দ্রে কৃত্রিম প্রজননকৃত মোট মাছের সংখ্যা দাঁড়ালো ১১তে। ২০০৬ সালে উপকেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠার পর ২০১৬ সালে প্রথম ট্যাঙরা মাছের কৃত্রিম প্রজননে সক্ষম হন বিজ্ঞানীরা। এরপর ২০১৭ সালে গুতুম ও খলিশা, ২০১৯ সালে লইট্টা ট্যাঙরা ও বালাচাটা, ২০২০ সালে বৈরালি ও আঙ্গুস, ২০২১ সালে বটিয়া পুঁইয়া ও কুর্শা এবং ২০২২ সালে নারিকেল চেলা মাছের প্রজনন করা হয়েছে। গ্রাফিক্স আলফা

এই দশটি মাছের কিছু কিছু মাঠ পর্যায়ে চাষের সফলতাও অর্জন করেছেন মৎস্যবিজ্ঞানীরা। এছাড়া তিস্তা নদীর জলজ জীববৈচিত্র্যের বর্তমান অবস্থা নিয়েও গবেষণা চলছে। সৈয়দপুর উপকেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. ইশতিয়াক হায়দার বলেন, মাছ সংগ্রহ করে ২-৩ বছর পর্যবেক্ষন করা হয়। এবং প্রজননক্ষম হলে হেচারিতে নিয়ে যাওয়া হয়।

সারাদেশে মাছের চাহিদার যে ঘাটতি তার ১৩ শতাংশ রংপুর বিভাগে। সেই ঘাটতি মেটাতে গবেষণা করে যাচ্ছে সৈয়দপুর উপকেন্দ্র। তবে কিছু সমস্যাও আছে। এই অঞ্চলের পানিতে আয়রনের পরিমাণ বেশি থাকায় পোনা উৎপাদনের সময় লাগছে বেশি। ড. আজহার আলী জানান, অচিরেই বেশ কিছু মাছ সহজ লভ্য হবে।

আইইউসিএন এর তথ্যমতে, বাংলাদেশে ৬৪টি মাছ রেড জোনে আছে। এরমধ্যে এখন পর্যন্ত জারুয়া মাছসহ ৩৯টি মাছের কৃত্রিম প্রজনন করেছে বাংলাদেশ মৎস গবেষণা ইনস্টিটিউট। কৃষি জমিতে মাত্রাতিরিক্ত এবং অপরিকল্পিত সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে যে শুধু মাটির ক্ষতি হচ্ছে তাই নয়, খাল-বিলে পাওয়া ছোট মাছে প্রজননেও প্রভাব পড়ছে। তাই শুধু গবেষণা করে বংশ রক্ষা করলেই হবে না, চাষাবাদে পরিমিত এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে সার ও কীটনাশকের ব্যবহারের পরামর্শ গবেষকদের।

 

এমএম

Advertisement
Advertisement
Advertisement