
আমিনবাজার ল্যান্ডফিল
রাজধানীর বর্জ্য ফেলা নিয়ে শঙ্কা
শম্পা বিশ্বাস , এখন টিভি
১১ মার্চ ২০২৩, ১৩:১৪
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এর ২২ নম্বর ওয়ার্ডের মহানগর প্রজেক্ট এটি। টু টাং আওয়াজে প্যাডেল ভ্যানে চলছে বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহের কাজ। সকাল থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত সংগ্রহ করা এসব বর্জ্য বিকেলবেলায় চলে যায় সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন বা এসটিএস এ। সেখান থেকে এসব বর্জ্যের শেষ গন্তব্য আমিনবাজার ল্যান্ডফিল।
ঢাকা উত্তর সিটির ৫৪টি ওয়ার্ডের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ২০০৯ সালে আমিনবাজারে ৫৪ দশমিক ৮৮ একর জমিতে বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৭ সালে এখানে বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম সমাপ্ত ঘোষণার কথা ছিল। কিন্তু নতুন করে জমি অধিগ্রহণ না হওয়ার কারণে এখনো সেখানে বর্জ্য অপসারণ করা হচ্ছে। ভার্টিকল এক্সটেনশন পদ্ধতিতে বা মূল ভূমির ওপর ৮০ মিটার প্রস্থ করে বর্জ্য অপসারণ করা হচ্ছে আমিনবাজারে। ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি বর্জ্য ফেলার কারণে এই ল্যান্ডফিলের উচ্চতা ৩০ ফুট থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে তা ৯০ ফুট ছাড়িয়ে গিয়েছে। ফলে রাজধানীতে প্রতিদিন তৈরি হওয়া হাজার হাজার টন বর্জ্য এখন কোথায় ফেলা হবে তা নিয়েই দেখা দিয়েছে শঙ্কা।
এদিকে, উচ্চতা তিনগুন বেড়ে যাওয়ার কারণে ল্যান্ডফিলে বর্জ্যের গাড়ি চালাতে চালকদের পোহাতে হচ্ছে নানা দুর্ভোগ। প্রায়শই ঘটছে দুর্ঘটনাও।
ময়লার ট্রাকের চালকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, উচু হবার কারণে গাড়ি নিয়ে উঠতে কষ্ট হয়। ব্রেক ঠিক মতো কাজ করে না, বেশ কিছুদূর এগিয়ে ব্রেক ধরে, এরপর সেখানে গর্ত থাকে যা বিপজ্জনক। অনেক সময় ময়লার স্তুপে গাড়ি পিছলে যায়, এমনকি উল্টেও যায়।
হিসেব বলছে, ২ কোটি লোকের এই শহরে প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাত হাজার টন বর্জ্য উৎপাদন হচ্ছে। যার অর্ধেকই ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের। এই বিপুল পরিমান বর্জ্য নিয়ে বিপাকে খোদ মেয়রও। তবে এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য নতুন ১৮টি ওয়ার্ডের জন্য আলাদা ল্যান্ডফিল এবং বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ তৈরির পরিকল্পনার কথা জানালেন তিনি।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ' এই মুহুর্তে সবচেয়ে সবচেয়ে বড় হুমকি হচ্ছে প্রায় ৯০ ফুট উপরে উঠে বজ্র ফেলতে হচ্ছে। এইটি কতটা বিপজ্জনক তা শুধু ড্রাইভার ও তার সঙ্গীই বুঝতে পারেন। আমরা ইতোমধ্যেই মন্ত্রনায়য়ে জমি অধিগ্রহণের কথা জানিয়েছি। আরেকটি প্রকল্প আমরা হাতে নিচ্ছি যা হলো নাসিরনগরে আমরা ল্যান্ডফিল করতে চাই।'
প্রতিবছরই রাজধানীতে বর্জ্যের পরিমাণ বাড়ছে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৭-১৮ সালে ঢাকা উত্তর সিটিতেই বর্জ্যের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ২২ ভাগ। তবে এই হিসেব শুধু সংগৃহীত বর্জ্রের। নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, সংগৃহীত এসব বর্জ্যের বাইরেও নগরীতে প্রায় ৪০ শতাংশ বর্জ্য নালা-নর্দমার মধ্যে অসংগৃহীত থেকে যায়। সেগুলোকে ব্যবস্থাপনার আওতায় না আনলে বর্ষায় দেখা দিতে পারে চরম জলাবদ্ধতা।
নগর পরিকল্পনাবিদ আকতার মাহমুদ বলেন,'প্রায় ৪০% বর্জ্য অসংগৃহীত রয়ে যায়, যা শহরের বিভিন্ন নালা নর্দমা ও খালে জমা হচ্ছে। বর্জ্র এখন বাংলাদেশের জন্য বড় ধরণের হুমকিস্বরূপ। তাই প্রতিটি পৌরসভা-সিটি কর্পোরেশন সহ স্থানীয় সরকারের বর্জ্র ব্যবস্থাপনাকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা উচিত।'
পরিকল্পিত নগরী গড়তে বৈজ্ঞানিক উপায়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোনো বিকল্প নেই। ফলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজে সিটি কর্পোরেশনের পাশাপাশি নগরবাসীকেও এগিয়ে আসার আহ্বান নগর পরিকল্পনাবিদদের।
আমিনবাজার ল্যান্ডফিলে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের প্রায় ৩০০০ টন বর্জ্য এসে জমা হয়। শুরুতে ল্যান্ডফিলের উচ্চতা ৩০ ফুট থাকলেও পরবর্তীতে ৬০ ফুটে উন্নিত করা হয়। বর্তমানে ধারণক্ষমতার বাইরে গিয়ে ৯০ ফুট উচ্চতায় বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। সিটি কর্পোরেশন বলছে বিকল্প জায়গা না থাকায় বাধ্য হয়ে এই জায়গাতেই বর্জ্য ফেলতে বাধ্য হচ্ছে। যদিও তা আর কতদিন ফেলা যাবে তাই নিয়েই শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ডব্লিউএইচ