Ekhon TV :: এখন টিভি

বাংলাদেশে মসলা জাতীয় ফসলের ঘাটতি অনেক। এজন্য চাহিদা মেটাতে বছরে দেশের আমদানি খরচ প্রায় ৩৭ কোটি ডলার। মসলা জাতীয় ফসল গোল মরিচ তার মধ্যে একটি। অথচ দেশেই এটি উৎপাদনের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু সঠিক পরিকল্পনা আর কৃষকদের সহযোগিতা দিলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে ডলার বাঁচানো সম্ভব- জানান কৃষি গবেষকরা।

গোল মরিচ বিরিয়ানি, পোলাও, গোশতসহ অনেক রান্নায় দরকারি মশলার নাম। নানান পুষ্টিগুণেও সমৃদ্ধ এটি। তবে, বাংলাদেশে এ মশলার উৎপাদন নেই বললেই চলে। বাজারে যেসব গোলমরিচ পাওয়া যায় তা পুরোটাই বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করতে হয়।

১৯৮৭ সালে সর্বপ্রথম বারি গোলমরিচ জাতের উৎপাদন হয় সিলেটর জৈন্তাপুর উপজেলাতে, যাকে ডাকা হতো জৈন্তা গোলমরিচ নামে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সেগুলোও বিলীন হয়েছে বহু আগেই। এখন বাজারে যেসব গোলমরিচ পাওয়া যায় তা পুরোটাই আমদানি করা। চাহিদার পাশাপাশি বাজারে দামও কম নয় এর।

তবে, এবার দেশেই গোলমরিচের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। বছর দুই সময় ধরে সিলেটর বিভিন্ন এলাকায় গবেষণা করে এর সফলতাও পেয়েছেন তারা।

কে ও লন্ধ, সিলেটের জৈন্তাপুরের মোকাম পুঞ্জির একজন বাসিন্দা। কোন কৃষি জ্ঞান না রেখেই এতদিন গোলমরিচ চাষ করতেন তিনি। তার উৎপাদিত গোলমরিচ পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে বাকি পাড়াপ্রতিবেশিদের বিতরণ করে দিতেন। কিন্তু তিনি জানতেন না বাজারে এর কদর কতটুকু। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তত্বাবধানে গত ২ বছরে তিনি এখন বানিজ্যিক ভাবে গোলমরিচের চাষ করছেন ।

কেও লন্ধের মতো এখন অনেকেই আগ্রহী গোলমরিচ চাষে। খাসিয়া পুঞ্জির অনেকেই ভাল ফলন পেয়ে নিজেদের চাহিদা মেটাচ্ছেন পাশাপাশি বানিজ্যিক ভাবে উৎপাদনের আগ্রহও জন্মেছে তাদের।

গবেষকরা বলছেন, সিলেটের ভূমি মসলা চাষের জন্য উপোযোগী। শুধু মাত্র পাহাড় বা চা বাগান এলাকায় যে সব জমি ও বৃক্ষ রয়েছে তাতে যদি পরিকল্পনা মাফিক উৎপাদন বাড়ানো যায় তাহলে শত শত মেট্টিক টন গোলমরিচ উৎপাদন সম্ভব খুব সহজেই। সিকৃবি অধ্যাপক ড. মোঃ মাসুদুর রহমান জানান বসত ভিটার খালি জায়গায় চাষাবাদ করা যেতে পারে। তাছড়া এর বাইরেও বাংলাদেশে প্রায় ১.৮ মিলিয়ন হেক্টর বসতভুমি রয়েছে। প্রত্যেক বাসাবাড়িতে যদি এক দুইটি করেও গোল মরিচের গাছ লাগাতে মানুষকে উদ্বোদ্ধ করা যায় তা হলে দেশে অন্তত আমদানি নির্ভরতা কমবে এ মশলাটির। তাতেই বাঁচবে দেশের ১০ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা।সিকৃবি অধ্যাপক ড. সামিউল হাসান তালুকদার বলেন যেহেতু সিলেটে গোলমরিচ ভালো হচ্ছে এ দিকে নজর দিলে গোলমরিচ আমদানি করতে হবে না।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে বাংলাদেশ এখনো মসলা জাতীয় ফসল উৎপাদনে যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। তবে সিলেট অঞ্চলে গোলমরিচ উৎপাদনের যে সম্ভাবনা রয়েছে তা কাজে লাগতে নানান পরিকল্পনা নিয়েছেন তারা ।

বাংলাদেশের উত্তর র্পুবাঞ্চলের পাহাড়ি অঞ্চলগুলো আবহাওয়া ও মাটির কারনে গোলমরিচ চাষের জন্য বেশ উপযোগী । কৃষি গবেষকরা বলছেন যদি সঠিক পরিকল্পনা আর তদারকি করা যায় তাহলে এই অঞ্চল থেকে প্রতি বছরে অন্তত ১৫০ মেট্টিকটন গোলমরিচ উৎপাদন করা সম্ভব। এর ফলে যেমন একদিকে কমবে আমদানি নির্ভরতা তেমনি বাঁচবে দেশের বৈদেশিক মুদ্রাও।

এমএম

Advertisement
Advertisement
Advertisement

এই সপ্তাহের সর্বাধিক পঠিত গুরুত্বপূর্ণ কৃষি খবর