
কুমিল্লার বিষমুক্ত সবজি রপ্তানি হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে
মাসুদ আলম , এখন টিভি
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৬:০৮
নিরাপদ কৃষির সম্প্রসারণে কুমিল্লার ১৭ উপজেলার ১ হাজার বিঘা জমিতে চাষ হচ্ছে বিষমুক্ত সবজি। ক্ষতিকর রাসায়নিক সার ও বালাইনাশক ছাড়াই এই আবাদ করছেন চাষিরা। এতে কমছে কীটনাশকের বাড়তি ব্যয়। নিরাপদ সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যেও।
সবজি চাষে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও নানা ধরনের কীটনাশক ব্যবহারে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। দূষিত হচ্ছে মাটি, পানি ও বায়ু। নষ্ট হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। এছাড়া রাসায়নিক সার কিনতে গিয়ে বাড়ছে ফসলের উৎপাদন ব্যয়।
এসব ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আইপিএম প্রকল্পের আওতায় কুমিল্লার প্রায় এক হাজার বিঘা জমিতে উৎপাদন হচ্ছে বিষমুক্ত সবজি। ক্ষতিকর পোকা ধ্বংসে নানা রঙের আঁঠালো ফাঁদ এবং জৈব সার ব্যবহার করছেন চাষিরা।
বুড়িচংয়ের নয় কামতা মাঠে ৮০ শতাংশ জমিতে ফুল লাউ, টমেটো ও চিচিঙ্গা চাষ করছেন কৃষক ইকবাল হোসেন ভুঁইয়া। তার মতো ২১০ বিঘায় অর্ধশতাধিক কৃষক বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি উৎপাদন করছেন সম্পূর্ণ জৈবসার ও জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করে। এতে প্রত্যেক কৃষকের বিঘা প্রতি সাশ্রয় হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা।
কৃষক ইকবাল হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘৮০ শতক জমিতে এবছর আমি সবজি আবাদ করেছি। প্রতিবার যেখানে আমাদের ২০/২৫ হাজার টাকার সার ওষুধে খরচ হতো সেটা এবছর আর লাগছে না।’
কুমিল্লার বুড়িচংয়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. ফারুক আহম্মেদ ভুঁইয়া বলেন, ‘আমরা যদি ফসলে বিষ দেই তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অনেকেই বিকলঙ্গ ও নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে জন্ম নেয়। এখন যে প্রযুক্তি এসেছে সেগুলো ব্যবহার করলে ফসল উৎপাদন খরচ কম ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মও ভালো থাকবে।’
অন্যদিকে বরুড়ার মুগুজিতে ৩০০ বিঘায় চাষ হচ্ছে বিষমুক্ত সবজি। এরমধ্যে ২৬১ বিঘাতেই রয়েছে শসা। ৫শ কৃষক ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ হয়ে কাজ করছেন। পোকা থেকে ফসলকে সুরক্ষা দিতে শেড নেট ব্যবহারে বেড়েছে ফসলের গুনগতমান। চলতি মওসুমে ৭ কোটি টাকার শসা বিক্রির আশা করা হচ্ছে।
কুমিল্লার বরুড়া উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, ‘বিষমুক্ত ফসল উৎপাদনে কৃষকদের হাতে কলমে শেখানো হচ্ছে।’
স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিষমুক্ত এসব সবজি মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা প্রচারণা চালাচ্ছি যাতে এখানের একটা নির্দিষ্ট স্থানে ফসল এনে বিক্রি করতে পারে।’
ফলন ভালো হলেও কীটনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব রয়ে যায় মানবদেহে। তাই স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে বিষমুক্ত সবজি চাষের পরামর্শ চিকিৎসক ও কৃষিবিদদের। বিষমুক্ত সবজি চাষে একদিকে কীটনাশকের বাড়তি ব্যয় কমবে তেমনি জৈবসারের ব্যবহারে অক্ষুন্ন থাকবে ফসলের গুনগত মান।
আকন