Ekhon TV :: এখন টিভি

এক সময় সুনামগঞ্জের পণ্য আনা-নেয়া ও যাত্রী পরিবহনে পছন্দের বাহন ছিলো লঞ্চ। তবে সড়ক যোগাযোগের উন্নয়নে দাপটের সাথে চলা এসব লঞ্চ হারিয়েছে জৌলুস। একই সাথে লঞ্চঘাট ঘিরে গড়ে ওঠা লঞ্চ বাজারও হারিয়েছে তার ঐতিহ্য। এক সময় যে বাজারে দিনে কোটি টাকা বিক্রি হতো সেখানে হাজার টাকার বেচাকেনা নেই।

সুনামগঞ্জ পৌর শহরের লঞ্চঘাট এলাকার রেনু মিয়া দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে হোটেল ব্যবসা করেন। এক সময়ে ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত লঞ্চ চলাচল করায় ভিড় লেগে থাকত রেনু মিয়ার হোটেলে। অথচ এখন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত হোটেল খুলে বসে থাকলেও ক্রেতার দেখা পাচ্ছেন না তিনি।

ব্যবসায়ী রেনু মিয়া বলেন, আগের মতো বেচাকেনা নেই। লঞ্চ যাত্রীও নেই। পূর্ব পরিচিত কিছু মানুষ আসে। তাদের কাছেই টুকটার বিক্রি করে থাকি।

লঞ্চঘাট বাজার নামের বিখ্যাত এ বাজারে হোটেল-মোটেলসহ ৩০টি দোকান ছিলো। এখানে প্রতিমাসে অন্তত কোটি টাকার পণ্য বেঁচাকেনা হতো। তবে, বর্তমানে ক্রেতা না থাকায় দৈনিক এক হাজার টাকার পণ্যও বিক্রি না হওয়ায় বেকায়দায় পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। আর যাত্রী না থাকায় অলস সময় পার করছেন শ্রমিকরাও।

লঞ্চঘাট এলাকার রিক্সাচালক বলেন, এই মুহূর্তে সবচেয়ে অসহায় জায়গা হলো লঞ্চঘাট। এই এলাকায় মানুষজন নেই। যখন রিক্সা নিয়ে যাই তখন নিজের কাছেই খারাপ লাগে।

এদিকে, বর্তমানে সুনামগঞ্জের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় লঞ্চের কদর যেমন কমেছে তেমনি নদীগুলোও হারিয়েছে তার নাব্যতা। তাই যাত্রীবিহীন লঞ্চগুলো এখন পড়ে আছে টার্মিনালে।

যাত্রী সংকটে আগের মত লঞ্চ না চলায় বেয়কাদায় পড়েছেন লঞ্চের চালক ও ব্যবসায়ীরা। অনেকেই বিক্রি করে দিয়েছেন তাদের লঞ্চগুলো।

লঞ্চের এক চালক বলেন, এক সময়ে দাপটের সাথে লঞ্চ চালিয়েছি। কিন্তু সেই সময় আর নেই। না পারি অন্য কাজ করতে, এমনকি কৃষি কাজও পারি না। তাই লঞ্চ ছেড়ে যাবো কোথায়?

স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, যখন রাস্তাঘাট ভালো ছিলো না তখন লঞ্চই ভরসা ছিলো। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হবার কারণে সকল গাড়ি অনায়াসে এলাকায় ঢুকতে পারছে। তাই লঞ্চের কদর আগের মতো আর নেই।

তবে, এখনও রুট টিকিয়ে রাখতে লোকসান হওয়ার পরও ২টি লঞ্চ সুনামগঞ্জ থেকে বিভিন্ন ঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।

সুনামগঞ্জ লঞ্চঘাটের টিকেট কাউন্টারের ম্যানেজার রনি মিয়া বলেন, লঞ্চের জন্য এসে যেন মানুষকে ফিরে যেতে না হয় তাই একটি লঞ্চ রেখে দিয়েছি। এছাড়াও ঘাটের কর্মচারি যারা আছে তাদেরকেও ধরে রাখার চেষ্টা করছি।

লঞ্চ ব্যবসার দুরাবস্থার কথা সুনামগঞ্জ পৌর সভার মেয়র নাদের বখতও স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় এদিকে অন্যান্য বাহনের আধিক্য হয়েছে। যার কার ফলে লঞ্চের যাত্রী কমে গেছে। এই কারণেই ব্যবসায়ীরাও লঞ্চ ব্যবসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।

হাওরের জেলা সুনামগঞ্জে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় লঞ্চের কদর কমেছে। তবে, অর্থনৈতিক দিক বিবেচনায় লাভবান হয়েছে বলে মনে করেন এই অঞ্চলের বাসিন্দারা।

ডব্লিউএইচ

Advertisement
Advertisement
Advertisement