
লিখতে পারতে না পারা ১২ জনের বই 'নিরক্ষরের গল্পগুচ্ছ'
রাফসান নিঝুম , এখন টিভি
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২০:২১
১২ জন মানুষের লেখা গল্প দিয়ে লেখা একটি বই। তবে এই ১২ জনের কেউই সাধারণ বা জনপ্রিয় লেখক নন। সবাই নিরক্ষর। লিখতে বা পড়তে না জানা মানুষ। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষক, কেউ দিনমজুর কেউবা আবার দারোয়ান।
নিরক্ষর মানুষের জীবনেও আছে নানা গল্প। রয়েছে হাসি-কান্না-দুঃখের মতো বিষয়। কিন্তু লিখতে বা পড়তে না জানায় তাদের গল্পগুলো রয়ে যায় পর্দার আড়ালে। সেই গল্পগুলো এবার মলাটবন্দী হয়েছে। আর তা ছাপার অক্ষরে বই আকারে প্রকাশ করেছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন।
অমর একুশে গ্রন্থমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে ৩৫০ নম্বর স্টল এবং বাংলা একাডেমি চত্বরে ৮০৯ নম্বর স্টলে বিক্রি হচ্ছে নিরক্ষের গল্পগুচ্ছ।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের প্রধান স্বেচ্ছাসেবক কিশোর কুমার দাস বলেন, যারা নিরক্ষর তাদের গল্প চিত্রায়িত হয় শিক্ষিত মানুষের হাতে। কিন্তু নিরক্ষর মানুষদেরও কিন্তু গল্প থাকে। আমরা কলমটা তাদের কাছে পৌঁছাতে চেয়েছি। নিরক্ষর মানুষের হাতে কলমটা দিতে পারলে এমন অনেক গল্প সামনে আসবে যা আমাদের সাধারণ লেখায় আসছে না।
জয়নাল উদ্দিনের একটি রাইফেল ও তিনজন যুবক, মাইনুদ্দিন মাঝির মধ্য রাতের আগন্তুক, আশুতোষ চক্রবর্তীর ‘মজু চোরের’ মতো ১২ জন নিরক্ষর মানুষের গল্প ঠাঁই পেয়েছে এই বইয়ে। গল্প শুনে তা লিখেছেন বিদ্যানন্দের স্বেচ্ছাসেবকরা।
ফাউন্ডেশনের হেড অব কমিউনিকেশন সালমান খান ইয়াসিন বলেন, আমরা মানুষের গল্পগুলো শুনেছি। তাদের যন্ত্রণার কথাগুলো শুনেছি। তাদের যে সাহসীকতার গল্প সেইগুলো শুনেছি। এবং সেই গল্পগুলো আমরা মলাটবন্দী করেছি।
বই প্রকাশের মাধ্যমে নিরক্ষর ব্যক্তিদের দর্শন, গল্প বলার পাশাপাশি তাদেরকে লেখকের সম্মান দিয়েছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। পাড়া প্রতিবেশিদের উপহাস, নানা কটু কথাকে উপেক্ষা করে বইয়ের গল্প দেয়া ১২জন মানুষকে সাহসী তকমা দিয়েছে তারা। আর তাই তো বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের দিন লেখকদের মাঝে ছিলো বাড়তি উচ্ছ্বাস।
নিরক্ষরের গল্পগুচ্ছ বইয়ের একজন লেখক বলেন, আমি অশিক্ষিত মানুষ, মাঠে ঘাটে কাজকর্ম করি। আমি খুব খুশি, খুব আনন্দিত।
বইটির আরেকজন লেখক বলেন, আমাদের এখানে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে আসছেন উনারা। আমি কোনোদিন কল্পনাই করি নাই যে আমার লেখা দিয়ে বই হবে। মানুষ সেগুলা কিনবে।
বই থেকে প্রাপ্ত রয়েলিটির ভাগ দেওয়ার কথা জানিয়েছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের হেড অব কমিউনিকেশন সালমান খান ইয়াসিন এখন টিভিকে বলেন, শত বাধা, উপহাসের মাঝেও কিন্তু এই মানুষগুলো বইয়ের জন্য আমাদেরকে গল্প দিয়েছে। এবং তারা এর ফল যখন চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছে তখন তাদের আনন্দের সীমা থাকছে না। এবং আমরা এই বইয়ের লভ্যাংশ ইতোমধ্যেই আমরা লেখকদের হাতে পৌঁছে দিচ্ছি।
বিদ্যানন্দ চমক দেখিয়েছে বইয়ের প্রচ্ছদেও। একজন রিক্সাচালকের আঙুলের ছাপ ও একজন দারোয়ানের লেখা শব্দ দিয়েই তারা সাজিয়েছে বইয়ের প্রচ্ছদ।
পাঠকদের মাঝেও নিরক্ষর গল্পগুচ্ছ বই নিয়ে আছে বেশ কৌতুহল। অনেকেই স্টলে দাঁড়িয়ে পড়ছেন বই। কিনছেনও কেউ কেউ। বই নিয়ে ছবি তুলতেও দেখা যায় অনেক পাঠককে। এরই মধ্যে প্রথম মুদ্রণের সব বই বিক্রি হয়ে গেছে। সাড়া জাগানো এই বইয়ের দ্বিতীয় মুদ্রণ এসেছে প্রাণের মেলায়।
আরএন