Ekhon TV :: এখন টিভি

আগে বাঙালির ভোর শুরু হতো সুর ও বাদ্যযন্ত্রের তালে। সেই সুর আর গান এখন মিলিয়ে যাচ্ছে যান্ত্রিক জীবনের কোলাহলে।

সঙ্গীত চর্চার অনুষঙ্গ বাদ্যযন্ত্র। পুরনো ঢাকার শাঁখারিবাজারে দেখা মেলে বাদ্যযন্ত্রের বেশকিছু আদি প্রতিষ্ঠানের। যার মধ্যে অন্যতম যতীন অ্যান্ড কোং। ১৯১১ সাল থেকে সঙ্গীতপ্রেমীদের কাছে পরিচিত একটি নাম। হারমোনিয়াম, তবলা, ঢোল, বাঁশি, তানপুরাসহ নানা রকম বাদ্যযন্ত্রের দেখা মিলবে এই দোকানে।

প্রায় ৫০ বছর ধরে যতীন অ্যান্ড কোং-এ হারমোনিয়াম তৈরি করেন মোহাম্মদ লোকমান। সঙ্গীতের প্রতি অনুরাগ আর ভালোবাসা থেকে যুক্ত হয়েছেন এ পেশায়। গত পাঁচ দশকে নানা উত্থান-পতনের সাক্ষী তিনি। তার মতে, দেশীয় বাদ্যযন্ত্রে ঘটেছে ব্যাপক রূপান্তর, কমেছে কারিগরের সংখ্যা।

কারিগর মোহাম্মদ লোকমান বলেন, গান শিখতে হলে হারমোনিয়াম-তানপুরা লাগবেই। তানপুরা ছাড়া ক্লাসিকাল সংগীত কেউ শিখতে পারবে না। আর ডিজিটাল থেকে আমাদের হাতে বানানো বাদ্যযন্ত্র অনেক উন্নত। 

এখানকার দেশীয় বাদ্যযন্ত্র একতারা কিনতে গেলে দাম পড়বে আকারভেদে ১৫০ থেকে ৫৫০ টাকা। হারমোনিয়াম ১৪ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত, খমখ ৮শ' টাকা, জিপসি ২শ' টাকা, হাতবায়া ৩শ' থেকে ৬শ' টাকা। এছাড়া খঞ্জনির দাম ৪৫০ টাকা। বিভিন্ন রকম ঢোল কিনতে গুণতে হবে ৮শ' থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগের তুলনায় বেড়েছে এসবের নির্মাণ ব্যয়।

বাংলার ঐতিহ্য থেকে হারিয়ে যাচ্ছে আদি বাদ্যযন্ত্র ও গান। তাই আক্ষেপের সুরে যতীন অ্যান্ড কোং প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার নবকুমার নাথ এখন টিভিকে বলেন, পালা গান, যাত্রা গান, দোতারা বাজনা গান- এইসব এখন বন্ধ হয়ে গেছে। এসব কারণে অনেক যন্ত্রপাতির প্রয়োজন কমে গেছে। বানানো বন্ধ হয়ে গেছে। 

দামের প্রভাবে বাদ্যযন্ত্রের বিক্রি কমে যাওয়ার কথা জানিয়ে শিল্পী নিকেতনের ম্যানেজার সুখময় সরকার বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে এলসি বন্ধ। আমাদের কোনো মালপত্র আসছে না। ডলারের দামও বেড়েছে আর তাই বাদ্যযন্ত্রের দাম সব দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এই শিল্পচর্চাটা খুব কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে। 

একসময় যাত্রাপালা বা পালাগানের আসরে দেশীয় বাদ্যযন্ত্র শোভা পেতো। তবে সময়ের সাথে বদলে গেছে চিত্র। সে জায়গা দখলে নিয়েছে নতুন নতুন আধুনিক বাদ্যযন্ত্র।

আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের দেখা পাওয়া যাবে রাজধানীর এলিফেন্ট রোডেও। একই সারিতে বেশকিছু দোকানে সাজানো দেশি-বিদেশি নানা উপকরণ। যার বেশিরভাগই ভারত এবং চীন থেকে আমদানি করা। দোকানে সঙ্গীতপ্রেমীদের বিভিন্ন ব্রান্ডের গিটার, কি-বোর্ড, ইউকেলেলে, বেহালা, ড্রামসেট ছাড়াও নানা ধরনের উপকরণ সাজানো আছে ।

একজন ক্রেতা বলেন, একতারা, দোতারা, তবলা, বেহালা থেকে আমরা কখনোই দূরে যেতে পারবো না। গিটার আর কী-বোর্ড দিয়েও কিন্তু আমাদের দেশীয় সংগীত চর্চা করা যায়। 

অ্যাকুয়িস্টিক, হাওয়াইন, ইলেকট্রিক বেজ গিটারসহ বিভিন্ন ব্রান্ডের গিটার মিলবে এখানে। দেশিগুলোর দাম কিছুটা কম হলেও বিদেশি ব্রান্ডের গিটার কিনতে হলে গুণতে হবে বাড়তি খরচ।

সর্বনিম্ন ৪ হাজার থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত দাম পড়বে গিটার কিনতে। এছাড়া চাইম বেল মিলবে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকায়। বঙ্গ কিনতে গেলে দাম পড়বে প্রায় ১৮ হাজার টাকা।

বিক্রেতারা বলছেন, আমদানি প্রক্রিয়ায় জটিলতার কারণে দাম সমন্বয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এতে বাদ্যযন্ত্রের দাম বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত। কমেছে ক্রেতার আনাগোনা।

মেলোডি অ্যান্ড কোং-এর ব্যবস্থাপনা সহযোগী সম্রাট সরকার বলেন, আগে যে বাদ্যযন্ত্র আমরা ৪ হাজার টাকায় বিক্রি করতাম, সেই যন্ত্র এখন বিক্রি করতে হচ্ছে ৬ হাজার টাকায়। আবার গ্রাহক কিন্তু বাড়েনি। বরং দামের প্রভাবে কমেছে। 

একুশ শতকে ব্যবহার বাড়ছে আধুনিক যন্ত্রের। ডিজিটাল উপায়ে দেয়া হচ্ছে নতুন সুর ও তাল। সঙ্গীতশিল্পীরা বলছেন, পরিবর্তনের সাথে চললেও হাতেখড়িটা হতে হবে আদি যন্ত্রের কাছেই। 

তবে সংগীতে এখনও আধুনিকতার ছোঁয়ার অনেক কিছু বাকি রয়েছে বলে মত সংগীতশিল্পী তানভীর আলম সজীবের। তিনি বলেন, পরিবর্তন কখনো কখনো ভালো লাগে, আবার কখনো লাগে না। কিন্তু আমি সবকিছুই পজিটিভলি নেয়ার চেষ্টা করি। তবে সবকিছুরই ইতিবাচক-নেতিবাচক দিক আছে।
 

আরএন

Advertisement
Advertisement
Advertisement