Ekhon TV :: এখন টিভি

কুমিল্লায় কলকারখানার বর্জ্যে বিষাক্ত হয়ে উঠছে নদী ও খাল-বিলের পানি। জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ায় দিন দিন কমছে দেশীয় মাছ। পানি পরিশোধন যথাযথ না হওয়ায় নদীতে মিলছে না মাছ আর নাব্যতা সংকটে নষ্ট হচ্ছে মাছের অভয়াশ্রম। এতে করে চাষের মাছের ওপর নির্ভরতা বাড়ছে। তবে দেশীয় মাছের ঐতিহ্য ফেরাতে নতুন প্রকল্প নিয়েছে জেলা মৎস্য কার্যালয়।

জেলার ডাকাতিয়া নদী পাড়ের ২৩টি জেলে পরিবার মাছ ধরেই জীবিকা নির্বাহ করতেন। তাঁদের একজন কানু লাল বর্মণ সরকারি সহযোগিতায় নদীতে খাঁচায় মাছ চাষ শুরু করেন। দেড় লাখ টাকা খরচ হলেও তাঁর মৎস্য প্রকল্প এখন মাছ শূন্য। দূষিত ও বিষাক্ত পানিতে খাঁচার মাছ বাঁচছে না। অন্যদিকে নদীতে মিলছে না দেশীয় মাছ।

কানু লাল বর্মণ বলেন, নদীর পানি খারাপ হওয়ায় এবার মাছ দিতে পারিনি। খাঁচাগুলোও পড়ে আছে। 

জেলায় প্রকৃত জেলের সংখ্যা ২১ হাজার। কলকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য খাল ও নালা হয়ে নদীতে চলে যায়। নদীতে মাছ না পাওয়ার হতাশা জেলেদের কণ্ঠে।

জেলেরা বললেন, আগে নৌকা নিয়ে নদীতে বড় বড় মাছ ধরতাম। এখন নদীতে মাছ বলে কিছু নেই। মাছের বাচ্চা হলেও কেমিক্যালের পানিতে মাছ ধ্বংস হয়ে যায়। বিষাক্ত পানির কারণে দিন দিন দেশীয় মাছ হারিয়ে যাচ্ছে।   

কুমিল্লায় ১৩টি নদী রয়েছে ও মৃত নদীর সংখ্যা ১৯টি। কিন্তু বিষাক্ত পানিতে নষ্ট হচ্ছে মাছের রেণু। বাজারে প্রাকৃতিক মাছের জায়গা দখল করেছে চাষের মাছ। একসময় যারা খাল-বিলে মাছ ধরতেন তাদের কাছে এখন দেশীয় মাছ দুর্লভ ও মূল্যবান।

কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য পরিশোধন যথাযথ হচ্ছে না বলে নদীতে দেশীয় মাছ কমে যাচ্ছে। তবে দেশীয় মাছ সংরক্ষণে মাছের অভয়াশ্রমগুলো রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগ নেয়ার কথা বলছে জেলা মৎস্য অফিস।

কুমিল্লা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শরীফ উদ্দিন বলেন, মৎস্য বিভাগ বিভিন্নভাবে দেশীয় মাছ সংরক্ষণে মানুষকে সচেতন করছি। বিভিন্ন সভা-সেমিনারেও আমরা কথা বলছি। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে, কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। 

নদীর নাব্যতা সংকটের কারণে মাছের অভয়ারণ্য হুমকির মুখে। গোমতী নদীর শাখা নদী কালাডুমুর, এ নদী থেকে ৪টি উপজেলার ৫০ হাজার বিঘা জমিতে চলে সেচের কাজ। ৩৭ বছর পর নদীর ১১ কিলোমিটার খননের উদ্যোগ নেয়া হলেও ৩ কিলোমিটার খনন করা হয়। 

পরিবেশকর্মী মতিন সৈকত বলেন, নদী ও খালগুলোতে ড্রেজিং করে পানির প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে হবে। তাহলে প্রাকৃতিক মাছের অভয়াশ্রম আবার ফিরে আসবে। 

কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, এখন নদী খনন করার আর সময় নেই। এ কারণে প্রকল্প শেষ করে দিয়েছি। ভবিষ্যতে অবশিষ্ট ৮ কিলোমিটার ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে খনন করা হবে বলে আশা করছি।

এএইচ

Advertisement
Advertisement
Advertisement