
দেশে আশঙ্কাজনক হারে কমছে মহিষের উৎপাদন
হুমায়ুন কবির, সাভার, এখন টিভি
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৬:০১
একটা সময় গোপনে মহিষের মাংসকে গরু বলে বিক্রি করা হতো। সেই সময় এখন বদলেছে। কম চর্বি থাকায় বাড়ছে মহিষের মাংসের কদর সেইসাথে চাহিদাও। অথচ দেশে আশঙ্কাজনক হারে কমছে মহিষের উৎপাদন। এতে চাহিদার চেয়ে মিলছে না যোগান। অন্যদিকে, মাংসের মতো দুধ উৎপাদনেও মহিষের জুড়ি নেই।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজনন ও শিশুস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. আমজাদ বলেন, আমরা যদি সুষম খাবারের কথা চিন্তা করি তাহলে এক নাম্বারে আসবে দুধ এবং সেটা যদি আমরা চিন্তা করি তাহলে মহিষের দুধ তুলনামূলকভাবে আমরা অপরিহার্য হিসেবে বিবেচনা করতে পারি। কারণ মহিষের দুধের ঘনত্ব যেকোনো দুধের চেয়ে বেশি এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা কম হওয়াতে এটা সাস্থ্য উপকারী।
পাশের দেশ ভারতে মহিষকে বলা হয় দুধ উৎপাদনের মেশিন। যেখানে দুধ উৎপাদনে মহিষের অবদান ৫৩ ভাগ। পাকিস্তানে ৬৭ ও নেপালে ৭১ ভাগ। অথচ ভৌগোলিক অবস্থান ও অনুকূল জলবায়ুর পরও বাংলাদেশে দুধ উৎপাদনে মহিষের অবদান মাত্র ৪ ভাগ। এ অবস্থায় মহিষের উৎপাদন বাড়াতে কাজ করছে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষকরা।
বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহিষ গবেষণা ও উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালক গৌতম কুমার দেব বলেন,
যদি আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের দিকে তাকাই সেখানে দেখা যাবে ৬০ ভাগ দুধ উৎপাদন হয় মহিষ থেকে, মাংসেরও একটা সিংহভাগ আসে। সেক্ষেত্রে আমরা চাচ্ছি সে আমাদের জাতীয় দুধ এবং মাংস উৎপাদনে মহিষের অবদান কমপক্ষে দ্বিগুণ করতে।
মাংসের চাহিদা মেটাতে মহিষের সংকটের কারণ নয়। বরং যথাযথ পরিকল্পনায় রক্ষণাবেক্ষণ, জাত উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে উদ্যোগহীনতা এবং চারণভূমি কমে যাওয়াকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ অবস্থায় বেশি দুধ ও মাংস উৎপাদনে সক্ষম নীলি-রাভি এবং মুররা জাতের বিদেশি মহিষ আমদানি করে প্রজনন ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট।
বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বেশি দুধ উৎপাদনে এবং মাংস উৎপাদনের সক্ষম নীলি-রাভি এবং মুররা জাতের মহিষ আমদানি করে খামারি পর্যায় সারাদেশে ব্যাপক আকারে সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, ১৯৮০ সালে মহিষের সংখ্যা ছিলো ৪২ লাখ। ২০১০ সালে সেই সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ১৪ লাখ ৮৩ হাজার। এরপর ২০১৫ সালে ৮ লাখ ৩০ হাজার, ২০১৮ সালে ৫ লাখ ৯৭ হাজার, ২০১৯ সালে ৩ লাখ ৭৮ হাজার। এখন মহিষের সংখ্যা নেমেছে ৩ লাখেরও নিচে।
এফএইচ