Ekhon TV :: এখন টিভি

প্রতিবাদ-প্রতিরোধ আর আত্মত্যাগে মহীয়ান মার্চ। যার প্রতিটি ক্ষণ, প্রতিটি দিন গৌরবের, সংগ্রামের। শেকল ভাঙার গান আর মিছিলে মুখরের মার্চ।

বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের রূপরেখা রচিত হয় এই মার্চেই। শোষণের বেড়াজাল আর অশুভ চক্রান্ত রুখে দিতে প্রতিটি প্রাণ হয়ে ওঠে প্রতিবাদী। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের শৃঙ্খল ভেঙে শুরু হয় মুক্তির আন্দোলন।

৭০'র নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের পরেও ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি, আলোচনার নামে প্রহসন এবং শোষণ বঞ্চনার প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে পূর্ব বাংলা।

১ মার্চ, ১৯৭১। অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হয়ে যায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন। বিক্ষোভে রাস্তায় নামে বাংলার জনগণ। বন্ধ করে দেয়া হয় ঢাকার বিমান চলাচল। সর্বাত্মক হরতাল পালনের ডাক দেন শেখ মুজিবুর রহমান।

২ মার্চ ঢাকায় এবং ৩ মার্চ সারাদেশে পালন করা হয় হরতাল।

পূর্ব পাকিস্তান তখন অগ্নিগর্ভ। স্বাধীনতার বন্দরে পৌঁছাতে সুস্পষ্ট নির্দেশনার অপেক্ষায় জনগণ। ঠিক এমন সময় স্বাধিকার আন্দোলনের অগ্রদূত বঙ্গবন্ধুর ডাকে আসে অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা। মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার দৃপ্ত শপথ নেয় বাংলার জনগণ।

ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। শোষণ থেকে মুক্তির মন্ত্রণায় উজ্জীবিত হওয়ার দিন। রেসকোর্সের জনসভায় রাজনীতির কবি, আন্দোলনের প্রাণপুরুষ শেখ মুজিব ডাক দেন স্বাধীনতার। বার্তা দেন ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোলার। ঘোষণা দেন- রক্ত দিয়ে দেশের মানুষকে মুক্ত করার। 

শুরু হয় প্রতিরোধ-প্রতিবাদ। দীর্ঘস্থায়ী সংগ্রামের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে ছাত্র-শিক্ষক, সংস্কৃতিকর্মী থেকে দিনমজুর সবাই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আবু মোহম্মদ দেলোয়ার এখন টিভিকে বলেন, ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়েছিলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অগ্রনী ভূমিকা পালন করেছিলো। ছাত্রীরাও ট্রেইনিং নিয়েছিলো মুক্তিযুদ্ধের জন্য। 

তিনি আরও বলেন, কোথাও কোথাও পাক হানাদার বাহিনীকে রুখে দিয়েছে সাধারণ জনতা। আক্রমন করেছে বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টে। এমনকি আদিবাসীরাও তীর-ধনুক দিয়ে আক্রমন করেছে। লড়াই করেছে দেশের জন্য। 

১৯ মার্চ, ১৯৭১। প্রতিরোধের পথ দেখায় গাজীপুর। পাক বাহিনীর শোষকদের বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয় জয়দেবপুরে।

আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যেই আসে ভয়াল ২৫ মার্চ। পৃথিবীর ইতিহাসে নৃশংসতম হত্যাকান্ডের রাত। বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনকে চিরতরে ম্লান করে দিতে 'অপারেশন সার্চলাইট'র নামে চালানো হয় নির্বিচারে গণহত্যা। নারকীয় এই হত্যাকান্ডে প্রাণ হারান হাজার হাজার মানুষ। সেই রাতে গ্রেপ্তার করা হয় শেখ মুজিবকে।

মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষক মাহবুব জামান এখন টিভিকে বলেন, ৩ তারিখ থেকে আমরা প্যারেড করা শুরু করলাম। বন্দুক নিয়ে প্যারেড করার মাঝে এক ধরণের আবেগ আছে। আর সবই কিন্তু এই মার্চ থেকে শুরু। শেখ মুজিবের ভাষণ, আমাদের প্যারেড, ট্রেইনিং করা। আবার ফিরে এসে যুদ্ধে যোগ দেয়া, ইন্টারকন্টিনেন্টালে আক্রমন করাসহ সবকিছুরই শুরু কিন্তু এই মার্চ মাসেই।  

সার্বভৌমত্ব রক্ষার গৌরবদীপ্ত অধ্যায় একাত্তর। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্যদিয়েই অভ্যুদয় হয় রক্তমাখা নতুন সূর্যের।

আরএন

Advertisement
Advertisement
Advertisement